সিলেটের সাবেক মেয়র কামরান করোনায় মারা গেলেন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্ন ইলাহি রাজিউন)।

রোববার (১৪ জুন) দিবাগত রাত তিনটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

কামরানের ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

Travelion – Mobile

গত ৫ জুন সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে কামরানের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়। পরদিন তীব্র জ্বর ও বমিটিংয়ের জন্য নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৭ জুন তাকে ঢাকায় এনে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন :
বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ১৯৭৩ সালে ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র থাকা অবস্থায় দেশের প্রথম পৌর নির্বাচন অংশ নেন। তিনি ৬৪৪টি ভোট পেয়ে সিলেট পৌরসভায় তোপখানা ওয়ার্ডের কমিশনার নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ নির্বাচিত কমিশনার ।এরপর ১৯৭৭ সালে আবার কমিশনার নির্বাচিত হন তিনি।

তারপর কিছু দিনের জন্য দেশের বাইরে ছিলেন কামরান। দেশে এসে ১৯৮৯ সালে আবারও নির্বাচনে অংশ নিলেন। তখনও তিনি একই ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন। তখন তার প্রতীক ছিল আনারস।

সেই সাফল্যের পথ ধরে এভাবে ১৯৯৫ সালে তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। নিজ দল ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি দুইবার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন। কিন্তু ২০১৩ সালে নিজ দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিরোধী দলের প্রার্থীর কাছে পরাজয় মেনে নিতে হলো সাবেক জনপ্রিয় এই মেয়রকে।

ষাটের দশকে ছাত্রলীগে যোগ দেওয়া বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি দীর্ঘদিন সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি পদে ছিলেন।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে কামরানকে বাদ দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয় মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে। আর কামরানকে করা হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। এর আগের মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন কামরান।

সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয় ২০০২ সালের ২৮ জুলাই। বিলুপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে নবগঠিত সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র করা হয়। এর পর ২০০৩ সালের ২০ মার্চের নির্বাচনে তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে তৎকালীন সরকারি দল বিএনপির প্রার্থী এমএ হককে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সিলেটের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন।

২০০৭ সালের ৬ এপ্রিল ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেফতার হন কামরান। এক মাস কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর ২৮ মে তিনি আবার গ্রেফতার হন। ওই মাসে কারান্তরীণ হন তিনি। জেলে থেকেও কামরান বিএনপির এম এ হককে আবারও পরাজিত করে দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।

কারাগারে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট তাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়। নির্বাচনী প্রচারণার জন্য তাকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার কথা শোনা গেলেও পরে তা হয়নি। অবশেষে তার নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত হয় ৫০১ সদস্য বিশিষ্ট নাগরিক পরিষদ। কারাগারে থেকে ২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি আবারও ইতিহাস গড়েন। তখন তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৮৩ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। সে সময় মেয়র কামরান সবমিলিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৩৬ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ ফ ম কামাল ৩২ হাজার ৯৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন।

কিন্তু ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে যান তিনি। এরপর ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনেও আরিফের কাছে হেরে যান কামরান। কিন্তু এরপরও তিনি নগরবাসীর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি। এ নগরের মানুষের সুখে-দুঃখে তিনি পাশে ছিলেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!