বঙ্গবন্ধু হত্যা বিশ্ব ইতিহাসে মানবাধিকার ও মানবতার কলঙ্কজনক অধ্যায়

জর্ডানে বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েবিনার

আইন ও বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা বিশ্ব ইতিহাসে মানবাধিকার ও মানবতার এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। আর হত্যাকারিদের বিচার না করার প্রবনতা রাষ্ট্রের মানবাধিকার ও আইনের প্রতি চরম হুমকি। দেরিতে হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।।

সোমবার (১৬ আগস্ট) জর্ডানে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবসের ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস বছরব্যাপী ওয়েবিনার সিরিজ আয়োজন করছে। শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই ওয়েবিনারটি ছিল ৮ম আয়োজন।

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাড় করানোর লক্ষ্য নিয়ে দেশের পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলার। স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ উন্নয়নের যে ভিত্তি রচনা করেছিলেন তা আজ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল একটি অগ্রগামী দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হয়েছে।

Travelion – Mobile

ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি জর্ডানের প্রিন্সেস বাসমা বিন্তে আলী বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর মতো একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ককে হত্যা সত্যিই হতাশা ও বেদনাদায়ক।

বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম, এন.ডি.সি বলেন, হত্যা ও ষড়যন্ত্র সব দেশেই থাকে কিন্তু স্বাধীনতার মহানায়ককে হত্যা জাতি হিসেবে আমাদের কলঙ্কিত করে। দীর্ঘ ২১ বছর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার না হওয়া বাংলাদেশের আইনি কাঠামো ও মানবাধিকার সম্পর্কে বহির্বিশ্বে একটি ভুল বার্তা দেয়। আর এই হত্যাকে আইনি বৈধতা দেয়া ছিল মানবাধিকার ও সংবিধানের চরম লংঘন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দেরি হলেও বাংলাদেশে আইনি ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি প্রফেসর নাসরিন আহমেদ বলেন, ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়েবাঙালি জাতির ইতিহাসের গতিপথকে পাল্টে দিতে চেয়েছিল । কিন্তু যে নেতা একটি জাতির স্বাধীনতার রূপকার এবং যিনি মানুষের ভালোবাসা দিয়েই উঠে এসেছেন তাকে হয়ত হত্যা করাযায় কিন্তু তাঁকে মুছে ফেলা যায় না। বঙ্গবন্ধুর উদারচেতা মানবিক মূল্যবোধ আজকের সময়ে একান্তই বিরল।

তিনি বঙ্গবন্ধুর মত একজন রাষ্ট্রনায়ক ও একজন অবিসংবাদীত নেতার সহজ সরল জীবন ও মানবিক মূল্যবোধকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বরেন্য গবেষক মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশ ও এর জাতি সত্তা ধর্ম, বর্ণ, শিল্প ও সাহিত্যের এক বৈচিত্র্যময় মিশেল। শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে একটি জাতিকে সম্পৃক্ত করা এবং ধর্মের নামে শোষণ কখনই সফল হয় না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সেই সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল একটি সাম্য ও মানবিক রাষ্ট্রের লক্ষ্য নিয়ে। ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে এই মূলনীতি থেকে বিচ্যুত করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সেক্ষেত্রেও তারা সফল হতে পারেনি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রা তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শেরই সফল বাস্তবায়ন।

সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা ছিল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। মধ্যপ্রাচ্যর ইরাক, মিশরসহ অনেক দেশ এই হত্যাকাণ্ডকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করলেও কিছু দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ষড়যন্ত্রের এই প্রক্রিয়া এখনও চলমান। তাই এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

এই হত্যার নীল নকশাকারীদের মুখোশও একসময় সবার কাছে উম্মোচিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জর্ডানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারনেই আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আজ বিশ্বে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কাল অধ্যায়।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারন করে তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ এক উন্নয়নের রোল মডেল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!