চীনের উহানে অবরুদ্ধ বাংলাদেশিরা অবশেষে দেশে ফিরছে

দু সপ্তাহ পরে নয়, আজ শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) মধ্যরাতেই চীনের উহানসহ হুবেই প্রদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অবরুদ্ধ বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট প্রথম দফায় ফিরছেন ৩৪১ জন বাংলাদেশি।

বৃহস্পতিবার রাতে এ তথ্য দিয়ে পরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় জানায়, বাংলাদেশিদেকে ফিরিয়ে আনতে শুক্রবার দুপুরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইট চীনের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। বাংলাদেশি নিয়ে মধ্যরাতেই ফ্লাইটটি ঢাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানা যায়, দেশে ফিরিয়ে আনার পর তাদের পর্যবেক্ষণে রাখতে রাজধানীর আশকোনায় হজক্যাম্প এবং উত্তরার কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। সেখানে তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

Travelion – Mobile

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে উহানসহ কয়েকটি শহর থেকে যারা ফিরে আসার ব্যাপারে আবেদন করেছেন তাদের ৩৭০ জনকে দেশে নিয়ে আসা হবে। প্রয়োজন হলে আরও ফ্লাইট পাঠানো হবে চীনে।

এরই মধ্যে বেইজিংয়ের বাংলাদেশে দূতাবাস উহানের বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যাগে কথা জানিয়ে প্রস্তুতির জন্য নানা নিদের্শনা দিয়েছে । খবর পেয়ে আগ্রহী বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে দ্রুত প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

উহানের সেন্ট্রাল চায়না বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক আবদুল্লাহ আল হাফিজ জানান, “আমরা যারা চীনে আটকে গিয়েছিলাম তারা দেশে ফিরে আসার জন্যে উইচ্যাটে একটি গ্রুপ খুলেছিলাম। সেখানে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে আমাদের নিয়মিত যোগযোগ হচ্ছিল। এই গ্রুপের মাধ্যমেই আমরা আমাদের দেশে ফিরে যাওয়ার আবেদন তুলে ধরি। প্রথমদিকে কর্মকর্তারা ১৪ দিনের মাথায় আমাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বৃহস্পতিবার রাতেই তারা আমাদের একদিন পরেই দেশে ফিরিয়ে আনার কথাটা নিশ্চিত করেন।”

 উইচ্যাট গ্রুপে  ফেরার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা
উইচ্যাট গ্রুপে ফেরার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা

দেশে ফিরে আসতে বাংলাদেশিদের উইচ্যাট গ্রুপটিতে শুক্রবার রাতে বিশেষ বিমানের ঘোষণা আসার পরপরই দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা আসতে থাকে। এসময় তারা এটিকে রেসকিউ ফ্লাইট উল্লেখ করে সবাইকে লাগেজের আকার ছোট রাখার নির্দেশ দিয়ে বার্তা প্রদান করেন। এসময় তারা নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জমায়েতের স্থান, বিমানবন্দরে পৌছানোর সময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের তালিকাও প্রকাশ করে গ্রুপটিতে।

দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার সময় এগিয়ে নিয়ে আসায় সস্তি দেখা দিয়েছে সেখানে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের মাঝে। উহানে অবস্থান করা আরেক পিএইচডি গবেষক শামীমা সুলতানা বলেন, “দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে, আমরা দেশে ফিরে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে দীর্ঘদিনের বন্দি আর আতঙ্কের জীবন থেকে মুক্তি পেলাম”। দুই মেয়ে নিয়ে এতদিন যে উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন কেটেছে তা থেকে আমাদের উদ্ধার করায় বাংলাদেশ দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

হুবেই প্রদেশে জিংমিংয়ে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী টুম্পা প্রামাণিক। তিনি জানান বাংলাদেশিদের এত অল্প সময়ের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করাটা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। তবে দেশে ফেরার সুযোগ থাকলেও আপাতত চীনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানালেন তিনি।

ডর্মিটরির প্রবেশপথে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা
ডর্মিটরির প্রবেশপথে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা

তিনি বলেন, “করোনার জন্য চিকিৎসা বাংলাদেশ থেকে চীনেই ভালো হবে। হুবেই প্রদেশে যে শহরে আমি আছি সে শহরে উহানের মত ঝুঁকি নেই। সব ধরনের সতর্কতা মেনেই এখানে চলাচল করছেন জানিয়ে টুম্পা বলেন, “দেশে গিয়ে ১৪ দিনের জন্য আইসোলেটেড থাকাটা একটু কষ্টকর ব্যাপার। সবমিলিয়ে আমি মনে করি এখানে অবস্থান কারাটাই আমার জন্য এখন শ্রেয় কারণ আমি বিশ্বাস করি পরিস্থিতি খুব শিগগিরই উন্নতির দিকে যাবে”।

এদিকে এমন দ্রুততম সময়ে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ পড়েছেন দোটানায়। এদের মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আশংকা করে জানিয়েছেন দেশে ফিরে গেলে তাদের মাধ্যমে স্বজনদের মধ্যেও ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই তারা আপাতত চীনে অবস্থানকেই শ্রেয় মনে করছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!