পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানের ‘তাড়া খেয়েছে’ ভারতের স্পাইসজেট !

ভারতের স্বল্প বাজেটের বিমানসংস্থা স্পাইসজেটের একটি উড়োজাহাজ পাকিস্তানের আকাশসীমায় দেশটির যুদ্ধবিমানের ‘তাড়া খেয়েছে’। ১২০ জন যাত্রী নিয়ে নয়াদিল্লি থেকে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পথে যাবার সময় এমন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে স্পাইসজেটের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি।

বলা হচ্ছে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ কারণে পাক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দ্বারা তাড়া খায় স্পাইস জেট। পাকিস্তানি বিমানবাহিনী এটিকে ভারতের সামরিক বিমান মনে করে। তাই যাত্রাপথে বাধা দেয় তাদের দুটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। বিভ্রান্তি দুর হবার পরও আকাশসীমার বাইরে যাওয়া পর্যন্ত স্পাইসজেটের সঙ্গেই উড়তে থাকে পাক যুদ্ধবিমান দুটি ।

ভুল বোঝাবুঝিতে তাড়া আর বাধার মধ্যে না থেকে যদি পাক যুদ্ধবিমানগুলো যাত্রীবাহী স্পাইসজেটকে ভূপাতিত করার উদ্যােগী হতো তবে পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নিতো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Travelion – Mobile

তাই এভিয়েশন বিশেষজ্ঞতা বলছে, অল্পের জন্য রক্ষা পেল বড় একটি বিমান দুর্ঘটনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, এমন অঘটনের পরে শত্রুভাবাপন্ন দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়তো, যুদ্ধটা শেষ পর্যন্ত বেধেই যেত!

ঘটনাটি ঘটেছে চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর। বিলম্বে পাওয়া খবরের সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) এ তথ্য বেরিয়ে আসে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) থেকে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ডিজিসিএ-র জানায় স্পাইসজেটের বোয়িং ৭৩৭ কে দেওয়া “কল সাইন” এর গণ্ডগোলে এটি সামরিক বা বেসামরিক বিমান ছিল কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। এরপরই স্পাইসজেটকে বাধা দেয় পাক যুদ্ধবিমানগুলো।

বিষয়টির স্পর্শকাতরতার কারণে এর বেশি তথ্য জানাতে রাজি হয়নি ডিজিসিএ। এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি স্পাইসজেট। নিরবতায় রয়েছে ভারতের পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।

ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ডিজিসিএর এক কর্মকর্তা বলেন “২৩ শে সেপ্টেম্বর সকালে স্পাইস জেটের ফ্লাইট এসজি ২১ দিল্লি বিমানবন্দর ছেড়ে পাকিস্তানের আকাশসীমা দিয়ে কাবুলের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পাকিস্তান দুটি এফ-১৬ যাত্রীবাহী ফ্লাইটটিকে তাড়া করে এবং মাঝ-আকাশে আটকে দেয়।”

পাক যুদ্ধবিমান এফ-১৬ পাইলটরা স্পাইসজেট পাইলটকে উচ্চতা নামিয়ে আনতে এবং ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার জন্য বলেছিলেন, যোগ করেন এই কর্মকর্তা ।

সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে,স্পাইসজেটের পাইলট এরপর পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর বিমানটিকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, তাদের বিমানটি ‘বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী বিমান’। এরপর স্পাইসজেটের পাইলটকে অনুমতি দেওয়া হয় তাদের উড়াল চালিয়ে যেতে এবং আফগানিস্তানের আকাশসীমায় পৌঁছানো পর্যন্ত সঙ্গে থাকে পাক যুদ্ধবিমান দুটি।

অপর এক প্রবীণ সরকারী কর্মকর্তা পিটিআইকে বলেন,”২৩ শে সেপ্টেম্বর পাকিস্তান ধরে নিয়েছিল যে স্পাইসজেটের বোয়িংটি ভারতীয় বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজ ছিল। পাকিস্তান যখন বুঝতে পেরেছিল যে এটি বাণিজ্যিক বিমান, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দুটি আফগানিস্তান আকাশসীমা অবধি স্পাইসজেটকে এসকর্ট করেছিল।”

ভারতীয় মিডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ঘটনার সময় স্পাইসজেটের কাবুলগামী যাত্রীরা পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান দুটিকে দেখতে পাচ্ছিল, তবে তাদের জানালা বন্ধ করে দিতে বলেছিল কেবিন ক্রুরা। এমন পরিস্থিতিতে আতংকিত হয়ে পড়েছিল যাত্রীরা।

এ ঘটনার কারণে কাবুল থেকে সেদিনের ফিরতি ফ্লাইটটি অনেক বিলম্বে ছাড়ে। ডিজিসিএ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের ফ্লাইটগুলি এখন স্বাভাবিকভাবে চলছে। স্পাইসজেট প্রতিদিন সেখানে উড়ে যায়।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান তার আকাশসীমা ভারতের জন্য পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল। পুলওয়ামার হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনী ১৪ ফেব্রুয়ারি বালাকোটের একটি জয়শ-ই-মোহাম্মদ (জেএম) সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলার পর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে পাকিস্তান। ১৬ জুলাই আবার বেসামরিক ও বাণিজ্যক বিমান যাতায়াতের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করে পাকিস্তান। এই ঘটনার সময়, ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির উড়োজাহাজের জন্য কোনও বিধিনিষেধ ছিল না।

পিটিআই বলছে, এই ঘটনাটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার পটভূমিতে হয়, যখন ৫ আগস্ট ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার এবং দ্বিখণ্ডিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে।

জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারে ভারতের সিদ্ধান্তের পরে গত মাসে রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বহনকারী বিশেষ বিমানগুলি আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি পাক সরকার।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!