শাহজালাল বিমানবন্দর : এবার ‘শীতের’ ভোগান্তি আরো বাড়ার শঙ্কা

কালের কন্ঠ প্রতিবেদন

তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের জন্য আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত প্রতিদিন আট ঘণ্টা করে বন্ধ থাকবেহজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাতের ফ্লাইট ওঠানামা। এ সময় জরুরি অবতরণের প্রয়োজন হলে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করতে হবে। এর আগে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, বিমানবন্দর ১০ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তা মে পর্যন্ত গড়ানোয় যাত্রী ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

শীতে অন্য বছর রাতে ঘন কুয়াশায় প্রায়ই রানওয়ের ‘ডিজিবিলিটি’ (দৃশ্যমানতা) ৫০ থেকে শূন্য মিটারে নেমে আসে। এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কারণে কোনো ফ্লাইটকেই ওঠানামার অনুমতি দেওয়া হয় না। ফলে রাত ২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ফ্লাইট অপারেশন কার্যত বন্ধ থাকত। কিন্তু এবার রাতের ফ্লাইট পুরোপুরি বন্ধ থাকায় দিনের বেলায় ফ্লাইটের চাপ বাড়বে। এতে বিদ্যমান অবকাঠামো দিয়ে বেশি ফ্লাইট পরিচালনায় ‘হিমশিম’ খেতে হবে। আর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষমতা না বাড়ালে যাত্রীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে। কারণ এবার বন্ধ হচ্ছে রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, অন্য বছর শীতকালে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ভোরের দিকে কুয়াশার কারণে এমনিতেই বিমান ওঠানামা হয় না। শীতকালীন সময়সূচি অনুযায়ী, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে শীতকালীন ফ্লাইট শুরু হয়। রাত ২টা থেকে সকাল ৮টা-৯টা পর্যন্ত কুয়াশা বেশি থাকে। এ সময় রানওয়েতে ফ্লাইটগুলোর ‘ভিজিবিলিটি’ (দৃশ্যমানতা) কম থাকে। এতে সমস্যায় পড়তে হয় উড়োজাহাজগুলোকে। এবার রানওয়ে বন্ধ থাকার সময় এক ঘণ্টা কমিয়ে রাত ১টা থেকে করার পরামর্শ দিয়েছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। তাতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো ছেড়ে যাওয়ার জন্য বেশি সময় পাবে।

Travelion – Mobile

ঢাকায় সপ্তাহে ১২টি তার্কিশ এয়ারলাইনস আসা-যাওয়া করে। এই এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ছিল ভোর ৬টায়। রাতের ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় ওই ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়ে এখন সপ্তাহে ১০টি ফ্লাইট চালাবে টার্কিশ এয়ারলাইনস।

তার্কিশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশের সেলস অ্যান্ড ট্রাফিক অফিসার এজাজ কাদরি বলেন, ‘কিছু কানেক্টিং ফ্লাইটে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতে পারে। দিনে ফ্লাইট বেড়ে গেলে বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, অয়েল রিফুয়েলিং ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হবে কি না, তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা আছে। ডিসেম্বরে নতুন শিডিউলে ফ্লাইট শুরু হলে বোঝা যাবে।’

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে আট ঘণ্টা বিমানবন্দর বন্ধ থাকলে ওই সময়ের ফ্লাইটগুলো দিনের বেলায় সমন্বয় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে। এ জন্য বাড়তি চাপ নিতে আমাদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’

শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বেশির ভাগ ফ্লাইট রাত ১টার মধ্যে ছেড়ে যায়। তাই রাত ১২টার পরিবর্তে রাত ১টা থেকে ফ্লাইট বন্ধ করলে যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুটা কমবে। কারণ যাত্রীদের কানেক্টিং ফ্লাইট ধরতে হয়।

এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উপদেষ্টা ও বিমানবাহিনীর সাবেক উইং কমান্ডার এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, যাত্রীসেবার উন্নয়নে থার্ড টার্মিনালের কাজ করতে শীতকালকে বেছে নেওয়া ঠিক আছে। রাতের বেলার ট্রাফিকগুলো দিনের বেলায় শিফট করতে হবে। রিশিডিউল করতে গেলে দেখা যাবে অনেক এয়ারলাইনসের এয়ারক্রাফট হয়তো ওই সময় পাওয়া যাবে না। যে এয়ারপোর্টে যাত্রীরা যাবে, সেখানে হয়তো স্লট পাওয়া যাবে না। সঠিক ও কার্যকর স্লট ডিস্ট্রিবিউশন না হলে অনেক উড়োজাহাজ নামতে দেরি হবে।

তিনি বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের উন্নতি করতে না পারলে যাত্রীদের লাগেজ পেতে দেরি হবে, এতে বিমানবন্দরে যাত্রীদের অপেক্ষার সময় বেড়ে যাবে। রাতের ফ্লাইট বন্ধের সময় ছয় ঘণ্টা করা হলে সমস্যা কিছুটা কমানো যেত।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, ‘এখন দিনে ৭০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ১০ হাজার যাত্রী শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে আসা-যাওয়া করছে। রাতের ফ্লাইটের বদলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো দিনের বেলায় চালানো হবে। এতে যাত্রীর চাপ আরো বাড়বে।’

প্রতিবেদন : মাসুদ রুমী, দৈনিক কালের কন্ঠ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!