সৌদিতে প্রতিরাতে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হতো রুবিনাকে

‘একটি কক্ষে প্রতিরাতে দলবেঁধে চার-পাঁচজন মিলে যৌনকাজে বাধ্য করত। বাঁধা দিলে জ্বলন্ত সিগারেটের আগুন দিয়ে বুক ও স্পর্শকাতর স্থানে ছ্যাঁকা দেওয়া হতাে। করা হতাে মারধরও । সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলত কখনও কখনও’, বাড়ি ফিরে পরিবারের কাছে নির্যাতনের এমন বীভৎস ও লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার জ্ঞান হারান সৌদিফেরত রুবিনা বেগম (২২)।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের তরুণী গৃহবধু রুবিনা দালালের ‘লোভনীয় অফারে’ গৃহকর্মীর কাজে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে শিকার হন ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের। উদ্ধার হয়ে দেশে ফিরেছেন লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা নিয়ে। এখন মানসিক বিকারগ্রস্ত এই তরুণী চিকিৎসায় খুঁজে ফিরছেন সুস্থতা।

বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাধন চন্দ্র ঘোষ ভাষ্য,’গোপন অঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়া ও জখমের অসংখ্য দাগ রয়েছে। ক্ষতগুলো সারতে একটু সময় লাগবে। শারীরিক নির্যাতনের কারণে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন।’

Travelion – Mobile

সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় গত ২৭ নভেম্বর সৌদি আবর থেকে দেশে ফেরেন রুবিনা। নিজ বাড়ি ফিরে বীভৎস ও লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দেন রুবিনা বেগম। বাড়িতে শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় পরদিনই স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অর্থের অভাবে পুরো চিকিৎসা না নিয়েই রবিবার ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন রুবিনা।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রুবিনাকে নিয়ে স্বামী, বাবা ও মা দেখা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হকের সাথে। বিচার চান দালাল স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা মিয়ার।

ইউএনও সাথে স্বাভাবিক ভাবে কোনো কথা বলতে পারেনি সৌদিফেরত রুবিনা। বোবার মতো শুধু চারিদিকে দৃষ্টি ঘোরান। এমন মানসিক অবস্থা দেখে ইউএনও তাৎক্ষণিক রুবিনার উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির ব্যবস্থা করার ব্যবস্থা নেন। সে সাথে তিনি আশ্বাস দেন স্থানীয় দালালের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার।

কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের ফুল মিয়ার স্ত্রী রুবিনা। একই ইউনিয়নের রাজকান্দি গ্রামের সিদ্দিক আলীর মেয়ের সাথে সাত মাস আগে বিয়ে হয় ফুল মিয়ার। বিয়ের পর স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মানব পাচারকারী মোস্তফা মিয়া সৌদি আরবে চাকরির প্রলোভন দেখান। অভাবের সংসার থাকায় প্রলোভনে রাজি হয়ে সৌদিয়া রিক্রুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল সৌদি আরবে পাড়ি দেন রুবিনা।

ইউএনও অফিসে সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রুবিনার স্বামী ফুল মিয়া বলেন, তাকে সেখানে গৃহকর্মীর চাকরি দেওয়ার কথা থাকলেও ভিসা পেয়ে সৌদি আরবের দাম্মামে পৌঁছার পর তিনি জানতে পারেন, ৩-৪ লাখ টাকায় তাকে যৌনকর্মী হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিরাতে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হতো। যৌনকাজে লিপ্ত না হলে তার ওপর চালানো হতো নানা নির্যাতন।’

স্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, একপর্যায়ে সৌদি পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বিষয়টি আদম ব্যবসায়ী মোস্তফাকে জানালে সে এসব ‘মিথ্যা কথা’ বলে উড়িয়ে দেয়। স্থানীয় সাংবাদিক সাব্বির এলাহীকে জানালে তিনি নিয়ে যান কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হকের কাছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগের পর ৬ মাস ২৬ দিন পর দেশে ফেরেন আমার স্ত্রী।

টাকা রোজগারের আশায় গেলেও, একটি টাকাও দেশে পাঠাতে পারেননি রুবিনা, জানান ফুল মিয়া।

দালালের বিচার দাবি করে রুবিনার বাবা সিদ্দেক মিয়া বলেন,’আদম ব্যাপারি ইউপি সদস্য মোস্তফা মিয়া আমার মেয়ের সাথে এলাকার আরো কয়েকজন যুবতীকে বিদেশ পাঠিয়েছে। বার বার মোস্তফার কাছে মেয়ের খবর জানতে চেয়েছি, সে জানায় রুবিনা সৌদি কারাগারে আছে।’

কমলগঞ্জের উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, মেয়েটির স্বামী বিষয়টি জানালে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। তবে মেয়েটির মানসিক ও শারীরিক অবস্থা করুণ। রুবিনার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে দালাল জড়িত তাকে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় আদম ব্যাপারি ও ইউপি সদস্য মোস্তফা মিয়া এলাকা ছেড়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!