চীনে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশ দূতাবাসের বর্ণাঢ্য আয়োজন

বিনম্র শ্রদ্ধা আর অফুরন্ত ভালোবাসায় নানা কর্মসূচীর আয়োজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করেছে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস।

বুধবার সকালে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামান দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচীর প্রথম পর্বের কার্যক্রম শুরু করেন। এরপরে বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবারের সদস্য, বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা।

তারপরে রাষ্ট্রদূত, দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মকর্তাসহ দূতাবাসের নবগঠিত বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং গ্রন্থাগারে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে ফুলের পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পাঠ করা হয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বার্তা। এরপরে, দূতাবাসের কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা সভায় অংশ নেন। আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত সকল প্রকার বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে নিরলস সংগ্রামের জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বাংলাদেশ দূতাবাসের
বাংলাদেশ দূতাবাসের

দ্বিতীয় পর্বে চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার ড. এম নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় “বঙ্গবন্ধু, একটি মহান স্বপ্নদর্শন: স্বাধীনতার স্থপতি ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের” শীর্ষক জন্মশতবার্ষিকীর স্মরণে একটি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামান, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত চাই সি, চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলা বিভাগের ঢাকা অফিসের প্রধান ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দি, বেইজিংয়ে চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলা বিভাগের প্রধান ছাও ইয়ান হুয়া সুবর্ণা, বেইজিং ফরেন স্টাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চাং ছিয়ং ওয়েবিনার আলোচনা সভায় অংশ গ্রহন করেন।

Travelion – Mobile

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, চীনের হেনান প্রদেশের ঝাংঝু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. আশরাফুল আলম, বেইজিং ফুয়াই হাসপাতালের বাংলাদেশি চিকিৎসক ডাঃ মোহাম্মদ মিসবাহুল ফেরদৌস, চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যয়নরত চাইনিজ শিক্ষার্থী আভা সু, অনুপমা ইয়াং এবং ওয়াং চিয়াওইয়াং নদী।

ভবিষ্যৎ দেখার এক গভীর দৃষ্টি ছিলো বঙ্গবন্ধু। অর্ধশত বছর আগেই তিনি দেখতে পেয়েছিলেন প্রযুক্তি, শিল্প উন্নত এক সমৃদ্ধ চীনকে। বন্ধুত্বের জন্য তার হৃদয় ছিলো উন্মুক্ত। জাতির জনককে নিয়ে এমনই নানা বিশ্লেষণ আর পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে তার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দূতাবাসের ওয়েবিনারে।

ওয়েবিনারে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামান বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনের নানাদিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির লক্ষ্য ছিলো শোষিত মানুষ, তিনি ছিলেন অনন্য উচ্চতার এক ক্যারিশম্যাটিক নেতা। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় চীনকে আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত।

ওয়েবিনারে সাবেক চীনা রাষ্ট্রদূত চাই সি বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলেন। তিনি বলেন, “ভবিষ্যত্ দেখতে পেতেন বঙ্গবন্ধু। অর্ধশত বছর আগে চীন ভ্রমণের সময়েই তিনি নির্মোহভাবে বুঝতে পেরেছিলেন চীনা সরকার জনগণের সঙ্গেই আছে”।

চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলা বিভাগের ঢাকা অফিসের প্রধান ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতার কয়েক লাইন আবৃত্তি করেন বক্ততা শুরু করনে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবস্থান করে ঐতিহাসিক এ ক্ষণের স্বাক্ষী হতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন আনন্দি। ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্মদিনের একটি ঘটনা উল্লেখ করেন তিনি। ঐদিন বিদেশি একজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে বঙ্গবন্ধু ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেছিলেন, ‘আমি জন্মদিন পালন করি না, মোমবাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। তাতের নিরাপত্তা নেই। আমি জনগণের একজন। আমার জন্মদিন কী আর মৃত্যুদিন কী?”

‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটির অনুবাদ দলের সদস্য ও বেইজিংয়ে চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলা বিভাগের প্রধান ছাও ইয়ান হুয়া সুবর্ণা বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন আপোষহীন নেতা। তিনি ইতিাহাসের এক মহানায়ক।

বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী, বাংলাদেশ সম্প্রদায়ের সদস্য, চীনের সরকারি কর্মকর্তা, চীনা ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ওয়েবিনারে অংশ নেন।

সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে দূতাবাসের নবগঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ২৫ জন শিশু তিনটি দলে বিভক্ত অংশ নেয় এবং তাদের সবাইকে পুরষ্কার ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়েছিল।

সমাপনী বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!