মায়েরাও যেন ঝিনুক – নীরবে সহে যায়, হাসিতে মুক্তা ফলায়

পৃথিবীর বিশুদ্ধতম শব্দ মা। বিশুদ্ধতম ভালোবাসা মায়ের ভালোবাসা। মায়ের ভালোবাসা পেতে প্রয়োজন হয় না ভালোবাসি বলার। সুখে, দুখে প্রতিটি সময় মায়ায়, স্নেহে, ভালোবাসায় যিনি জড়িয়ে রাখেন, তিনিই মা। আজ ১০ মে বিশ্ব মা দিবসে মা হারা একজন প্রবাসীর অনুভূতি আকাশযাত্রার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

আমার সব কিছু আছে কিন্তু মা নেই। মা দিবস আসলে শুধু মাকে মনে পড়ে না, এর নানা কারণও আছে, যাদের মা নেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হত দরিদ্র তারাই, সেজন্যই আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, “পৃথিবীতে যার মা নেই সে দরিদ্র।” আরেক এক মনীষী বলেছেন, নারী বা মা জাতিরা পৃথিবীর অর্ধেক, বাকি অর্ধেককে তারা জন্ম দেন। মা সকলের প্রেরণার বাতিঘর।

আমার মা ছিল আমার দার্শনিক, চিন্তা মননের বাতিঘর। মা ছিল আমার নিরাপত্তার, আমার নিরাপদ আশ্রয়; জীবনের আধার, শীতল শান্তির প্রেরণার জায়গা, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বিমূর্ত প্রতীক।

আমার বিদগ্ধ মায়ের অকৃপণ স্নেহমমতা, অকৃত্রিম ভালোবাসায় আমার জন্ম বেড়ে উঠা, শৈশব, কৈশোর, তারুণ্যর জলমাখা জীবন কাটানো। মাকে হারিয়ে আমি নিঃস্ব অসহায়। দহনে দহনে দগ্ধ, প্রতিদিন নিজেকে পুড়ি, ভোগি মায়ের শূন্যতায়।

Travelion – Mobile

মায়ের প্রত্যাশাহীন, প্রাপ্তিহীন নির্ভেজাল ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত তিন হাজার আট চল্লিশ দিন প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ তিনি আমার চোখেই আসেন, ভাসেন, তার স্মৃতিগুলো আমি খুঁজে ফিরি। দশ মাস দশ দিন পেটে ধারণ করে অসহনীয় কষ্ট, অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে যে মা আমায় জন্ম দিয়েছেন তার জন্য কিছু করতে না পারার বেদনা আমাকে তিলে তিলে পোঁড়ায়।

আমার মা নিজে না খেয়ে আমাকে খাইয়েছেন, তার ঋণ অপরিশোধ্য,অপরিমেয়। অনেকেই মায়ের সেবা করার সুযোগ পেয়েছে, দিল ভরা মায়ের দোয়া নিয়েছে, আমিতো নিতে পারিনি অসাধারণ, অমূল্য সম্পদ এই মা থেকে।

কতদিন মায়ের সারল্যপনা মুখখানি দেখিনা, অকৃত্রিম অমূল্য হৃদয়ছোয়া কথা শুনি না, কতদিন কত বছর হলো মাকে পা ছুঁয়ে সালাম করতে পারি না। আরতো পারবো না। মা তুমি; শৈশবে কত শৌর্য কত সাহস যুগিয়েছিলে,নানা বিপদে সান্ত্বনা দিয়েছিলে, প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি সংকটে পাশে ছিলে। সারাক্ষণ দীক্ষা দিতে অসৎ আনন্দের চেয়ে পবিত্র কষ্ট অনেক আরামদায়ক।

সোফেক্লিসের মত, তুমি বলতে আমি তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। তোমার সংসারের নোংগর। মা আমি নই স্রষ্টা কর্তৃক তুমিই ছিলে আমার শ্রেষ্ঠ উপহার, শ্রেষ্ঠ দান। মা তুমি আমার দু চোখে দেখা পৃথিবীর সেরা মানুষ। সেরা মা।তোমার জন্যই এ পৃথিবীতে আমার আগমন, তোমার হাত ধরেই একটু একটু করে পথ চলা, জীবনকে বুঝতে শেখা,জীবনকে জানতে শেখা।

প্রখ্যাত দার্শনিক মিচ অ্যালবোম বলেছিলেন, “তোমার সব গল্পের পিছনে র‍য়ছে তোমার মায়ের গল্প, কারণ সেখান থেকেই তুমি শুরু করেছো। সত্যি আমারই সব গল্পের পিছনের প্রেরণাদায়ী উদ্ভাবক ছিলে তুমি। তুমিতো আমার চমৎকার অভিভাবক, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও অকৃত্রিম বন্ধু।”

মা তুমিতো আমার সে মা নিজে না খেয়েও আমাকে খাইয়ে দিয়েছো, দিন মাস রাত না ঘুমিয়ে আমার সুস্থতার রবের কাছে ধরনা দিয়েছো,সেবা শুশ্রূষা করেছো। মমতা আর ভালবাসা দিয়ে আমাকে চলতে শিখিয়েছো, অপরকে সম্মান করতে শিখিয়েছো। কোন বিনিময় ছাড়া অন্যদের উপকার করতে শিখিয়েছো।

প্রিয় মা শাসন আর আদরে লেখাপড়া শিখিয়ে সমাজে মাথা উচুঁ করে সবার সামনে কথা বলার কৌশল শিখিয়ে দিয়েছো।মা এখনো তোমার প্রেরণাময়বাণীগুলো জীবনের পাথেয় করে রেখেছি। সেই পথেই চলছি, সততাকে পুঁজি করে। তুমিই শিখিয়েছিলে চিত্তবান মানুষ হতে। চিত্তবান হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।

মা অনন্তকালের সেই খেঁয়ায় তুমি ভালো থেকো মমতাময়ী মা. লিংকনের ভাষায় বলি আমি যা হই না কেন বা যা হওয়ার আশা করিনা কেন, আমি সর্বদাই আমার স্বর্গীয় মমতাময়ী মায়ের কাছে ঋণী। আমার মায়ের প্রার্থনা সব সময় আমার সঙ্গে ছিল। মা দিবসে পৃথিবীর সকল মাকে প্রাণখোলা অভিবাদন, অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা। ঝিনুক নীরবে সহে, নীরবে সহে যায় হাসিতে মুক্তা ফলায়, হাজার কষ্টের মাঝেও মায়েরা হাসিতে মুক্তা ফলান।

“ঝিনুক নীরবে সহে, নীরবে সহে যায়, হাসিতে মুক্তা ফলায়, পৃথিবীর সব মায়েরা যেন ঝিনুক।”

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!