বিবিসির পর্যবেক্ষণ : জলবায়ু আলোচনায় ৫ প্রভাবশালীর একজন শেখ হাসিনা

চলমান কপ–২৬ জলবায়ু আলোচনা এগিয়ে নিতে প্রভাব রাখছেন এমন পাঁচ প্রভাবশালী আলোচকের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এ তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কপ–২৬ সম্মেলনের সফলতা কিংবা ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করছে প্রভাবশালী এই পাঁচ ব্যক্তির ওপর।

জাতিসংঘের আয়োজনে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় চলছে জলবায়ুবিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলন কপ–২৬। এতে অংশ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ শতাধিক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, মন্ত্রী, সাংসদ, বিজ্ঞানী, পরিবেশবাদীসহ সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন খাতের ৩০ হাজারের বেশি প্রতিনিধি। সম্মেলনস্থলের বাইরে চলছে পরিবেশবাদীদের বিক্ষোভ–প্রতিবাদ। এতে অংশ নিয়েছেন সুইডেনের তরুণ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও কার্বন নিঃসরণের হার সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বিশ্বনেতারা ঐক্যবদ্ধ প্রতিশ্রুতি দিক। তবে সংবাদমাধ্যমের নজর হয়তো বাইডেন কিংবা থুনবার্গের ওপর বেশি রয়েছে। কিন্তু আড়ালে বসে জলবায়ু আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছেন আরও অনেকেই। প্রভাব রাখছেন আলোচ্যসূচিতে।

Travelion – Mobile

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষের মুখপাত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা ৪৮ দেশের জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।

প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াল পরিণাম থেকে বাঁচাতে কমনওয়েলথ এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামকে (সিভিএফ) একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াল পরিণাম থেকে বাঁচাতে কমনওয়েলথ এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামকে (সিভিএফ) একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

তিনি একজন অভিজ্ঞ ও স্পষ্টভাষী রাজনীতিবিদ। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। গত বছরও বাংলাদেশের চার ভাগের এক ভাগ ভূমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। জলবায়ু সম্মেলনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার ভূমিকার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক জেন অ্যালান বলেন, শেখ হাসিনার মতো একজন মানুষ যখন জলবায়ু সম্মেলনে কথা বলেন এবং মানবিকভাবে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনান, তখন বিশ্বনেতাদের জলবায়ু পরিবর্তনের আসল চিত্র সম্পর্কে জানার সুযোগ তৈরি হয়।

শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার মাধ্যমে জলবায়ু সম্মেলনে গরিব, উন্নয়নশীল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো নিজেদের জোরালো কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে পারছে। আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেদের কথাগুলো উচ্চারণ করতে পারছে।

জেন অ্যালান বলেন, অর্থনৈতিক গুরুত্ব ছাপিয়ে এসব দেশের কণ্ঠস্বর বিশ্বদরবারে তুলে ধরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেননা ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে একদিকে এসব দেশের কথা বলার নৈতিক অধিকার রয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের আওতায় গৃহীত যেকোনো সিদ্ধান্তের ভালো কিংবা খারাপ যেকোনো ফলাফল সরাসরি ভোগ করতে হবে এসব দেশকেই। মূলত এ কারণে কপ–২৬–এর আলোচনা প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনা একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

গ্লাসগোতে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন  এবং স্কটল্যান্ডের স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টারজন।
গ্লাসগোতে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং স্কটল্যান্ডের স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টারজন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো গ্লাসগোয় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এসেছে, এমনটাই মন্তব্য করেছেন কপ–২৬–এ অংশ নেওয়া বাংলাদেশি আলোচক কামরুল চৌধুরী। তিনি বলেন, এসব দেশের ১০০ কোটির বেশি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ফাঁদে আটকে পড়েছেন। তাঁরা এ ফাঁদ থেকে বেরোতে চান। তাঁরা চান শিল্পোন্নত ও ধনী দেশগুলো প্যারিস জলবায়ু চুক্তির শর্ত মেনে নিঃসরণ কমিয়ে আনুক ও ক্ষতিপূরণ দিক। ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যগুলোয় বারবার এসব দাবি তুলেছেন।

বিবিসির সংক্ষিপ্ত তালিকায় শেখ হাসিনা ছাড়াও জায়গা পেয়েছেন চীনের অভিজ্ঞ জলবায়ু আলোচক শি জেনহুয়া। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। প্যারিস চুক্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এই দুজনের সরাসরি ভূমিকা ছিল। জন কেরি বর্তমানে জো বাইডেন প্রশাসনের জলবায়ু দূত হিসেবে কাজ করছেন।

গ্লাসগোতে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে  বিশ্ব নারী নেত্রীদের সঙ্গে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গ্লাসগোতে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্ব নারী নেত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বয়সের কারণে অবসর নিলেও তাঁর অভিজ্ঞতা এবং জন কেরির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগাতে চলতি বছরের শুরুতে শি জেনহুয়াকে জলবায়ু আলোচনায় ফিরিয়ে আনে বেইজিং। কপ–২৬–এ সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে চীনের অবস্থান ও নীতি তুলে ধরার পাশাপাশি গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে সোচ্চার চীনা এই আলোচক।

তালিকায় নাম রয়েছে সৌদি আরবের আয়মান শাশলির। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত আরব গ্রুপ অব ক্লাইমেট নেগোসিয়েটরসের চেয়ারম্যান।

আগের খবর :
উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের ওপর প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে প্রবাসীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
ইউরোপে দুই সপ্তাহের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!