কুয়েতে ভিসা ব্যণিজ্যের বিরুদ্ধে অভিযানে বন্ধ হচ্ছে বহু কোম্পানির অফিস

শিকার হচ্ছেন শ্রমিকরা

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কুয়েত সরকার ভিসা বাণিজ্য ও মানবপাচারের বিরুদ্ধে বেশ কঠোর অবস্থানে গেছে। তাই এখন মিশর এবং কুয়েতের আকামা ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। কুয়েতে ভিসা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রসিকিউসনের নির্দেশে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশের একজন সাংসদ রয়েছেন।

কুয়েতের পাশপাশি বিভিন্ন দেশে ভিসা বাণিজ্য ও মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত অনেকে কোম্পানি রাতারাতি তাদের কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকে লাপাত্তা হচ্ছে। আর এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে মিশরে।

আরব টাইমস প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে, মিশরে যেসব কোম্পানি কুয়েতে শ্রমিক আনা বা কর্মী নিয়োগে নিয়োজিত ছিল তাদের অনেকেই কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে আর অনেকেই সতর্কতা হিসেবে তাদের ব্যবসা বন্ধ করেছে। কায়রো এবং মেনোফিয়া এবং আসইয়ুত প্রদেশে বেশ কয়েকটি অফিস তাদের দরজা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে এবং তাদের কর্মচারীদের ছাটাই করেছে। এসব কোম্পানি কুয়েতে যেতে ইচ্ছুক মিশরীয় শ্রমিকদের কাছে ভিসা বিক্রি করত।

Travelion – Mobile

মিশরে এখন এনিয়ে বিশৃঙ্খলা আর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ শত শত শ্রমিক কুয়েতে যাওয়ার ভিসা কিনলেও মেডিকেল পরীক্ষার শেষ করেছিল। অথচ কুয়েত ফ্লাইট স্থগিত করার কারণে তাদের সেখানে যাওয়ার স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে যাওয়ার পথে। কারণ যতই দিন যাচ্ছে তাদের এন্ট্রি পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং ভিসা কিনে তাদের সকলের অন্তত ৫০,০০০ পাউন্ডের মত হারিয়ে ফেলার আশংকা তৈরি হয়েছে।

আগের খবর : কুয়েতে এমপি কাজী পাপুলের রিমান্ড বাড়ানো হয়েছে

মিশরের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি সূত্র আরব টাইমসকে জানিয়েছে যে, বেশ কয়েকটি কুয়েতি কোম্পানি- যেগুলো মিশরীয় কিছু কর্মসংস্থান অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হয় সেগুলোর ব্যবস্থাপনা মিশরিয় দালালদের হাতে চলে গিয়েছে। তারা অনেকেই কার্যালয় গুটিয়ে নিয়েছে এখন তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে।

কায়রোর ম্যানিয়াল এলাকায় একটি রিক্রুটমেন্ট অফিসের কর্মী আব্দুল ঘানি মুহাম্মদ জানিয়েছেন যে কুয়েত ভিসা এবং ফ্লাইট স্থগিত করার কারণে তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, কুয়েতে আকামা ব্যবসায় সংকট তৈরি হওয়ায় এবং অপরাধীদের আটক করার কারণে তাদের কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “তাদের অফিসটি কুয়েতের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির এবং তার জন্মস্থানে এই কোম্পানির অনেক শাখা রয়েছে যেখান থেকে মিশরে শ্রমিক পাঠানো হয় এবং হজ্জ ও উমরাহ সেবাও প্রদান করে। ২০০৭ সালে কায়রোতে এক আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি অফিসটি খুলেছেন আর দুই দেশের মধ্যস্বত্বভোগিদের সহায়তায় এখান থেকে কুয়েতে শ্রমিক পাঠানো হত।”

আগের খবর : এমপি পাপুল ও তার স্ত্রী-কন্যা-শ্যালিকার ব্যক্তিগত নথি তলব দুদকের

মোহান্দেসনে, একটি নিয়োগ কোম্পানির কর্মচারী আদেল ফারঘালি। ২০১০ সাল থেকে পরিচালিত একটি অফিসে তিনি দুই বছর আগে কাজ করতেন। অবাধ শ্রমিক বাণিজ্যের বিষয়টি তিনি দেখেছেন এবং শত শত মিশরীয় শ্রমিকের কুয়েতে যাওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছেন।

ফারঘালি উল্লেখ করেছেন যে “কুয়েতে বেশীরভাগ মিশরীয় কর্মসংস্থান অফিসই কুয়েতের নামীদামী ব্যক্তির মালিকানাধীন যারা কায়রোতে তাদের মধ্যস্থতাকারীদের প্রতিনিধিত্ব করে। মধ্যস্থতাকারীরা ভিসা বিপণন এবং ১৫০,০০০ পাউন্ডের বেশি পরিমাণে মিশরীয় শ্রমিকদের কাজ দেয়ার প্রলোভন দেখায়।

মেনউফিয়াতে একটি সূত্র জানিয়েছে, “শহরের অন্যতম বৃহৎ অফিস যার মালিক কিনা একজন কুয়েতি এবং যে কিনা মানব পাচারে অভিযুক্ত সেই অফিসের দরজা স্থায়ীভাবে এখন বন্ধ করে গেছে। এই মালিক কুয়েতে একই ধরনের কোম্পানির মালিক যেটি এশিয়ান শ্রমিকদের আনার জন্য কাজ করছে। ”

আগের খবর : কুয়েতে মানবপাচারের অভিযোগে সংসদ সদস্য কাজী পাপুল গ্রেপ্তার

মোহাম্মদ রাগাব যে কিনা একজন ভুক্তভোগি সে জানিয়েছে, বিমান চলাচল স্থগিত করার আগে তার মত আরও ১১ জন মোট ১৫ লক্ষ মিশরীয় পাউন্ড প্রদান করেছে। তারা প্রত্যেকেই ১২৫,০০০ পাউন্ড করে দিয়েছে। প্রথমে তারা এই ভুয়ার নিয়োগকারি কোম্পানিকে ৮,০০০ দেয়। পরে ৩ সপ্তাহ পর অফিস তাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং তাদের এন্ট্রি পারমিটের জন্য ২০,০০০ পাউন্ড করে প্রদান করতে বলে। এরপর তারা ৩টি ট্রাস্ট রসিদে স্বাক্ষর করে, যার প্রতিটির মূল্য ৩০,০০০ পাউন্ড এবং যেগুলো কুয়েতে যাওয়ার পর তারা কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা ছিল।

তিনি বলেন, তিনি চিকিৎসা পরীক্ষা করেছেন এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত লেনদেন সম্পন্ন করেছেন যার জন্য তার প্রায় ৭,০০০ পাউন্ড খরচ হয়েছে। যার ফলে ১২ জন ব্যক্তির প্রত্যেককে প্রায় ১২৫,০০০ পাউন্ডে অর্থ প্রদান করতে হয়েছে। এখন কুয়েতে ভ্রমণ নিষিদ্ধ হওয়ায় এবং এন্ট্রির তারিখ ঘনিয়ে আসায় তিনি এই বিপুল অর্থের জন্য অনুতাপে ভুগছেন এবং শোকে দিন যাপন করছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!