উপকূলের আরও কাছে ‘বুলবুল’, আঘাত হানবে রাতেই

বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি এসে গেছে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার দিকে বাঁক নিচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি। শনিবার রাতেই তা আঘাত হানবে স্থলভাগে।

ঘূর্ণিঝড়টির বিস্তার সাগরদ্বীপ থেকে খেপুপাড়ার মধ্যে থাকলেও সুন্দরবন এলাকায় এর আঘাত হানার সম্ভাবনা আছে। এমনটাই জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর। বিজ্ঞানীদের অনুমান, শনিবার রাত ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে সাগরদ্বীপ থেকে বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে আছড়ে পড়বে ‘বুলবুল’।

ইতিমধ্যেই দিঘা এবং সাগরদ্বীপের অনেক কাছে চলেছে বুলবুল। এ কারণে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগও ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Travelion – Mobile

মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর।

‘বুলবুল’ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, দমকলবাহিনীসহ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সকল সংস্থা পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে রয়েছে।

উত্তাল সমুদ্র
উত্তাল সমুদ্র

আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের ঘুর্ণিঝড় অনেকটা জায়গা জুড়ে আঘাত হানে। বুলবুলও অনেকটা জায়গা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়বে। এখনও পর্যন্ত যা গতি প্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে সুন্দরবন এবং তার আশপাশেই বুলবুলের আছড়ে পড়বে।

বুলবুলের গতিপথে পড়ছে সাগরদ্বীপ, বকখালি-সহ সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। হাওয়ার গতি ১২০ কিলোমিটারের আশেপাশে থাকতে পারে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, সমুদ্রে বুলবুলের গতিবেগ বেশি থাকলেও, স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় তার গতি কমবে।

কিন্তু যে ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বুলবুল, তাতে মনে করা হয়েছে স্থলভাগে আছড়ে পড়লেও, গতি হবে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। শেষ মুহূর্তে যদি শক্তি বৃদ্ধি পায়, তা হলে ১৩৫ কিলোমিটার গতিতেও তা পৌঁছে যেতে পারে।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। আর উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

ইতোমধ্যে, সমুদ্রবন্দরগুলোতে রেড এলার্ট জারি করে পণ্য উঠানামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিকেল ৪টা থেকে ১৪ ঘন্টার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথেও চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানবে বলে ওই সময় উপকূলজুড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস।

তিনি দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছেন, “জোয়ার শুরু ৫টায়, পিক টাইম ৯টায়। এসময় উপকূলীয় অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।”

ঝড় মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নিয়েছে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ। উপকূলীয় বিভিন্ন জেলার ১৮ লাখ মানুষকে সন্ধ্যার আগেই ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য বিভাগের ছুটি বাতিল করা হয়েছে

আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ১৩টি উপকূলীয় জেলার স্হানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে (জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মরত সব কর্মকর্তা/কর্মচারীর শনিবার এবং রোববারের ছুটি (সাপ্তাহিক ও সরকারি) বাতিলসহ কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশনা দিয়া আদেশ জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

আগের খবর
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা
‘বুলবুল’ মোকাবেলায় সর্তক ও প্রস্তুত দেশের সব বিমানবন্দর
বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!