নালায় ক্ষতবিক্ষত, অর্ধনগ্ন পড়ে ছিল যুবক আফতাবের দেহটা

নূরপুর থেকে দিল্লির শিব বিহারে আসাটাই কাল হয়েছিল আফতাবের। চাপা কান্নার মাঝে অস্ফুটে এটাই বলে চলেছিলেন আফতাবের বাবা মোহাম্মদ উমর। শিব বিহারে তখন হিংসার দামামা বেজেছে। অশান্তির আগুনে রাজপথে শুধুই মৃত্যুর আর্তনাদ। তারই মাঝে অসহায় বন্দি হয়ে পড়ে সদ্য একুশ পেরনো আফতাব।

টানা ছ’দিন ধরে ছেলের কোনও খোঁজ পাননি বাবা। খারাপ কিছুর আশঙ্কায় গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড চষে ফেলেছিলেন দাদা ফিরোজ খান। অবশেষে ছেলের খোঁজ মেলে। কারওয়াল নগরের ঘিঞ্জি কলোনির একটি নর্দমায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকা ক্ষতবিক্ষত, অর্ধনগ্ন দেহটা দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ উমরের। সেই দেহে তখনও প্রাণের ক্ষীণ আশা ছিল।

চাঁদবাগ সংলগ্ন ভাগীরথী বিহারের খালে যে অবস্থায় দিল্লির গোয়েন্দা অফিসারের ক্ষতবিক্ষত দেহটা পড়েছিল, তার সঙ্গে অনেকটাই মিল ছিল আফতাবেরও। সেই অর্ধনগ্ন দেহ, চামড়া ফেটে রক্ত কালশিটে পড়ে গেছে। সারা শরীরে কোপানোর দাগ। কিন্তু প্রাণটুকু ধরে রাখতে পেরেছিল আফতাব।

Travelion – Mobile

রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে ডাক্তাররা বলেছিলেন, বাঁচার সম্ভাবনা কম, কারণ শ্বাসের গতি স্থির হয়ে এসেছে। রক্তক্ষরণ সাঙ্ঘাতিক। নির্মমভাবে কোপানো হয়েছে শরীরটা। তাও বাঁচার লড়াই চালাচ্ছে ছেলেটা।

‘‘মনে হয়েছিল খারাপ কিছু ঘটেছে। তেগ বাহাদুর হাসপাতালে ওকে না দেখে গোটা উত্তর-পূর্ব দিল্লি চষে ফেলি। কারাওয়াল নগরে যেখানে ওর যাওয়ার কথা ছিল সেখানেই একটি ড্রেনে ওর দেহ পড়েছিল। প্রথমে চিনতে পারিনি, এত বীভৎসভাবে কোনও মানুষের উপর নির্যাতন চালানো হতে পারে ধারণাও ছিল না’’ বলেছেন আফতাবের দাদা ফিরোজ খান।

ভাই বাড়ি ফিরে না আসায় পুলিশে নিখোঁজ ডায়রি করেছিলেন। পুলিশের সঙ্গে তল্লাশি অভিযানে ছিলেন তিনিও। অন্য দুই ভাই ফুরকান ও কাদির তখন হাসপাতালগুলির চক্কর কাটছিলেন। কাদির বলেছেন, ‘‘দেহ উদ্ধারের পরে আমরা তিনভাই ওকে চিনতে পারিনি প্রথমে। সারা শরীর, মুখে ছিল দগদগে ক্ষত। বাঁ গালের উপর একটি আঁচিল দেখে মনে হয়। পরে ওর পরনের হলুদ জ্যাকেটটা খুঁজে পাওয়া যায়।’’

নূরপুরে চোট্ট মুদির দোকান আছে বাবা উমরের। চার ছেলে নিয়ে সুখের সংসার। পড়াশোনার পাশাপাশি শিব বিহারে বন্ধুদের সঙ্গে একটা ব্যবসা খুলেছিল আফতাব। সেই জন্যই তাকে নিয়মিত যাতায়াত করতে হত।

উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসার আগুন জ্বলে ওঠার পরে উমর বারণ করেছিলেন তাকে শিব বিহারে না যেতে। কিন্তু শোনেনি আফতাব। সকালে গিয়ে বিকেলেই ফিরে আসার কথা ছিল তার। কিন্তু বাড়ি ফিরে আসা আর হল না আফতাবের।
দি ওয়ালের প্রতিবেদন

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!