চীনে করোনাভাইরাসের মুখোমুখি ৬ হাজার ডাক্তার-নার্স

প্রচ্ছদ ছবিতে ট্রেনের ভেতরে থাকা যে নার্সটিকে দেখতে পাচ্ছেন, তার নাম হু লিংলিং। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সেবার জন্য সাংহাইয়ের সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে আরও অনেক নার্সের সঙ্গে লিংলিংও যাচ্ছেন উহান শহরে। ট্রেনে উঠে কাঁচের জানালার এপাশে থাক স্বামীকে বিদায় জানাচ্ছেন তিনি। কাঁচের দূর্গ ভেদ করে যেন শেষবারের মতো প্রিয় মানুষটির স্পর্শ পাওয়ার চেষ্টা। বেঁচে থাকলে দেখা হবে- বিষয়টা অনেকটা এমন! করোনাভাইরাস যে তাকেও ছাড়বে না!

চীনের ৬ সহস্রাধিক মেডিক্যাল কর্মী দের কেউ কি কখনও ভেবেছির যে চাকরি বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিবে? জেনেশুনে নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে? চীনের এই ডাক্তার-নার্সরা সেটাই করেছে, চাকরি বাঁচানো নয় মানবতা’র জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সেবার জন্য।

ক্রমশ ভয়ানক হয়ে উঠছে চীনের করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি ভাইরাসটির। অন্যদিকে প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এরই মধ্যে চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে শুধু রাজধানী উহানসহ হুবেই প্রদেশেই ২০৪ জন মারা গেছেন।

Travelion – Mobile

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৬৯২ জন।। এই ভয়াবহ দুর্যোগ ঠেকানোর জন্য সারাদেশ থেকে ৬ হাজার মেডিক্যাল কর্মীকে উহান শহরে পাঠিয়েছে চীন সরকার।

তাদের মধ্যে নার্সদের “সাদা পরী” আর ডাক্তারদের “বীর” বলে অভিহিত করেছে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। নার্স লিংলিং তেমনই একজন সাদা পরী যিনি মৃত্যুকূপ উহানে গেছেন মানবতা রক্ষায়।

করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে! শ্বাস-প্রশ্বাস, খাবার এমনকী হ্যান্ডশেক করার মাধ্যমেও দ্রুত ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস। এই ভাইরাস ঠেকাতে এখনও কোনো টিকা বা চিকিৎসা আবিস্কৃত হয়নি। প্রচলিত ব্যবস্থাতেই চলছে রোগীদের চিকিৎসা। রোগীদের সেবায় মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে কাজ করে যাচ্ছেন ডাক্তার-নার্সরা।

এই ৬ হাজার ডাক্তার-নার্স থেকে সবাই করোনাভাইরাসের হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পারবেন কিনা, কেউ জানে না!

করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় ব্যাপক তৎপর চীন। প্রায় চারশ কোটি ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এজন্য। বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। চীনে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন শিল্পপতি জ্যাক মা এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস। চীনের এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে প্রতিবেশী দেশগুলোও। চীন-রাশিয়া সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। ইতালির প্রধানমন্ত্রী চীন-ইতালির মধ্যে সমস্ত ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা করেছেন। বিশ্বের নামী-দামি প্রায় সকল বিমানসংস্থা তাদের চীনগামী ফ্লাইট পরিষেবা সাময়িক বন্ধ রেখেছে।

বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন বিশেষ উড়োজাহাজ পাঠিয়ে চীন থেকে তাদের সমস্ত নাগরিকদের দেশে ফেরানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিশেষ বিশেষ উড়োজাহাজ পাঠাচ্ছে নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুরও। জাপান এরই মধ্যে দু’টি উড়োজাহাজে উ করে তাদের দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে এনেছে। নাগরিকদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করেছে ভারতও।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!