দুবাই এয়ার শো’তে এয়ারবাসের বাজিমাত
নতুন কোন মডেলের উড়োজাহাজের ঘোষনাও আসেনি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও সফল এরোস্পেস ইভেন্ট ‘দুবাই এয়ার শো-২০১৯’ তে ; যেমনটা এসেছিল বছরের শুরুতে ফ্রান্স এয়ার শো’তে। এরপরেও বিশ্বসেরা উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারকরা বেশ কিছু অর্ডার বাগিয়ে নিতে সমর্থ হয় আকাশশিল্পর এই মেগা ইভেন্টে।
আগেই বলা হয়েছে রেকর্ড পরিমান ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি হলেও ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বিগত ২০১৭ আসরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম হয়েছে। এবার ব্যবসা হয়েছে ৫৪.৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালে দুবাই এয়ারশোতে ১১৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্ডার পাওয়া গিয়েছিল।
তবে এবারের শোতে ইউরোপীয় উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারক ‘এয়ারবাস’ সবাইকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে প্রতিদ্বন্দী আমেরিকান উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘বোয়িং’ থেকে আড়াই গুন বেশি অর্ডার পেয়ে বাজিমাত করে এয়ারবাস।
এটা সবার জানা, আকাশযান নির্মাণশিল্পের বাণিজ্য যুদ্ধের লড়াইয়ে দু-প্রতিপক্ষ এয়ারবাস এবং বোয়িং । ছোট ছোট উড়োজাহাজ থেকে শুরু করে বড় বড় জাম্বো জেট বা যুদ্ধবিমান- সব জায়গাতেই এ দু-প্রতিপক্ষের লড়াইটা দীর্ঘদিনের। কখনও এয়ারবাস এগিয়ে যায়, কখনও বোয়িং।
এই মেগা ইভেন্টের ২০১৭ সালের আসরের মত এবারেরও ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল এয়ারবাসের। এয়ারবাস ২২০ টি উড়োজাহাজ সরবরাহের আদেশ পায়, সেখানে প্রতিদ্বন্দী বোয়িং মাত্র ৯৭ টি উড়োজাহাজ সরবরাহের আদেশ পেয়েছে।
২০১৭ সালের আসরের এয়ারবাস থেকে ৪৩০টি উড়োজাহাজের জন্য ভারতের ইন্ডিগোর ৪৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর বোয়িংয়ের সাথে ফ্লাই দুবাইয়ের ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ চুক্তি করেছিল ।
‘দুবাই এয়ার শো-২০১৯’ শো’তে বিভিন্ন মডেলের মোট ২২০ টি উড়োজাহাজ সরবরাহের আদেশ পাওয়ার কথা জানিয়েছে এয়ারবাস। শো’র প্রথম দিন কোন ঘোষনা না দিলেও দ্বিতীয় দিনে এসে দুটি বড় চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রতিষ্ঠানটি।
ওইদিন বিশ্বের সবচাইতে বড় এয়ারলাইনস্ এমিরেটস্ ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ৫০ টি সুপরিসর উড়োজাহাজ এ ৩৫০-৯০০ (A350-900) সরবরাহের আদেশ দেয় এয়ারবাসকে।
একইদিনে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার প্রথম এবং বৃহত্তম স্বল্প খরচের (লো-কস্ট) বিমানসংস্থা এয়ার এরাবিয়া এ ৩২০ পরিবারের ১২০ টি নতুন উড়োজাহাজের জন্য এয়ারবাসকে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্ডারও দিয়েছে। যা এই অঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম সিঙ্গল-আইল (সরু বডি) উড়োজাহাজের অর্ডার।
পরবর্তীতে, সৌদি আরবের স্বল্প-খরচের এয়ারলাইনস্ ফ্লাইনেস ১০ টি এবং আইরিশ-আমেরিকান এভিয়েশন ফাইনান্স ও লিজিং কোম্পানি জিইসেকেএস ২০ টি এ ৩২১ এক্সএল আর (A321XLR) সরবরাহের আদেশ দেয় এয়ারবাসকে।
এয়ার শোর শেষদিনে আফ্রিকান কেরিয়ার এয়ার সেনেগাল ৮ টি সরু-বডির A220-300 কেনার জন্য এয়ারবাসের সাথে সমঝতা স্বারক স্বাক্ষর করে। দুবাই এয়ার শো শেষ হওযার পরপরই ব্রিটেনের স্বল্প-খরচের এয়ারলাইনস্ ইজিজেট ১২ টি এ৩২০ নিও (A320 neo) সরবরাহের আদেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছে এয়ারবাস।
‘ম্যাক্স’ বিপর্যয়ের কারণই যে বোয়িংয়ের পিছিয়ে পড়াটা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ৭৩৭ ম্যাক্স (737 Max) পরিবারের দুটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ৩৫০ যাত্রী ও ক্রুর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর বিশ্বব্যাপি এই পরিবারের সব উড়োজাহাজের উড়ান স্থগিত রয়েছে অনেকদিন ধরে। তবে দুবাই এয়ার শোতে তারা ক্রেতাদের আস্থা কিছুটা হলেও ফেরাতে পেরেছে।
এই বছরের মার্চে ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজগুলির উড়ান স্থগিত হওয়ার পর এই প্রথম তুরষ্কের এয়ারলাইনস সানএক্সপ্রেস ১০ টি ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ (737 Max-8) সরবরাহের আদেশ দেয়। পরে এয়ার আস্তানা আরো ৩০ টি ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ কেনার প্রস্তাব দেয়। এসব বিমান তারা তাদের নতুন স্বল্পখরচের কেরিয়ার ফ্লাই এয়ারিস্তানে ব্যাবহারের পরিকল্পনা করছে।
শোতে ৭৩৭ ম্যাক্স পরিবারের আরো ২০ টি উড়োজাহাজ সরবাহের আদেশ পাওয়ার কথা জানালেও কোন এয়ারলাইনস্ এ আদেশটি দিয়েছে তা জানায় নি বোয়িং কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও, ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সরবরাহের জন্য চারটি ভিন্ন আদেশ পেয়েছে বোয়িং।
শোর প্রথম দিনেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার কেনার ঘোষণা দিয়ে ৫৮৫ মিলিয়ন ডলারের একমাত্র চুক্তিটি করেছিল। দুদিন পর ইজিপ্ট এয়ার ও ঘানা সরকার আরো দু’টি করে মোট চারটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার কেনার জন্য চুক্তি করে।
তবে সবাইকে চমকে দিয়ে এমিরেটস্ এয়ারলাইনস্ ৮.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ৩০ বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার সরবরাহের আদেশ দেয়। যদিও এয়ারলাইনস্ টি একই সাথে পুর্বের ২৪ টি ৭৭৭-এক্স সরবরাহের আদেশ বাতিল করে।
অন্যদিকে, কানাডিয়ান উড়োজাহাজ নির্মাণ সংস্থা ডি হেভিল্যান্ড এয়ারক্রাফ্ট ফ্রান্স এয়ার শোতে মাত্র ৬ টি ড্যাশ-৮ বিমানের আদেশ পেলেও দুবাই এয়ার শোতে ৫টি কেরিয়ারের কাছ থেকে ৩৭ টি ড্যাশ-৮-৮০০ টর্বোড়প্রপ বিমান সরবরাহের আদেশ আদায় করতে সক্ষম হয়।
তার মধ্যে নাইজেরিয়ার এলিন গ্রুপ তিনটি, এসিআইএ এ্যারো কেপিটাল তিনটি, দুবাইয়ের পালমা হোল্ডিংস ২০ টি, রাশিয়ান আঞ্চলিক কেরিয়ার অরোরা ৫ টি এবং ঘানা সরকার ৬ টি ড্যাশ-৮-৮০০ এর সরবরাহ আদেশ দিয়েছে।
তবে, ডি হেভিল্যান্ড এয়ারক্রাফ্টের নিকটতম প্রতিদ্বন্দি এটিআর ও জাপানের মিতশুবিসি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ দুবাই এয়ার শোতে কোন সরবরাহ আদেশ পাওয়ার ঘোষনা দিতে পারে নি।
আগের খবর
দুবাই এয়ার শোতে ৫৪.৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রয়, প্রথম ক্রেতা বাংলাদেশ
অবশেষে ৫৮৫ মিলিয়ন ডলারে দুটি নতুন ড্রিমলাইনার কিনল বিমান বাংলাদেশ
জমকালো আয়োজনে পর্দা উঠল দুবাই এয়ার শো’র
রোববার শুরু হচ্ছে বিশ্বসেরা ‘দুবাই এয়ার শো’