তৃতীয় পর্যায়ের করোনা ঝুঁকিতে ওমান, সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ জন

বৈশ্বিকভাবে পাঁচভাগে করোনাভাইরাসের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে। প্রথম পর্যায় বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে রোগের উদ্ভব। রোগটি দ্বিতীয় পর্যায়ে ওই অঞ্চলের অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আর তৃতীয় পর্যায় একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে তা অন্য দেশে বা অঞ্চলে সংক্রমিত হতে শুরু করে। চতুর্থ পর্যায় ধরা হয় তখনই যখন বাইরে থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমিত হয়। সবশেষে পঞ্চম পর্যায়ে রোগটি স্থানীয়ভাবে মহামারী রুপ নেয় যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

ওমানের যেসব করোভাইরাস আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েছে তাদের সবাই দেশের বাইরে থেকে এই ভাইরাস নিয়ে এসেছেন। তাই দেশটি করোনাভাইরাসের ঝুঁকির স্টেজ থ্রি’তে (তৃতীয় পর্যায়) আছে বলে ঘোষণা করেছে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়।

সোমবার এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওমানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. আহমেদ বিন মোহাম্মাদ আল সায়েদি জানিয়েছেন, এই সংক্রমণের সম্ভাব্য সব পথ রুখতে ওমান সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত আছে এবং নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

Travelion – Mobile

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্যাখ্যা করে বলেন, “দ্বিতীয় পর্যায় থেকেই এটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাদুর্ভাব হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় এবং আমরা চাই না করোভাইরাস ওমানে চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ে যাক। তাই আমরা এখন থেকেই সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মেনে এবং বৈশ্বিক মান বজায় রেখে করা হচ্ছে।”

করোভাইরাসের বিস্তার রোধের একটি বড় পদক্ষেপ হল যার মধ্যে এর লক্ষণ দেখা দিবে তাকে আলাদা করে ফেলা। ওমানে সম্প্রতি করোনা থেকে সেরে উঠা দ্বিতীয় ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি করা হয়েছিল। দেশটিতে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১২ জনের মধ্যে করোভাইরাস পাওয়া গেছে, যার মধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

এই দু’জনই তাদের নিজের বাসা থেকেই সেরে উঠেছেন। প্রথমদিকের আর চারজনেও সেরে উঠবার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন এবং তাদের বর্তমান অবস্থা স্থিতিশীল আছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

ওমানে মোট ২৩৬৭ জনকে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে ৪৯ জন ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আলাদা আছেন আর ২৩১৮ জন বাসস্থানে নিজ থেকে কোয়ারান্টাইনে আছেন।

ড. আহমেদ বিন মোহাম্মাদ জানান “এই বিচ্ছিন্ন থাকাদের মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে আমরা পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করছি।

“করোভাইরাস-এর মতো প্রাদুর্ভাব আমরা আগেও মোকাবেরা করেছি, যখন বছর খানেক আগে, সার্স, সোয়াইন ফ্লু এবং বার্ড ফ্লু-এর মতো রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল এবং এর থেকেও বেশি বিপজ্জনক ছিল। তবুও এই অবস্থাকে ছোট করে দেখবার কোন কারণ নেই”, মন্ত্রী বলেন।

পরামর্শ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি মোতাবেক চলতে প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ওমানি ও প্রবাসীদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

“সবাইকে অবশ্যই পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধির উপর জোর দিতে হবে এবং দিনে কয়েকবার সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধোয়ার নিয়ম মেনে চলতে হবে। সেইসাথে যেসব জীবাণুনাশক পদার্থে ৬০ শতাংশের বেশি অ্যালকোহল রয়েছে সেসব ব্যবহার করা উচিত। কারণ এসব ব্যবহারে সহজেই ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণু থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে।”

তিনি আরো জানান,”এই সময়, হ্যান্ডশেক বা অযথা নাক-মুখ স্পর্শ করা থেকে আমাদের কঠোরভাবে বিরত থাকতে হবে শারীরিকভাবে স্পর্শের অনেক সামাজিক রীতি-নীতি যা আরব সমাজে প্রচলিত আছে তা আপাতত এড়িয়ে চলার আহ্বানও জানান তিনি।

স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। এছাড়াও এই রোগ ঠেকাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় পাবলিক অথরিটি ফর সিভিল অ্যাভিয়েশন (পিএসিএ), রয়েল ওমান পুলিশ (রোপ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথেও যোগাযোগ রাখছে নিয়মিত।

দেশটির বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং সীমান্তে পারাপারের মাধ্যমে যাতে করোভাইরাস আরো বিস্তৃতি লাভ করতে না পারে সে ব্যাপারেও নেয়া হয়েছে সতর্কতা।

শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে সর্বশেষ অগ্রগতি, এবং সরেজমিন পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। আমরা এটা নিশ্চিত করতে পারি, এখন পর্যন্ত বিদেশে অধ্যয়নরত আমাদের কোনো ওমানী শিক্ষার্থীর সংক্রমণের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।”

এসময় সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী সালালাতে করোভাইরাস সংক্রমণের দাবিকে ভিত্তিহীন বলে জানান।

আগের খবর
ওমানে করোনা-আক্রান্ত আরও ৬ জন শনাক্ত, মোট ১২
ওমানে করোনার কোয়ারান্টাইনে ১৩২০ জন, শনাক্ত একজন সুস্থ
ওমানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত আরও ২ জন শনাক্ত
ওমানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!