নিউইয়র্কে বেনের ২৫ বছর পূর্তির বর্ণিল উৎসব

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন)-এর ২৫ বছর পূর্তি উৎসব ও পরিবেশ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২২ জুলাই) জ্যামাইকার পিএস ১৩১ মিলনায়তনে দিনব্যাপি আয়োজনে ছিল বর্ণাঢ্য র‌্যালি, প্রবাস প্রজন্মের ছোট্টমণিদের ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রামাণ্য চিত্র, পোষ্টার ও পরিবেশ শিল্পকর্ম প্রদর্শন, সম্মাননা ও ক্রেষ্ট প্রদান, পুঁথি পাঠ, গীতি আলেখ্য, নৃত্যসহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

বেনের নিউইয়র্ক, নিউজার্সী এবং কানেক্টিকাট স্টেট শাখা আয়োজিত উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. রেহমান সোবহান।

Travelion – Mobile

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে উৎসব কমিটির সদস্য সচিব মিনহাজ আহমেদের পরিচালনায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। পরে উপস্থিত সকলের অংশগ্রহণে ঢোলক শফিক মিয়ার ঢোলের তালে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়।

বক্তব্য রাখছেন, খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. রেহমান সোবহান।
বক্তব্য রাখছেন, খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. রেহমান সোবহান।

অনুষ্টানে ড. রেহমান সোবহান বলেন, ‘বাংলাদেশে যাদের হাতে পয়সা আছে, রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে, প্রভাব আছে, তারা পরিবেশ দূষণের জন্যে দায়ী বা চিহ্নিত হলেও সত্যিকার অর্থে তাদের কিছুই হয় না’।

“এ অবস্থায় রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিবর্গকে এই আন্দোলনের সাথে আরো জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে বেন/বাপার আরও কার্যকরী কর্মসূচি নেয়া দরকার”।

সাবেক কেয়ারটেকার সরকারের উপদেষ্টা রেহমান সোবহান বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের দুই মেয়র ভোটের আগে যেসব অঙ্গীকার করেছিলেন তার বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের অফিস যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেগুলোর সাথে ঢাকার মেয়রদের পরিচিত হওয়া দরকার। এ লক্ষে আমি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মেয়রকে নিউইয়র্কে দেখতে চাই। তারা যেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের অভিজ্ঞতার আলোকে রাজধানী ঢাকার পরিবেশ সুরক্ষায় ২/৩ বছরের একটি পরিকল্পনা হাতে নেন। এরপর সেই পরিকল্পনার মেয়াদ ৫-১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

ড. রেহমান সোবহান উল্লেখ করেন, বলবায়ু দূষণ রোধে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সঠিক একটি ধারণা নিয়ে সে আলোকে বাংলাদেশেও কাজ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্বখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গরিব জনগোষ্ঠী। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র। বাংলাদেশে এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনসচেতনতা তৈরি করতে বাপার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

বর্ণাঢ্য র‌্যালি
বর্ণাঢ্য র‌্যালি

সভাপতির বক্তব্যে জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণা টিমের প্রধান এবং বেনের প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে বেনের আন্দোলনের পক্ষে না আনতে পারলে পরিবেশ সুরক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে এই ইস্যুতেই ২০২১ সালের জানুয়ারিতে আমরা বাংলাদেশে একটি সমাবেশ করেছি।

তিনি বলেন, পরিবেশ আন্দোলনকে ব্যাপক জনগণের আন্দোলনে পরিণত করতে বাংলাদেশে আমাদের সহযোগী সংগঠন ‘বাপা’ (বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন)কে সাথে নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনার কাজ শুরু করেছি। এ লক্ষে গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কয়েক হাজার মানুষের সমাগমও ঘটানো হয়।

ড. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, বেনের বয়স ২৫ বছর হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্টসহ কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানী, জাপান, ইউকে, সাউথ কোরিয়া, রাশিয়ার দেশপ্রেমিক প্রবাসীরা সম্পৃক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা করতে আরও ব্যাপক সংখ্যক প্রবাসীকে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে হবে।
অনুষ্ঠানমালায় শিল্পী তাজুল ইমামের পরিকল্পনায় এবং মুক্তাধরের পরিবেশ শিল্পকর্ম পরিত্যক্ত উপাদানের পুনরায় ব্যবহার প্রদর্শন করা হয়।

নজরুল কবীর, নুপুর চৌধুরী এবং উর্বি সাবিনা হাইয়ের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বেনের বৈশ্বিক সমন্বয়কারী ড. মো. খালেকুজ্জামান, জাকির হোসেন, নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের পরিবেশ বিষয়ক প্রতিনিধি ভিকি সেকলো, ডা. আব্দুল বাতেন, হাসান আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেন’র নিউইয়র্ক, নিউজার্সি ও কানেক্টিকাট’র কো অর্ডিনেটর ও উৎসব কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক রানা ফেরদৌস চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে ইউএস কংগ্রেসওম্যান গ্রেসমেংসহ বিভিন্ন অতিথির ভিডিও রেকর্ডকৃত বক্তব্য শুনানো হয়।

রানু ফেরদৌসের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত প্রবাস প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের ‘আমাদের সুন্দর পৃথিবী’ শীর্ষক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন জাহেদ শরীফ ও তাজুল ইমাম। ড. ওবায়েদ উল্লাহ মামুনের ব্যবস্থাপনায় প্রদর্শিত হয় পরিবেশ বিষয়ক পোষ্টার।

অনুষ্ঠানে প্রামাণ্য চিত্রে বেন এর কার্যক্রম তুলে ধরেন ক্যালিফোর্নিয়া কো অর্ডিনেটর দীপেন ভট্টাচার্য।

পরিবেশিত হয় গীতি কাব্য আলেখ্য তুমি নির্মল কর’। রচনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ছিলেন ড. হারুন রশিদ। অংশগ্রহনে ছিলেন লিয়ানা মানহা, দেওয়ান প্রীতি ও ড. হারুন রশিদ।

বেনজীর শিকদারের লেখা ‘পরিবেশ সুরক্ষা’র পুঁথি পাঠে অংশ নেন আনোয়ারুল হক লাভলু।

ড. মো. খালেকুজ্জামানের সঞ্চালনায় বেন লিডারশিপ ফোরাম বিভিন্ন চ্যাপ্টারের রিপোর্ট ও ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা পেশ করা হয়। এতে অংশ নেন ড. নজরুল ইসলাম, দীপেন ভট্টাচার্য, মুহিত রহমান, আহামদ বদরুজ্জামান, ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, রানা ফেরদৌস চৌধুরী, চিটো খন্দকার, উৎপল দত্ত, মোহাম্মাদ ইরফান, ফারুক জামান, হোসাইন আজম।

রানু ফেরদৌসের পরিচালনায় শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। হোসাইন আজম রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।

ড. মো. খালেকুজ্জামানের পরিচালনায় এবং ড. নজরুল ইসলাম ও অধ্যাপক রানা ফেরদৌস চৌধুরীর সহযোগিতায় পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকার জন্য তিনজনকে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন ড. সাইদুজ্জামান চৌধুরী. প্রফেসর এমডি জামান এমডি এবং ফার্মাসিস্ট সৈয়দ টিপু সুলতান।

বাংলাদেশের পরিবেশ উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা পরিবেশ বিষয়ক বিশেষ টক-শো সঞ্চালনায় ছিলেন সাংবাদিক শামীম আল আমিন। অতিথি ছিলেন নিউজার্সির মনমাউথ ইউনিভার্সিটি ডিপার্টমেন্ট অব সোশ্যাল ওয়ার্ক এর অধ্যাপক গোলাম এম মাতবর, সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ এবং প্রযুক্তিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আয়েশা দেওয়ান।

উদ্বোধনী নাচ এসো শ্যামল সুন্দর বাংলাদেশ সহ বেশ ক’টি নৃত্য পরিবেশন করে একাডেমী অফ ফাইন আর্টস (বাফা)। বেন সাউদার্ন ইউএসএ’র পরিবেশনা গভীর অসুখে পৃথিবী পরিবেশনায় ছিলেন উৎপল দত্ত, কাকলি বিশ্বাস ও মুরশেদুল।

শিরিন বকুল, গোপন শাহা, মিনহাজ আহমেদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় কাব্যনাট্য ডাক দিয়ে যাই। সবশেষে প্রখ্যাত বাউল কালা মিয়ার পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় লোক সঙ্গীত। ২৫ বছর পূর্তি উৎসব উপলক্ষে রাজিয়া নাজমীর সম্পাদনায় ‘পরিবেশ সংবিৎ’ নামে চমৎকার একটি স্মারক সংকলন প্রকাশিত হয়।

অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!