এমপি পাপুল ও তার স্ত্রী-কন্যা-শ্যালিকার ব্যক্তিগত নথি তলব দুদকের

মুদ্রা ও মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কুয়েতের কারাগারে থাকা লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি)কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, হুন্ডি ব্যবসা ও মানবপাচার, অবৈধ ভিসা ট্রেডিংসহ অবৈধ সম্পদের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে পাপুল, তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার ব্যক্তিগত বিভিন্ন নথিপত্র তলব করেছে দুদক।

এরই মধ্যে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমপি পাপুল ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলামসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য-উপাত্ত মিলেছে। বিদেশে অর্থপাচারের তথ্য-প্রমাণাদি ও নথিপত্র যাচাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (৯ জুন) অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক থেকে পাঠানো চিঠিতে পাপুল, তাঁর স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও সেলিনার বোন জেসমিনের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টিআইএন নম্বর, আয়কর রিটার্নসহ ব্যক্তিগত সব নথিপত্র তলব করা হয়েছে। চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।

Travelion – Mobile

দুদক সূত্র জানিয়েছে, চিঠি পাঠানো হয়েছে গুলশান স্ত্রী সেলিনা ইসলামের আবাসিক ঠিকানা ও লক্ষ্মীপুরের স্থায়ী ঠিকানায়। চিঠিতে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে উল্লিখিত নথিপত্র দুদক কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থায় তাঁদের বক্তব্য নেওয়া হতে পারে বলে চিঠিতে বলা হয়।

মুদ্রাপাচার ও মানবপাচারের অভিযোগে গত ৬ জুন শনিবার রাতে এমপি পাপুলকে মুশরিফ আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সোমবার রিমান্ডের আবেদন করলে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশনের বিচারক তা মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে পাপুলের পক্ষে জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়। কুয়েতি আদালতে পাপুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন ভুক্তভোগী সাত প্রবাসী বাংলাদেশি ।

তাদের অভিযোগ ছিল প্রত্যেকের কাছ থেকে পাপুল ২৫০০ দিনার করে আদায় করে তাদের নিজ কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও পরে তারা কুয়েতে গেলে নিজ দায়িত্বে চাকরি খুঁজে নেয়ার কথা বলেন পাপুল। তারপর যখন তাদের আকামা নবায়নের সময় আসে তখন এই সাংসদ তাদের কাছে থেকে আবারো অর্থ দাবী করে বসে। শহীদুল ইসলাম পাপুল পাবলিক প্রসিকিউশনে সাত বাংলাদেশির দেয়া জবানবন্দি অস্বীকার করেন।

কুয়েতে জালিয়াতির মাধ্যমে মানবপাচারের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে পাপুলের বিরুদ্ধে। নব্বইয়ের দশকে পাপুল সামান্য একজন শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে গেলেও এখন তাঁর কম্পানিতে ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। প্রবাসী শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, বেশি বেতনের কথা বলে ছয় থেকে আট লাখ টাকার বিনিময়ে কুয়েতে নেওয়া হলেও সেখানে তাঁরা ঠিকমতো বেতন পেতেন না। আবার বছর বছর ভিসা নবায়ন করতে গিয়ে এমপি পাপুলকে লাখ লাখ টাকা দিতে হতো। অনেক সময় শ্রমিকরা মাসের পর মাস তাঁর কম্পানিতে কাজ করে গেলেও কোনো বেতন পেতেন না।

কুয়েত সূত্রে জানা গেছে, মানব, অর্থপাচার, ভিসা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে একপ্রকার জেহাদ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। এরমধ্যে এইসব অপরাধে জড়িত দেশের নাগরিক ও প্রবাসী অংশীদারদের দীর্ঘ তালিকা করেছে কুয়েত সরকার। এরই মধ্যে ধরা পড়েছেনও অনেকে। সেই ধারাবাহিকতায় গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশের এমপি পাপুল।

অভিযোগ রয়েছে, পাপুল ব্যবসার আড়ালে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এ ছাড়া ২০১৬ সালে দেশ থেকে ২৮০ কোটি টাকা হুন্ডি ও বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পাচার করেন। বাকি টাকা তাঁর এক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করেন।

কাজী পাপুল ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শহিদ আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু মহাজোটের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ নোমানকে নির্বাচনে এই আসন থেকে সমর্থন দেওয়া হলে শহিদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীকে নির্বাচন করেন। তবে মাঝপথে এসে নির্বাচন থেকে মোহাম্মদ নোমান সরে দাঁড়ালে স্বতন্ত্রপ্রার্থী মোহাম্মদ শহিদ ইসলামকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থন দেয়। পরবর্তীতে তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন-৪৯ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আগের খবর
কুয়েতে সাংসদ পাপুলের মামলার তদন্তে নাক গলাবে না বাংলাদেশ দূতাবাস
কুয়েতে বাংলাদেশের সাংসদ কাজী পাপুল রিমান্ডে
কুয়েতে মানবপাচারের অভিযোগে সংসদ সদস্য কাজী পাপুল গ্রেপ্তার
কুয়েত থেকে পালিয়েছেন বাংলাদেশি সাংসদ!

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!