কুয়েতের ৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েছিলেন এমপি পাপুল!

মামলায় নতুন চমক

কুয়েতে মানবপাচার এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে আটক বাংলাদেশি সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুলের মামলায় নতুন চমক ও বিবরণ প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে তদন্ত শেষ করতে বাংলাদেশি সাংসদ তার অপর সহযোগী (বাংলাদেশি)সহ আটক রাখার আদেশ দিয়েছে দেশটির পাবলিক প্রসিকিউশন।

আরব টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তে ৭ জন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন অবসর গেছেন এবং অন্যরা টেন্ডার কমিটি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংস্থাসহ ৩ টি সরকারী সংস্থার সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানের পদে কর্মরত। এইসব কর্মকর্তা কাজী পাপুলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ঘুষ এবং উপহার নিয়েছিল ।

মুদ্রাপাচার ও মানবপাচারের অভিযোগে গত ৬ জুন শনিবার রাতে মুশরিফ আবাসিক এলাকা থেকে এমপি পাপুলকে গ্রেপ্তার করে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত সোমবার রিমান্ডের আবেদন করলে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশনের বিচারক তা মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে পাপুলের পক্ষে জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়।

Travelion – Mobile

গত বৃহস্পতিবার পাবলিক প্রসিকিউশন তদন্তের প্রয়োজনে রবিবার পর্যন্ত পাপুলকে রিমান্ড রাখার আদেশ দেয়। মামলায় সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা ওঠে আসায় রবিবার তাকে তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আটক রাখার আদেশ দিয়েছে এই আদালত।

কুয়েতি আদালতে পাপুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন ভুক্তভোগী ১১ জন প্রবাসী বাংলাদেশি। এইসব প্রবাসীকে ভিসাই শুধু নয় আকামা নবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে কুয়েত নিয়ে এসেছিল কাজী পাপুল।

সূত্র আরব টাইমসকে জানিয়েছে, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সাংসদ কাজী পাপুল সম্প্রতি ইউরোপীয় এবং উপসাগরীয় দেশের ব্যাংকে সন্দেহজনক পরিমাণ অর্থ লক্ষ লক্ষ কুয়েতি দিনার স্থানান্তর করেন। পাপুল কুয়েতের বাইরে তাঁর ব্যবসা এবং কার্যক্রম স্থানান্তর করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন যখন তিনি জানতে পেরেছিলেন মানব পাচার ও অর্থ পাচারে তার নাম ওঠে এসেছে।

সূত্র ইঙ্গিত দেয় যে, তদন্তে নাম ওঠে আসার খবর পাওয়ার পর বাংলাদেশি সাংসদ কাজী পাপুল কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে প্রচুর পরিমাণে ঘুষ দেন, যিনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পাপুলকে রক্ষার চেষ্টা করছিলেন।

কুয়েতের ইমিগ্রেসন তদন্ত দল কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া একজন বাংলাদেশি নাগরিক এবং একজন মিশরীয় প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করে। চলমান তদন্তের অংশ হিসাবে সরকারী মন্ত্রণালয় ও সংস্থার যারা নিজেদের কাজের দায়িত্ব লঙ্ঘনের মাধ্যমে বাংলাদেশি সাংসদকে সহায়তায় উপহার বা অর্থ নিয়েছিলেন তাদের খুজে বের করতে এই দুইজন প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে শনিবার কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল-সালেহ তার মন্ত্রণালয় মানবপাচার এবং ভিসা বাণিজ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তদন্তে যার নাম ওঠে আসে তিনি সরকারি কর্মকর্তা বা বিশিষ্ট ব্যক্তি যাই হোন না কেন, তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত কর্তৃপক্ষের সামনে উপস্থিত হবে এবং জড়িত থাকা প্রমাণিত হলে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য তাকে পাবলিক প্রসিকিউশনকে রেফার করা হবে। ”

অন্যদিকে, মানব পাচার এবং অর্থ পাচারের সাথে জড়িত উচ্চ পদমর্যাদার প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন দেশটির সংসদ সদস্যেরা।

আগের খবর : কুয়েতে বাংলাদেশি এমপির সহযোগীদের নাম প্রকাশের দাবি

সাংসদ ইউসুফ আল-ফাদালা, সংসদ সদস্য আবদেল ওয়াহাব আল-বাবতেন ও ডা. আবদুল করিম আল-কান্দারি জড়িত সংসদ সদস্য ও কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশের দাবি জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!