নির্ভয়া ধর্ষক-খুনিদের ফাঁসি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত

রাত পোহালেই মঙ্গলবার সকালে ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল ভারতের বহুল আলোচিত নির্ভয়া কাণ্ডের খুনিদের। কিন্তু ফের পিছিয়ে গেল নির্ভয়াকাণ্ডের দোষীদের ফাঁসির দিন। ‘পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত’ মৃত্যুদণ্ডে স্থগিতাদেশ দিয়েছে দিল্লির পাটিওয়ালা কোর্ট।

নির্ভয়া কাণ্ডের চার দণ্ডিতদের মধ্যে তিন জনের সমস্ত আইনি বিকল্পই শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল একমাত্র পবন গুপ্ত। যে আজ রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছে।। তবে এখনও তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি রাষ্ট্রপতি ভবন। যদিও একই আর্জি আজ খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্টও।

এদিকে, দিল্লি পাটিয়ালা কোর্টের জারি করা মৃত্যু পরোয়ানা অনুযায়ী, আগামীকাল ভোরেই ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল চার দোষীর। কিন্তু, এত আইনি ‘জটিলতা’র মধ্যেই এবার তাও অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেল। আর এর জেরেই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।

Travelion – Mobile

গত ১৭ জানুয়ারি ১ ফেব্রুয়ারি ফাঁসির জন্য মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত। তবে ৩১ জানুয়ারি সেই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে দায়রা আদালতই। সব দোষী সমস্ত আইনি বিকল্প ব্যবহারের সুযোগ পাননি বলে এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল।

২০১২ সালে নির্ভয়াকাণ্ডে দোষীসাব্যস্ত চার দণ্ডিত মুকেশ সিং, বিনয় শর্মা, অক্ষয় ঠাকুর এবং পবন গুপ্তের মধ্যে পবন বাদে বাকি তিনজনই সমস্ত আইনি বিকল্প শেষ করে ফেলেছিল। ৫ ফেব্রুয়ারি এক শুনানিতে সব দোষীকেই এক সপ্তাহের মধ্যে আইনি বিকল্পের আবেদন করতে বলেছিল।তবে সে সময় কোনও আবেদন করেনি পবন।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে মৃত্যুদণ্ডাদেশের পুনর্বিবেচনার আর্জি করে পবন। সোমবার সেই আর্জি খারিজও করে শীর্ষ আদালত। এরপরই আজ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা জানায় পবন। তার আর্জির পর পরই নিম্ন আদালতে ফাঁসি পিছনোর আর্জি করেন পবনের আইনজীবী। আর পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত এবার স্থগিতাদেশ দিল আদালত।

দিল্লির পাটিওয়ালা কোর্টের নির্দেশে মঙ্গলবার সকাল ছ’টায় তিহাড় জেলে ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল। আইন অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতদের আইনি বিকল্প শেষ হওয়ার পরও ১৪ দিন সময় দিতে হয় প্রস্তুতির জন্য। এই সময়ের মধ্যে দোষীদের পরিবারকে আইনি প্রক্রিয়া বুঝিয়ে অন্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করে জেল কর্তৃপক্ষ।

এক্ষেত্রে তা হলে, ফাঁসি পিছিয়ে ২০ মার্চে হতে পারে। আবার আইনজীবীদের একাংশের মতে, যদি প্রাণভিক্ষা রাষ্ট্রপতি খারিজ করেন, তবে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে ফের যেতে পারে পবন। যা হলে আরও পিছিয়ে যাবে নির্ভয়ার দোষীদের ফাঁসি।

তবে এই সবের মধ্যেও সোমবার বিকেলে ফাঁসির প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেছে জেল কর্তৃপক্ষ। তিহাড় জেলের জল্লাদ পবনকে দিয়ে নকল ফাঁসিও করানো হয়। তবে আপাতত ফাঁসি হচ্ছে না।

একই অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত একাধিক অপরাধীর ফাঁসি একইসঙ্গে দিতে হবে। তবে নানা আইনি ফাঁকফোঁকর খুঁজে বারবার ফাঁসির দিন পিছিয়ে দিচ্ছেন দোষীদের আইনজীবীরা। এর জেরেই দোষীদের

পৃথক মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে সম্প্রতি আবেদন করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। খারিজ হওয়ার পর শীর্ষ আদালতে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় আইনজীবীরা। সেই আবেদনের শুনানিই আগামী ৫ মার্চ হবে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর ভানুমতির নেতৃত্বাধী বিচারপতির বেঞ্চ।

২০১২ সালে দিল্লির নির্ভয়া গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এরমধ্যে তিহাড় জেলের ভিতরেই আত্মহত্যা করে অভিযুক্ত রাম সিংকে। ঘটনায় অভিযুক্ত এক নাবালক তিন বছর সরকারি হোমে কাটানোর পর বর্তমানে মুক্ত। বাকি ৪ দোষীর আগামীকাল সকাল ৬টায় ফাঁসি হওয়ার কথা।
সূত্র : এই সময়

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!