ওমানে জুনের আগে নিয়মিত ফ্লাইট চলাচল শুরুর সম্ভাবনা নেই

ওমানে করোভাইরাস প্রতিরোধে বন্ধ থাকা ফ্লাইট চলাচল আগামী জুনের আগে যে খুলছে না তা একপ্রকার নিশ্চিত। কারণ এ সময়ে মধ্যে বাংলাদেশসহ সরাবিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত দেশটির প্রধান বিমানবন্দর মাসকাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল শুরুর কোন সম্ভাবনা নেই। নির্দিষ্টভাবে কোন সময়ে বা কোন তারিখে বিমানবন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হতে পারে তাও নিশ্চিত নয়।

রবিবার দেশটির ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ওমানকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা ওমান এয়ারের গ্রাউন্ড অপারেশনের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে আমরা বেশ কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখছি। আগামী ৩০ মে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থা থেকে একটি ‘পলিসি’ পাওয়ার কথা রয়েছে। তাদের পলিসি অনুযায়ী সম্ভবত আগামী জুন মাস থেকে শুরুর একটা সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এটির নির্দিষ্ট কোন সময় বলা না গেলেও আগামী মাসের আগ পর্যন্ত বিমানবন্দরের কোন পরিবর্তন আসবে না।”

Travelion – Mobile

তিনি যোগ করেন, বর্তমানে বিমানবন্দর বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কিছু বিশেষ বিমান চলাচল করছে।

এ নিয়ে পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন যে, বিষয়টি বর্তমানে সার্বজনীন হলেও ঐতিহাসিকভাবে এমন সময়ে এমন পরিস্থিতিকে কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে কোন দিকনির্দেশনা নেই। তাই আমাদের উচিত সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা।

এক্ষেত্রে এই খাতের সুদিন ফেরাতে দুটি বিষয়ের উপর জোর দেয়ার কথা জানান বিমানবন্দরের এই কর্মকর্তা। বলেন “তাই, প্রথমে আমাদের ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আয়াটা) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিকল্পনা ধরে যাতায়াতের পরিবেশকে নিরাপদ করে তুলতে হবে এবং সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এটি প্রমাণ করে যাত্রীদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।

মাস্কাট মাস্কাট বিমানবন্দরের রানওয়ে লাইটিংয়ে বিশেষ ডিভাইস সংযোজনএয়ারফিল্ড লাইটিংয়ের বিশেষ ব্যবস্থা সংযোজন
মাস্কাট বিমানবন্দরের রানওয়ে লাইটিংয়ে বিশেষ ডিভাইস সংযোজন

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণ করতে হবে যে, মাস্কাটসহ ওমানের বিমানবন্দরগুলোতে করোনার বিষয়টি মাথায় রেখে ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা আমাদের সক্ষমতার সব দিকই উন্মোচন করে প্রস্তুতি নিয়েছি। ”

ওই কর্মকর্তা আরে যোগ করেন, “কার্যক্রম চালু হলে সাবধানতা হিসেবে দুটি বিষয় আমরা খুব গুরুত্বের সাথে নিব। প্রথমটি হচ্ছে ‘বায়ো-স্ক্রিনিং’। এই পরিস্থিতর পর এমন স্ক্রিনিং মেশিন পাওয়া মুস্কিল হবেনা যেটি বলে দিতে পারবে যে কেউ কি এই ভাইরাস বহন করছে নাকি করছে না। অথবা যে ব্যক্তি ভ্রমণ করছেন তার কোন লক্ষণ নেই অথচ কিন্তু সে একজন ক্যারিয়ার। আমরা ইতিমধ্যে ভিয়েনা বিমানবন্দরের কিছু খবর শুনেছি যে তারা এমন একটি মেশিন নিয়ে এসেছে যা বলে দিতে পারবে কোন ব্যাক্তি এর বাহক কি না। দ্বিতীয় দিক হল সামাজিক দুরত্ব এবং জীবাণুনাশক উপাদানের ব্যবহার যা আয়াটার থেকে সুপারিশ করা হয়েছে।”

টাইমস অব ওমানকে সবশেষে তিনি বলেন, বিমান ও বিমানবন্দরগুলিকে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার জন্য বর্তমানে অনেক উন্নত প্রযুক্তি যেমন অতিবেগুনি রশ্মির বাতির মত অনেক কিছুই রয়েছে যেগুলো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলতে সক্ষম।

আর সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায়, মাস্ক ও গ্লাভস পরা এসবই এখন আমাদের অভ্যাসে এসে গেছে। অন্য যে বিষয়টিও নজরে আনা উচিত তা হল ভ্রমণকে নিরবচ্ছিন্ন করা। তাই বিষয়টি নিয়ে আগে থেকেই আমরা যাত্রীদের উৎসাহিত করব।

প্রসঙ্গতঃ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ওমানে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল ও বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে শুধু বিদেশে আটকেপড়া ওমানের নাগরিকদের দেশ ফেরত এবং কারাগার থেকে বিশেষ ক্ষমায় মুক্তি দেওয়া সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী ও অবৈধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশও এ পর্যন্ত ১০৪৭ জন কারামুক্ত প্রবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া অতি সম্প্রতি পাকিস্তান ও ভারতের প্রবাসীদের জরুরী প্রয়োজনে দেশে ফেরার জন্য বিশেষ অনুমতিতে বেশ কয়েকটি ফ্লাইটেও চলাচল করেছে।

এ দিকে জিসিসিসহ অনেক দেশের কর্তৃপক্ষ বিমান চলাচল শুরুর বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত না নিলেও কিছু বিমানসংস্থা ইতিমধ্যে বুকিং শুরু করেছে।

ওমানের বিমান সংস্থাগুলি সূত্র ওমান অবজারভারকে বলেছে যে, একাধিক কারণে ওমানসহ জিসিসি দেশগুলো থেকে বিদেশ ভ্রমণের জন্য কিছু চাহিদা রয়েছে এবং ওয়েবসাইটে বুকিং পাওয়া যাচ্ছে, যদিও বিমান চলাচল দেশগুলোর সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।

জাতীয় বিমানসংস্থা ওমান এয়ার ভারতের কোচি, মুম্বাই, লন্ডন, দুবাই এবং সালালাহের জন্য গন্তব্যের জন্য মাসকট থেকে বুকিং শুরু করেছে। ওমান-ভিত্তিক দ্বিতীয় বিমানসংস্থা, সালামএয়ার ১৫ মে সালালাহ এবং ২২মে দুবাইতে বুকিং শুরু করেছে।

অন্যদিকে ভারতের বিমানসংস্থাগুলির মধ্যে ইন্ডিগো মুম্বাইতে এবং গো এয়ার মুম্বই ও কান্নুরকে বুকিং দেখা যাচ্ছে। ফ্লাইদুবাই ২১ শে মে দুবাই থেকে মাসকট বুকিং শুরু করেছেন। শারজাহ থেকে এয়ার আরবিয়া ১ জুন থেকে মাসকটকে বুকিং শুরু করেছে।

সম্প্রতি ওমানের সুপ্রিম কমিটির সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ডা. মোহাম্মদ বিন সাইফ আল হোসানী বলেন, “বিমান চালনা আবার শুরু করার সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে তবে কোনও সুপারিশ করা হয়নি।”

আগের খবর
ওমানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে না ফেরার অনুরোধ রাষ্ট্রদূতের
বিশ্বের শীর্ষ তালিকায় মাসকট ও সালালাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
মাস্কাট বিমানবন্দরের রানওয়ে লাইটিংয়ে বিশেষ ব্যবস্থা
ওমান থেকে দেশে ফিরলেন কারামুক্ত আরও ২৮৯ প্রবাসী

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!