চুমুতে নিষেধাজ্ঞা জারি ইউরোপের তিন দেশে!

করোনাভাইরাস রোধে

মৃত আর আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে করোনাভাইরাস আতঙ্ক। চীনের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে গেলেও নতুন করে ভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশও।

এতদিন হাঁচি-কাশি আর মানুষে মানুষে সংস্পর্শ থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ানো নিয়ে বেশ আলাপ-আলোচনা চললেও এবার নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে চুমুর ব্যাপারটি। বিশেষ করে যেসব দেশে চুমুর মাধ্যমে একে অন্যকে অভিবাদন জানান সেসব দেশে জারি করা হয়েছে সতর্কতা।

চুমুর মাধ্যমে যেহেতু সহজেই একজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু প্রবেশ করতে পারে সেহেতু এর উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও ইতালি।

Travelion – Mobile

এসব দেশের মধ্যে ইতালিতে করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। যেখানে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১ শতকের ঘর ছাড়িয়েছে, আক্রান্ত তিন হাজারেরও বেশি। ইতালির পরপরই ইউরোপে নাজুক অবস্থায় রয়েছে ফ্রান্স। এখানে চারজন মারা যাওয়ার পাশপাশি আক্রান্ত হয়েছে ২ শতাধিক মানুষ। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডে কেউ মারা না গেলেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক।

ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে গেল মাসের শেষে ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে নাগরিকদের চুমু দিতে নিরুৎসাহিত করে ফ্রান্স। ফান্স সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভিয়ার ভারান নাগরিকদের সতর্কতামূলক পরামর্শ দিয়ে বলেন, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের মধ্যে চুম্বনের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানোর রীতি রয়েছে ফ্রান্সে।

সেখান থেকেও এই সংক্রমণ যেহেতু ছড়িয়ে পড়তে পারে সেহেতু বাড়তি সতর্কতা হিসাবে চুম্বন না করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। পাবলিক প্লেসে কিংবা সামাজিক জমায়েতে একে অন্যের গালে চুমু দেয়ার রীতি থেকে আপাতত নাগরিকদের দূরে থাকার ঘোষণা দেয়ার পরপরই এ নিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ও বিশ্বমিডিয়ায় বেশ সাড়া পড়ে।

এর একদিন পরেই চুম্বনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সুইজারল্যান্ড সরকার। দেশটির সরকারও মনে করছে, চুমু থেকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে ভয়ঙ্কর এই মরণরোগ। ইতোমধ্যে এই সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রালয়।

সুইজারল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলিয়েন বারসেট জানিয়েছেন, করোনা ভয়ঙ্করভাবে ছোঁয়াছে রোগ। কোনওভাবে আক্রান্তের কাছাকাছি এলেই তা এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর চুম্বনের কারণে এই ভাইরাস ছড়িয়ে আরও মারাত্মক আকার নিতে পারে। আর সেজন্যই চুম্বনের যে প্রথা আছে তা বন্ধ রাখার জন্যে দেশের নাগরিকদের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

ইতালিয়ান রাষ্ট্রপ্রধান গিযুসেপ কোন্টেকে দু-গালে চুমু খেয়ে আলোচনার জন্ম দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন
ইতালিয়ান রাষ্ট্রপ্রধান গিযুসেপ কোন্টেকে দু-গালে চুমু খেয়ে আলোচনার জন্ম দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন

শুধু চুমু নয়, করমর্দনের ব্যাপারেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। করমর্দনের আগে ও পরে হাত ভালো করে ধুয়ে নেয়ার কথা বলেছেন সুইজারল্যান্ডের স্বস্থ্যমন্ত্রী। এছাড়া দেশটিতে মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সব ধরনের সভা সমাবেশ ও কনসার্ট বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া দেশ ইতলিতে দেরীতে হলেও চুমুর উপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

গেল মাসে ইতালির রোম শহরে এক সমাবেশে অংশ নিয়ে রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস ভক্তদের গালে চুমু খেয়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। অবশ্য পরীক্ষায় নেতিবাচক ফলাফল আসে।

এরপর গত সপ্তাহে ইতালিয়ান রাষ্ট্রপ্রধান গিযুসেপ কোন্টেকে দু-গালে চুমু খেয়ে আলোচনার জন্ম দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন। এসবে গুঞ্জন আলোচনার মধ্যে যখন ইতালিতে রোগের প্রকোপ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তখনই করোনা ঠেকাতে নানা পদক্ষেপের সাথে চুমুর উপরও বিধি নিষেধ জারি করে।

দেশটির সরকার জানিয়েছে, ১ লাখ বিশ হাজার মানুষের শিল্পনগরী বারগেমোকেও কোয়ারান্টাইন জোন হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এর সাথে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়া ভেনেটো অঞ্চলের আরও দশটি শহরকেও আরো আগে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

এসব শহরে অর্ধলক্ষেরও বেশি মানুষকে পুলিশ পাহারায় আলাদা করে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতিতে এবার সরকার নাগরিকদের গালে চুম্বন, আলিঙ্গন এবং হাত ঝাঁপানোর মতো শুভেচ্ছা বার্তা এড়িয়ে চলার উপর জোর দিয়েছেন।

এর আগে সরকার ইতালিয়ান নাগরিকদের পানশালা, রেস্টুরেন্ট, দোকান, গির্জা সহ পাবলিক স্পেসে অন্য ব্যাক্তি থেকে অন্তত ৩ফুট দুরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছিল।

অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে ইতালির উত্তরাঞ্চলে জনসমাবেশ ও স্কুল বন্ধের ওপর নিষেধাজ্ঞা উল্লেখ্য। ইতালির তিনটি ভয়াবহ করোনা কবলিত অঞ্চল — লোম্বারডি, ভেনেতো এবং এমিনিয়া-রোমাগনায় আরও এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বয়স্ক মানুষদের যতটা সম্ভব ঘরের মধ্যে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!