৪০ বছর আগের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
এয়ার নিউজিল্যান্ডের ফ্লাইট টিই -৯০১ (TE-901)। পৃথিবীর দুর্গমতম, উচ্চতম, শীতলতম, শুষ্কতম ও নির্জনতম মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা দর্শনের একটি নির্ধারিত ফ্লাইট ছিল নিউজিল্যান্ডের জাতীয় বিমানসংস্থাটির, যা ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সালে পর্যন্ত চলেছিল। ফ্লাইটটি প্রতিদিন সকালে অকল্যান্ড বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে কয়েক ঘন্টা সময় ব্যয় করে, ক্রিস্টচর্চ হয়ে সন্ধ্যায় অকল্যান্ডে ফিরে আসে।
১৯৭৯ সালের ২৮ নভেম্বর টিই -৯০১ এর চৌদ্দতম উড়োজাহাজ ম্যাকডোনেল ডগলাস ডিসি -১০-৩০ (রেজিস্ট্রেশন জেডকে-এনজেডপি ) অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের রস দ্বীপে মাউন্ট ইরেবাসে বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৩৭ জন যাত্রী ও ২০ জন ক্রুর সবাই নিহত হয়েছিলেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নিউজিল্যান্ড ছাড়াও আমেরিকা, কানাডা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ছিলেন।
মাউন্ট ইরেবাস বিপর্যয় হিসাবে পরিচিত দুর্ঘটনাটি নিউজিল্যান্ডের মারাত্মক শান্তিকালীন বিপর্যয়, পাশাপাশি এয়ার নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা হিসেবে হিসেবে ইতিহাস হয়।
ওই উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে পাইলটদের দায়ী করা হয়েছিল। তবে এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল দেশটির সাধারণ জনতা। পরে রয়্যাল কমিশন এ দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করে। তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে ওই উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের প্রকৃত কারণ। বিচারপতি পিটার মাহন কিউসির নেতৃত্বে কমিশন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে, দুর্ঘটনার আগের রাতে ওই উড়োজাহাজটির নেভিগেশন–ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল। যা ক্রুদের জানানো হয়নি। এ কারণেই উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়ে।
রয়েল কমিশনের প্রতিবেদনে এয়ার নিউজিল্যান্ডকে “মিথ্যার সমন্বিত স্ত্রােত’ হিসেবে উপস্থাপন করে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং এর ফলে বিমানসংস্থাটির উচ্চ পদে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তবে দুঘর্টনা পেছেন ষড়যন্ত্রের কোন প্রমান পায় নি কমিশন।
৪০ বছর আগের এই উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। বৃহস্পতিবার দেশটির অকল্যান্ড শহরের এক সরকারি ভবনে ওই দুর্ঘটনা স্মরণ অনুষ্ঠানেক্ষমা প্রার্থনা করেন জেসিন্ডা ।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবারের স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বেদনা ও শোকের কারণ ছিল তৎকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিমানসংস্থার পদক্ষেপ। ঘটনাটির ৪০ বছর পর আজকের সরকারের পক্ষ থেকে সরকার মালিকানাধীন ওই এয়ারলাইনসের পদক্ষেপের জন্য ক্ষমা চাওয়ার সময় এসেছে। তবে ওই দুঃখজনক দুর্ঘটনার জন্য পাইলটরা দায়ী ছিলেন না।
ওই ঘটনায় নিউজিল্যান্ডের রয়্যাল কমিশনের করা তদন্ত প্রতিবেদন ঘটনার প্রায় ২০ বছর পর দেশটির পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তখন সেই প্রতিবেদন সরকারের কাছে গৃহীত হয়নি বলে জানান জেসিন্ডা আরডার্ন।
এর আগে ২০০৯ সালে এয়ার নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চায়। বৃহস্পতিবারও সংস্থাটির চেয়ারম্যান থেরেসে ওয়ালশ সেই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ৪০ বছর আগে সংস্থার ব্যর্থতায় যাত্রী ও উড়োজাহাজের কর্মীদের প্রাণ বাঁচানো যায়নি। এ জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তিনি ক্ষমা প্রার্থী।