ওমানে বাংলাদেশি যুবকের আত্মহত্যার নেপথ্যে

ওমানের রাজধানী মাস্কাটে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বাংলাদেশি এক যুবক। রবিবার বিকালে সিভ বাজারে নিজ বাসার ফ্যানের সাথে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত যুবকরের নাম মোহাম্মদ মনজুরুল আলম(২৫)। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের হাজির পুকুর পাড় নাছির মোহাম্মদ চৌধুরীর বাড়ির আলী আহমদের একমাত্র ছেলে।

ঘটনাস্থল সরজেমিনে গেলে স্থানীয়রা জানায়, সিভ বাজারের মোজাম্মেলে হার্ডওয়ার দোকানে চাকরি করতেন আত্মহননের পথ বেছে নেয়া মনজু। একই উপজেলার উত্তর মাদার্শার বাসিন্দা মো. মোজাম্মেল ভিসার টাকা বাকিতে রেখে মনজুকে দেড় বছর আগে ওমানে নিয়ে আসেন এবং নিজ দোকানে কাজে লাগান।

ওমানে প্রবাসী মন্জুর বন্ধু দিদার বলেন,”মারা যাওয়ার একদিন আগেও তার সাথে কথা হয়েছিল। সে তার কষ্টের কথা বার বার বলতো। এমনও দিনগেছে সকালে নাস্তা করার টাকাও তাকে দিতো না। না খেয়ে অনাহারে চাকরি করেছে। দোকান মালিক বলতো,’ভিসার সব টাকা আর বিমানভাড়া দিলে তারপর যেতে পারবি’। আমার বন্ধুকে মানসিক অত্যচার করে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।” দেশে চলে যেতে চাইলে

Travelion – Mobile

আগের খবর : ওমানে কিছু পেশায় প্রবাসী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ

পরিবারর সচ্ছলতায় বড় আশা করে একমাত্র ছেলেকে প্রবাসে পাঠিয়েছিল মনজুর মা হোসনে আরা। ছেলের এমন পরিনতিতে সরে গেছে তার পায়ের মাটি, শেষ অবলম্বন। মুঠোফোনে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমার ছেলেকে ভোর সকাল ৬ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত দোকানে ডিউটি করাতো। দুপুরে ভাত খেতে সামান্য সময় দিয়ে আবারো দোকানে চলে যেতে হতো। তাকে রাতে থাকার জন্য রুম দিয়েছিল তাদের দোকানের গোডাউনে। ওই গোডাউনে প্রবেশের পর বাইর থেকে তালাবদ্ধ করে দিতো। দোকান আর গোডাউন ছাড়া কখনো বাহিরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ দিতো না।”

মনজুর মা আরও বলেন,”ভিসার টাকা কাটতেছে বলে বলে বেতনও দিতো না। মাঝে মধ্যে অল্প টাকা দিতো। বার বার দেশে চলে আসার জন্য কাঁদতো, আমি বলতাম কোনভাবে দুই বছর ধৈর্য্য ধরে থাক।”

নিহতের একটি অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। যেখানে সে তার এক বন্ধুকে তার কষ্টের কথা বর্ণনা করছিল। এমনকি তার খাবারের টাকাও নেই বলার পরেও দোকানের মালিক তাকে বেতন দিচ্ছে না কলে আক্ষেপের সাথে বলে অডিওটাতে।

এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করার পর লাশ মর্গে নিয়ে যান। সেখানে নমুনা সংগ্রহ করলে করোনা পজিটিভ আসে। ওমান সরকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ী করোনা পজিটিভ মরদেহ আসলে দূতাবাসকে অবহিত করে পরিবারের সম্মতির অপেক্ষা না করে সাথে সাথে দাফন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার আমরাত কবরস্থান প্রশাসনের তত্ত্বাবধান তার লাশ দাফন করা হয়েছে।

আগের খবর : সুলতান কাবুস পেলেন ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে দোকানের মালিক মোজাম্মেলকে পাওয়া যায়নি। দোকানে তার ছেলে মোশারফ রয়েছেন। তিনি মনজুর আত্মহত্যার বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। মোশারফ বলেন, বাবা দেশে গেছেন। মৃত্যুর খবরটি শোনার পর পর ওমানে ফিরে আসছেন।”

অন্য একটি সূত্র জানায়, মোজাম্মেল গতকালই ওমানে আসেন। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। ফলে দোকান মালিকের বক্তব্য তুলে ধরা আর সম্ভব হয়নি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!