জার্মানিতে ক্ষমতায় বসছে ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বে নতুন জোট

প্রায় দুই মাস ধরে আলোচনার পর ওলাফ শলৎসের দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি) অন্য দুই দল ফ্রি ডেমোক্রেটিক (এফডিপি) ও গ্রিনস দলের সঙ্গে জোট গড়ার জন্য চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। বুধবার রাজধানী বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’-এর তিন শরিক দলের শীর্ষ নেতারা ১৭৭ পাতার কোয়ালিশন চুক্তি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন৷ চুক্তিতে তিন দল সবুজ প্রযুক্তি এবং ডিজিটালাইজেশনে বিনিয়োগকে ত্বরান্বিত করার কথা বলেছেন।

এই চুক্তির মধ্য দিয়ে জার্মানিতে প্রথমবারের মতো এসপিডি, এফডিপি ও গ্রিনসের মধ্যে জোট হতে যাচ্ছে। সে সঙ্গে ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল চলে যাবেদল ক্ষমতার বাইরে, অবসান ঘটবে ম্যার্কেল বর্ণাঢ্য স্বর্ণযুগের ৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের অনেক বছরের জোটসঙ্গী ছিল শলৎসের দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মাসে এই জোট সবকিছু ঠিকঠাক করে সরকার গঠন ও শপথ নেবে। ডয়েচ ভেল জানাচ্ছে, তিন দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোয়ালিশন চুক্তির অনুমোদন করতে হবে৷ তারপর মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করে ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বে জার্মানির আগামী সরকার কার্যভার গ্রহণ করতে পারবে৷ সম্ভবত ৬ই ডিসেম্বর ফেডারেল জার্মানির নবম চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ নেবেন তিনি৷

Travelion – Mobile

সংবাদ সম্মেলনে ওলাফ শলৎস বলেছেন, ‘আমরা আরও অগ্রগতির সাহস করতে চাই। জার্মানিকে এগিয়ে রাখতে আমরা ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করব।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শলৎস বলেন, ১৯২৪ সালে বার্লিনের পটসডামার প্লাৎস এলাকায় যখন প্রথম ট্রাফিক লাইট বসানো হয়েছিল, অনেকে তখন সেটির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন৷ আজ নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক দিশা দেখানোর ক্ষেত্রে ট্রাফিক লাইট অপরিহার্য হয়ে উঠেছে৷

ওলাফ শলৎসকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল ছবি: রয়টার্স
ওলাফ শলৎসকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল ছবি: রয়টার্স

চ্যান্সেলর হিসেবে তিনি ‘ট্রাফিক লাইট’ জোটের মাধ্যমে জার্মানিতে একই রকম যুগান্তকারী ভূমিকা পালনের আশা প্রকাশ করেন৷

আঙ্গেলা ম্যার্কেলের হাত ধরে জার্মানিতে আধিপত্য গড়ে তুলেছিল মধ্য ডানপন্থী দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (এসডিইউ)। দেড় যুগের সেই আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে গত সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের পর দেশটির সবচেয়ে পুরোনো দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এসপিডি) সামনে নিয়ে আসেন ওলাফ শলৎস।

আরও পড়েত পারেন
প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়ার পরপরই পদত্যাগ
তুরস্ক-আরব আমিরাত সর্ম্পকের ‘নতুন যুগের শুরু’
লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার ব্যবস্থা

অবশ্য ম্যার্কেল যে কাজ করে গেছেন, তা পূরণ করতে অনেক কিছু করতে হবে শলৎসের সরকারকে। জার্মানি ও ইউরোপের অনেক বড় সমস্যার সময় হাল ধরেছেন ম্যার্কেল। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে কর্তৃত্ববাদ বেড়ে যাওয়ার মুখে উদার গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন ছিলেন তিনি। তবে ম্যার্কেলের সমালোচকেরা বলে থাকেন, তিনি সমস্যার সমাধান করার পরিবর্তে তা কোনোরকম অন্য ব্যবস্থা করতেন। তাঁর উত্তরাধিকারীকে অনেক দিক থেকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জার্মানিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এই সরকারকে দ্রুত কঠোর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। মৃতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে৷ চতুর্থ ঢেউ আঘাত সংক্রমণের হার, দৈনিক মৃতের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ৷

১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলরের ক্ষমতায় থাকা আঙ্গেলা ম্যার্কেল। ছবি : সংগৃহীত
১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলরের ক্ষমতায় থাকা আঙ্গেলা ম্যার্কেল। ছবি : সংগৃহীত

জার্মানির নতুন মন্ত্রিসভার তালিকা চূড়ান্ত না হলেও সমান সংখ্যক নারী ও পুরুষ সদস্যদের স্থান দিতে চান শলৎস৷ সবুজ দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী আনালেনা বেয়ারকক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দলের নেতা রোব্যার্ট হাবেক অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলর হতে পারেন৷ এফডিপি দলের শীর্ষ নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার অর্থমন্ত্রী হবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷

মহামারি সংকটের সময় ম্যার্কেলের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালনকালে ওলাফ শলৎস নিজেকে অবিচলিত রাখার জন্য জার্মানিতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন । এ ছাড়াও কিছুদিন আগেই জার্মানির পূর্বাঞ্চলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় দুর্গতদের ত্রাণ ও জরুরি সাহায্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো বিতরণ হয়েছিল শলৎসের হাত দিয়েই। করোনার সময়ও একই কাজ করে গেছেন তিনি।

শলৎসের জন্ম জার্মানির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য লোয়ার স্যাক্সোনিতে। তাঁর বেড়ে ওঠা জার্মানির অন্যতম ধনী শহর হামবুর্গে। পরবর্তী সময়ে হামবুর্গের মেয়রও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। রাজ্যের রাজনীতি থেকেই তিনি জাতীয় রাজনীতিতে উঠে আসেন। শলৎস পরবর্তী সময়ে ম্যার্কেলের প্রথম মন্ত্রিসভায় শ্রম ও সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

৬৩ বছর বয়সী শলৎস রাজনীতিক হিসেবে মৃদুভাষী। আবেগঘন বক্তব্য দিতে দেখা যায় না তাঁকে। এ কারণে জার্মানিতে অনেকেই তাঁকে ‘শলৎসমাত’ বলেন। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, শলৎসের এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই হয়তো ভোটাররা তাঁকে ভোট দিতে উৎসাহী হয়েছেন।

শলৎস ভিন্ন দলের নেতা হয়েও এসডিইউ নেতৃত্বাধীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সরকারপ্রধান হিসেবে ম্যার্কেলের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!