বসদের মনোরঞ্জনে কেবিন ক্রু, প্রশ্নবিদ্ধ ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় বিমানসংস্থা

রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা গারুদায় পতিতাবৃত্তির কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি বেশ সরগরম ইন্দোনেশিয়া। তবে এবার পতিতাবৃত্তির অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, তার করা একটি মানহানির মামলা নিয়ে উৎসাহ আরো দানা বেঁধেছে।

অভিযুক্ত ফ্লাইট এটেনডেন্ট (কেবিন ক্রু) সিউইয়ি সিদিপুরওয়ান্তি এ নিয়ে আইনের দারস্থ হলেও মামলার প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের দিন অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। এজন্য কাজ থেকে ছুটি না পাওয়াকে কারণ দেখালেও এ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন ধুম্রজালের।

তার অনুপস্থিতির কারণকে আরো উস্কে দিয়েছেন ডিজিমবক (টুইটার আইডি @digeeembok) নামের অজ্ঞাত ঔ রটনাকারী। কাজের কারণে নয় বরং ভীত থাকায় ইচ্ছে করেই সাক্ষ্য দিতে আসেননি সিউয়ি এমন মন্তব্য করে টুইটারে পোস্ট দেয় সেই রটনাকারী।

Travelion – Mobile

ক্রিসমাস এবং নিউ ইয়ারের কারণে গারুদার কেলেঙ্কারির ঘটনা কিছুটা ধামাচাপা পড়ে গেলেও এই মামলার কারণে আবার তা ওঠে এসেছে আলোচনার টেবিলে। বিমানসংস্থাটির সাবেক এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আরো অনেকের সাথে ঔ কেবিন ক্রুর শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে ডিজিমবকের একটি টুইটার পোস্ট থেকে এই কেলেঙ্কারির সূচনা।

এর আগে থেকেই নানা কেলেঙ্কারিতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় এই বিমানসংস্থার কার্যক্রম। গেল ডিসেম্বরে গারুদার একটি উড়োজাহাজে করে হারলে ডেভিডসনের যন্ত্রাংস পাচারের অভিযোগে বরখাস্ত হন এর প্রধান কর্মকর্তা আরি আকশারা।

বরখাস্ত হওয়া ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা গারুদা ইন্দোনেশিয়ার সিইও আরি আসকারা
বরখাস্ত হওয়া ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা গারুদা ইন্দোনেশিয়ার সিইও আরি আসকারা

এর পরপরই ডিজিমবক নামের ঔ ঘটনা ফাঁসকারী টুইটারে গারুদার কেবিন ক্রুদের বিরুদ্ধে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তুলেন। তার এই সাড়া ফেলে দেয়া টুইটে উল্লেখযোগ্য অভিযোগ তীর ছিল বেশ কিছু কেবিন ক্রুর দিকে, যারা কিনা সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিল।

এরমধ্যে সিউইয়ি উইদি পুরওয়ান্তির ব্যাপারটি বেশি আলোকপাত করেন ঔ টুইটারকারী। ফ্লাইট এটেনডেন্ট সিউইয়ি’র বিরুদ্ধে সাবেক মানব সম্পদ পরিচালক হেরি আখিয়ারের সাথে নিয়মিত অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ আনা হয়। হেরি আখিয়াও গেল ডিসেম্বরে প্রধান কর্মকর্তা আরি আকশারার সাথে যন্ত্রাংশ পাচার কেলেঙ্কারিতে রবখাস্ত হয়েছিলেন।

টুইটে কেবল গারুদারই নয়, সিউইয়ি’র বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু কর্মকর্তার সাথে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলেন ডিজিমবক। এমনকি তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগও তুলে এই অজ্ঞাত ব্যাক্তি।

এ নিয়ে পাল্টা জবাব দিতে গেল ডিসেম্বরে জাকার্তা পুলিশের কাছে মামলা ঠুকেন বসে সিউইয়ি, যদিও বিষয়টি তিনি জনসম্মুখে আনেন গেল এ মাসের শুরুতে। এনিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তার আইনজীবী এলজা সায়ারিয়েফ বলেন, “ফ্লাইট এটেন্ডিং একটি মহান এবং সম্মানের পেশা। তবে এমন ঘটনা পেশাটির জন্য নেতিবাচক যা এর সম্মানকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছে।”


এ মামলা নিয়ে বেশ বেকায়দায় আছে জাকার্তা পুলিশ। কারণ এখনো তারা ডিজিমবক নামের সেই অজ্ঞাত রটনাকারীর কোন আসল নাম-নিশানা বের করতে পারেনি। যদিও এই অজ্ঞাত রহস্যজনক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিউইয়ির মামলায় প্রথম নয়।

গারুদার কেবিন ক্রু ভিপি, রনি একা মিরসার বিরুদ্ধেও এই ডিজিমবক পতিতাবৃত্তিতে সহায়তার অভিযোগ তুলে এর আগেও কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছিল। তাকে “বেশ্যা” সম্বোধন করে ডিজিমবক তার ঔ টুইটে বলেছিল, বিমানসংস্থার কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনে কেবিন ক্রুদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করায় ছিল এই কর্মকর্তার কাজ। তবে এ নিয়ে তার করা মানহানির মামলাটিও খুব একটা এগুয়নি।

রনির বিরুদ্ধে ডিজিমবকের অভিযোগ ছিল গুরুতর। তার টুইট অনুসারে, সংস্থাটির নতুন নিয়োগ পাওয়া কোন কেবিন ক্রু যদি রনির কথামত উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে অসম্মতি জানায় তবে তাদের অলস বসিয়ে রাখা হত এমনকি তাদের প্রণোদনা এবং বোনাসও আটকে দেয়া হত। যদি কোনও কেবিন ক্রু বরখাস্ত হয়, তবে চাকরি ফিরে পেতে তাদের রনির সাথে রাত কাটাতে হত। এ কারণে বিমান সংস্থায় ভেতরে ভেতরে পাইলট ও বন্ধুরা তাকে ‘সরবরাহকারী’ হিসেবে চিনত।

তার বিরুদ্ধে ডিজিমবকের এসব অভিযোগ আরো নিশ্চিত হয় যখন সংস্থাটির এক সাবেক কেবিন ক্রু কম্বোজা (ছদ্মনাম) এক স্থানীয় মিডিয়ায় একই অভিযোগ তুলেন। ম্বোজার অভিযোগ, গারুদায় পতিতাবৃত্তির অভিযোগ খুবই সত্য।

তার ভাষ্য,”২০১০ সালে আমি যখন কেবিন ক্রু হিসেবে গারুদাতে যোগ দিই, তখন থেকেও উর্ধবতন কর্মকর্তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের এসব চর্চা হয়ে আসছে। তবে অতীতে এসব গোপনে সতর্কতার সাথে হলেও, ২০১৮ সালে আরি আকশারা গারুদার প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তা আরো সবার জন্য ওপেন সিক্রেট হয়ে যায়।”

কেবিন ক্রু সিউইয়ি সিদি পুরওয়ান্তি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
কেবিন ক্রু সিউইয়ি সিদি পুরওয়ান্তি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

কম্বোজার এসব গোঁপন তথ্য ফাসের আগে এ নিয়ে মুখ খুলে গারুদার ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ইউনিয়ন। তাদের কাছ থেকেও অভিযোগ উঠে আরি আকশারা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিমানসংস্থাটিতে যৌন নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে। তারা কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে জানায়, উর্ধতন কর্মকর্তারা সুন্দরী কেবিন ক্রুদের অন্যান্যদের চাইতে অধিক সুযোগ সুবিধা ও উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিতের মাধ্যেমে কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। এসব অভিযোগই ডিজিমবকের অভিযোগের ওজন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

এসব অভিযোগ সাবেক গারুদা প্রধানের জন্য ডেকে আনে অশনি সংকেত। এনিয়ে কঠোর অবস্থানে যায় সরকার। রাষ্ট্রীয় মালিকানার প্রতিষ্ঠান বিষয়ক মন্ত্রী এরিক থোরিরকে দায়িত্ব দেয়া হয় আরির যন্ত্রাংস পাচারের ঘটনার সত্য উদঘাটনে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আরি আকশারাসহ গারুদার চার কর্মকর্তাকে বহিস্কার করার ঘোষণা আসে। এনিয়ে এখনো আরি ও গারুদার চার কর্মকর্তার আনুষ্ঠানিক কোন সাজা না হলেও প্রতিষ্ঠানটির ট্যাক্স কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উড়োজাহাজে অবৈধভাবে মালামাল বহনের দায়ে তাদের এক বছর করে সাজা হতে পারে।

দায়িত্ব নেওয়ার চার মাসের মাথায় লোকসানে থাকা গারুদা ইন্দোনেশিয়াকে লাভের মুখ দেখাতে সক্ষম হলেও এ ঘটনার কারণে আরি আকশারার জন্য কারও সহানুভূতি তৈরি হয়নি। উল্টো তাকে বহিস্কার করার জন্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফুল আর চিঠি পাঠানো হয় মন্ত্রী এরিক থোরিরকে।

ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা গারুদা ইন্দোনেশিয়া । ফাইল ছবি (প্রতিবেদনের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়)
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা গারুদা ইন্দোনেশিয়া । ফাইল ছবি (প্রতিবেদনের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়)

এদিকে গারুদার নতুন প্রধান কে হতে পারেন এ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন গুঞ্জন। এ দৌড়ে অনেকের নাম আসলেও সবাই এগিয়ে রাখছেন সাবেক জ্বালানি মন্ত্রী ইগনাসিয়াস জোনানকে। মন্ত্রী পরিষদের যোগদানের আগে ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত কেরাটা আপি এয়ারলাইন্স পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এছাড়াও এ তালিকায় সাবেক নৌ-পথ মন্ত্রী সুসি পুডজিয়াসটুটি ও জাকার্তা বিমানবন্দর অপারেটর আংকাসা পুরার প্রেসিডেন্ট ফাইক ফাহমি রয়েছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!