চীন থেকে ঢাকায় র্পৌছেছেন ৩১৪ বাংলাদেশি
চীন থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত নিয়ে আসা বিমানের ফ্লাইটটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। বাংলাদেশ সময় শনিবার বেলা ১২ টায় ফ্লাইটটি ৩১৪ বাংলাদেশি নিয়ে নিরাপদে অবতরণ করে।
ফেরত আষা বাংলাদেশিদের মধ্যে ৩০১ জন প্রাপ্তবয়স্ক, ১২ জন শিশু এবং তিন জন নবজাতক রয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও কঠোর নিরাপত্তায় তাদের সরাসরি আশকোনা হজ ক্যাম্পেসিয়ে যাওয়া হয়েছে।
শনিবার চীনের স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় উহানের থেকে বাংলাদেশিদের নিয়ে তিয়ানহে বিমানবন্দর ছাড়ে বিশেষ এই উদ্ধারকারি বিমান। এর আগে দুই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা থাকায় তাদের নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ফেরত পাঠায় উহান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের শরীরে করোনা ভাইরাসের আলামত মিলেছে কিনা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, ফেরত আসা ৩১৬ জনকে রাজধানির আশকোনা হাজি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তাদের রাখা হবে ১৪ দিনের নিবিঢ় পর্যবেক্ষণে। এসময় তাদের সাথে স্বজনদেরও দেখা করতে দেয়া হবেনা বলেও জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সেখানে তাঁদের ‘কোয়ারেন্টাইন’ করে রাখা হবে, কারও সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। ‘কোয়ারেন্টাইন’ অবস্থায় সেনাবাহিনী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল টিম তাঁদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা, চিকিৎসাসহ সব ধরনের খরচ বহন করবে বাংলাদেশ সরকার। ক্যাম্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা দেবে।
সরকারি কর্মকর্তারা অনুরোধ করেছেন, চীন ফেরত নাগরিকদের আত্মীয়স্বজন যেন ক্যাম্পে ভিড় না করেন। ক্যাম্পে অবস্থানরত নাগরিকদের পরিস্থিতি নিয়মিত জানানোর আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকবে। প্রয়োজনে তাঁরা এসব নম্বরে ফোন করে খবর জানতে পারবেন: ০১৯২৭৭১১৭৮৪; ০১৯২৭৭১১৭৮৫; ০১৯৩৭০০০০১১; ০১৯৩৭১১০০১১।
শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ ফ্লাইটটি পরিচালনা করছেন ক্যাপ্টেন মাহতাব, ক্যাপ্টেন ইলিয়াস ও ক্যাপ্টেন মেহেদি। নিয়মিত ফ্লাইট ক্রু ছাড়াও বিমানে ছিলেন একটি বিশেষ মেডিকেল টিম। এই টিমে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিন জন চিকিৎসক। তারা হলেন মেজর ডা. মিনহাজ, মেজর ডা. ফাতেহা এবং ডা. মাহবুব।
উহান থেকে ফিরতে চাওয়া বাংলাদেশিদের নিয়ে খোলা উইচ্যাট গ্রুপ ( Group Name: I am in Wuhan now) থেকে জানা গেছে, চীনের স্থানীয় সময় রাত ১২ বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বিমানবন্দর ব্যবহারের অনুমতি, যাত্রীদের তথ্য যাচাই, ইমিগ্রেসনসহ নানা আনুষ্ঠানিকতায় ১২ ঘন্টা বিলম্ব হয়। এতে দীর্ঘ প্রতিক্ষার দূর্ভোগ পোহাতে হয় বাংলাদেশিদের। তবে শেষ পর্যন্ত কোন বড় জটলিতা ছাড়া সবাইকে নিয়ে উহান ছাড়ে বিমান বাংলাদেশের বিশেষ উদ্ধারকারি ফ্লাইট বিজি ৭০০২ ।
উইচ্যাটে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মাহমুদ জানান, “দেশে ফিরে যাওয়ার আগে সারা দিন অনেক ধকলের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। একদিকে বিমানবন্দর ব্যবহারের অনুমতি মিলতে যেমন দেরি হয়েছে তেমনি বাংলাদেশ থেকে বিমান আসা এবং চেকইনে অনেক সময় লেগেছে। প্রায় ১২ ঘন্টা বিমানবন্দরে নানারকম প্রক্রিয়া শেষ করে আমরা প্রিয় স্বদেশের ফিরে এসেছি। এনিয়ে কষ্টের মধ্যেও একদিকে যেমন আনন্দ হচ্ছে তেমনি উৎকন্ঠায় আছি আগামী ১৪ দিন ধরে পর্যবেক্ষণে থাকার বিষয়টি নিয়ে”।
সারাদিনের নানা অনিশ্চয়তা আর ধকলের পরেও উড্ডয়নের আগে ফ্লাইটটিতে থাকা বাংলাদেশিদের অনেকে উচ্ছাস আর সস্তি প্রকাশ করে উইচ্যাট গ্রুপে পোষ্ট দেয়। এদের মধ্যে কথা হয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সরওয়ারের সাথে। তিনি বলেন, “দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে দেশে ফিরে এসেছি।
এখনই প্রিয়জনদের কাছে ফিরে না যেতে পারলেও এতদিনের দীর্ঘ আতঙ্ক আর চাপ থেকে মুক্তি পেয়ে সত্যিই অনেক ভাল লাগছে। সরকার আমাদের জন্য আশকোনা হাজী ক্যাম্পে সব ধরনের প্রস্ততি সঠিকভাবে সম্পাদন করেছে এমনটি আশা করছি”।
উইচ্যাট গ্রুপে অন্যান্য সদস্যদের পোস্ট করা কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ এই ফ্লাইটটিতে কেবিন ক্রু ও পাইলটদের সকলেই মাস্ক পরিহিত।
এদিকে উড্ডয়নের আগে ফ্লাইটের সামগ্রিক বিষয় ও প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তাদের আন্তরিক সহায়তা আর তদারকিকে সাধুবাদ জানিয়ে গ্রুপে পোস্ট দিতে দেখা গেছে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিকে।
আগের খবর
চীন থেকে বিশেষ ফ্লাইটে দেশের পথে বাংলাদেশিরা
উহান বিমানবন্দরে দেশে ফেরার অপেক্ষায় বাংলাদেশিরা
চীনের উহানে অবরুদ্ধ বাংলাদেশিরা অবশেষে দেশে ফিরছে
চীনে করোনাভাইরাসের মুখোমুখি ৬ হাজার ডাক্তার-নার্স
আকাশপথে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে চীন, বিশ্বজুড়ে ফ্লাইট বন্ধের হিড়িক