হোয়াটঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার কলের উপর কর, বিক্ষােভের আগুনে লেবানন
প্রবাসী বাংলাদেশিরা শংকিত, সর্তক
ক্রম হ্রাসমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং নতুন কৃচ্ছতা সাধনের ব্যবস্থা নিয়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভের অংশ হিসাবে হাজার হাজার মানুষ লেবাননের রাজধানী শহরের বৈরুতের রাস্তায় নেমে আসে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লেবাননে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল এবং শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল।
বিক্ষোভকারীরা বৈরুতের রিয়াদ আল-সোলহ চত্বরে সরকারী সদরের বাইরে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকটি বড় রাস্তায় টায়ারে আগুন লাগিয়ে ব্যারিকেড দেয়। বিক্ষোভে আগুনের ধোঁয়ায় দু’জন বিদেশী শ্রমিক মারা গেছে বলে জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত লেবাননের জাতীয় নিউজ এজেন্সি। লেবাননের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা বাহিনীর (আইএসএফ)এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, বিক্ষোভে তাদের চল্লিশ সদস্য আহত হয়েছে। আইএসএফ প্রতিবাদকারীদের “বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা” থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর), সরকার ঘোষণা করেছিল যে ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (ভিওআইপি) এর মাধ্যমে করা কলগুলির জন্য দৈনিক সেন্ট করের ঘোষণা করেছে, যা হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার এবং অ্যাপলের ফেসটাইমসহ অ্যাপস ব্যবহার করে।
মন্ত্রিপরিষদ আরও বলেছে যে তারা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরও বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করবে। এই ঘোষণাগুলি দিনের বেলা লেবাননের সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার পর সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং রাতারাতি তা বড় ধরণের বিক্ষোভে রূপ নেয়। বিক্ষােভ চলাকালে আইন শৃংখলা বাহিনী এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের পরেই বৃহস্পতিবার রাতে সরকার ভিওআইপি ট্যাক্স প্রস্তাব প্রত্যাহার করে লেবানন সরকার।
দেশটি সংবাদগুলোর অনলাইন সংক্ষরণের খবরে বলা হয়, বাজেট অধিবেশনকে সামনে রেখে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার অজুহাতে নিত্যপ্রয়াজনীয় ও ব্যবহারের অনেককিছুর উপর সরকার কর আরোপ করছে। সবশেষ কর আরোপ করা হয় হোয়াটঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার কলের উপর।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থেকে বৈরুতসহ পুরো লেবাননে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাত ধরে বিক্ষােভের সাথে জ্বালাও পোড়াও। ছাত্র-জনতাসহ হাজার হাজার বিক্ষােভকারী ময়লার ড্রাম রাস্তায় ফেলে ব্যারিকেড দেয় এবং টায়ার পোড়ায়। সাধারন জনগন ও যানবাহনের ক্ষতিসাধন না করে শান্তিপূর্নভাবে বিক্ষোভ চলে শুক্রবারও । সকল স্কুল কলেজ বন্ধ ছিল। রাস্তায় হালকা যানবাহন চলাফেরা করে। বিক্ষোভকারীদের টায়ার জ্বালানো আর নিরাপত্তা বাহিনীর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপে অনেক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় মিডিয়াগুলোর খবরে বলা হয়, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরি শুক্রবারের মন্ত্রিসভার নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন। তার দলের সাথে যুক্ত একটি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, সরকারের সদর দফতরের আশেপাশে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হওয়ার পরে মন্ত্রিসভার বৈঠক বাতিল করা হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের মুখোমুখি হয় লেবানন। অর্থনৈতিক সঙ্কটের মাঝেও হাজার হাজার লেবানিজ রাস্তায় নামে সরকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে। এজন্য তারা সরকারের কড়া সমালোচনা এবং দোষারোপ করে।
বৈরুতের বিক্ষোভকারী এক হিসাবরক্ষক সেজার শায়া রয়টার্সকে বার্তা সংস্থাকে বলেছেন,”আমি বাড়িতে বসে ছিলাম এবং লোকজনকে রাস্তায় বিক্ষােভ করতে দেখে আমিও বেরিয়ে এসেছি।” আরও বলেন তিনি, “আমি বিবাহিত, প্রতি মাসে আমার বন্ধকী লোনের অর্থ দিতে হয় এবং আমার কোন কাজ নেই। এটি রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা।”
বৈরুতের রিয়াদ আল-সোলহ স্কয়ারের আশপাশে বিক্ষোভকারীদের কথাবার্তায় প্রতিধ্বনিত হয়েছিল “জনগণ সরকারকে পতন করতে চায়”। অনেককে ক্ষুব্ধও হতে দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার কারণে।
বৈরুতের একজন প্রতিবাদকারী আবদুল্লাহ বলেছেন,”আমরা এখন শুধু হোয়াটসঅ্যাপের উপরে বসে নাই, আমরা এখন সবকিছুর উপরে রয়েছি: জ্বালানী, খাবার, রুটি, সবকিছুর উপরে।”
ডলার সংকট, দাবানলের পরে আচমকা এমন জনবিক্ষােভে আতংকিত ও শংকিত বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানাদেশের প্রবাসীররা। রাজধানী বৈরুতে একটি শপিং মলের কর্মি প্রবাসী বিনোদ দেবনাথ বলেন, ‘প্রায় এক যুগ ধরে লেবাননে আছি। এবারই প্রথম আমি এখানে এত বড় বিক্ষোভ দেখলাম।’
লেবানন প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল করিম খাঁন বলেন, কোন দেশের আভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে মন্তব্য করা বা মতামত দেয়া বা সম্পৃক্ত হওয়ার অধিকার বিদেশী হিসেবে আমাদের মানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের নেই। তবে এই পরিস্থিতি নিয়ে আমরা শংকিত। নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সর্তক থাকার জন্য বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।’
লেবাবন প্রবাসী ভাইবোন সামাজিক সংগঠনের সভাপতি শরীফ খাঁন খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া রাস্তা-ঘাটে বের না হওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
প্রবাসী সাংবাদিক বাবু সাহা জানান, পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে বৈরুতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাপারে সার্বক্ষনিক খোঁজখবর রাখছেন রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাস কর্মকর্তারা। সবাইকে সর্তকভাবে চলাফেরার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬ টায় এ সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি জাতির উদ্যেশে ভাষন দিবেন বলে সরকারী ঘোষণায় বলা হয়েছে।