চট্টগ্রাম-মদিনা রুটে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালু

বিমান প্রতিমন্ত্রীর প্রত্যাশা চট্টগ্রামবাসীর ভ্রমণ সহজ ও আরামদায়ক হবে

চট্টগ্রাম: পবিত্র নগরী মদিনায় যাতায়াতকারী চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হল। চালু হল চট্টগ্রাম-মদিনা-চট্টগ্রাম বিমান বাংলাদেশের সরাসরি ফ্লাইট। এ ফলে ঢাকা কেন্দ্রিক যাতায়াতের চরম ভোগান্তি থেকে মুক্ত হয়ে যাতায়াত সহজ ও সাশ্রয়ী হবে এখানকার হজযাত্রী আর মদিনা প্রবাসীদের।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ফ্লাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

দুপুর ১.১৫ মিনিটে ২৬৫ জন যাত্রী নিয়ে উদ্বোধনের ফ্লাইট বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়। বিজি-১৩৭ ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় বিকেল ৫.৩০ মিনিটে মদিনার প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে এবং সেখান স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭.১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম দিকে আবার রওনা দিয়ে শুক্রবার ভোর ৪.২৫ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছাবে।

Travelion – Mobile

সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার এই টাইম শিডিউলে চট্টগ্রাম-মদিনা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করবে বিমান বাংলাদেশ। পরবর্তীতে যাত্রী বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ফ্লাইটও বাড়ানো হবে বলে বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

বিমানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মদিনা ফ্লাইট উদ্বোধন উপলক্ষ্যে উভয় রুটের যাত্রীদের জন্য ১৫ শতাংশ হ্রাসকৃত মূল্যে টিকেট বিক্রি করছে। বিমানের সকল সেলস সেন্টার, ট্রাভেল এজেন্ট, অনলাইনে বিমানের ওয়েব সাইট এবং বিমানের কল সেন্টার থেকে টিকেট ক্রয় করা যাবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। চট্টগ্রামের লোকজন আরও বেশি ধর্মপ্রাণ। তারা হজ, ওমরা ও নবীজীর রওজা জেয়ারতে যান। এছাড়া ব্যবসা ও চাকরি নিয়ে এ অঞ্চলের অনেক মানুষ সেখানে প্রবাসী। সবারই সুবিধার্থে চট্টগ্রাম-মদিনা ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। আশা করি তাদের ভ্রমণ সহজ, আরামদায়ক ও ভোগান্তিমুক্ত হবে।’

চট্টগ্রাম-মদিনা-চট্টগ্রাম রুটে সরাসরি প্রথম ফ্লাইট ( বিজি-১৩৭)
চট্টগ্রাম-মদিনা-চট্টগ্রাম রুটে সরাসরি প্রথম ফ্লাইট

বিমান বাংলাদেশের বহরে শতাধিক উড়োজাহাজ যুক্ত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‌‌’বিমান বাংলাদেশ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে সব সময় উদ্বেগ দেখছি। আমি এটি পজিটিভলি নিয়েছে। এটি চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ার আমার জন্য। যে জাতি যুদ্ধ জয় করতে পারে তাদের পক্ষে বিমানকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা বিমানকে নাড়া দিতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী বিমানকে ভালোবাসেন।’

এভিয়েশন খাতে সরকারের বিভিন্ন যুগান্তকারী উদ্যাগের বিবরণ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন,’সৈয়দপুরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছে। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। নভেম্বর থেকে শাহজালালে থার্ড টার্মিনালের কাজ শুরু হবে। বিমান যাতে মাথা উঁচু করে চলে সেজন্য আরও ৯ সিরিজের দুইটি ড্রিম লাইনার আসছে। এপ্রিল-জুনে ২৭৩ কোটি টাকা লাভ করেছি। জানুয়ারি থেকে বিমানবন্দরের চার্জ, বিপিসির পাওনা পরিশোধ করে আসছি।’

তিনি আরও বলেন,’মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয়সহ বিভিন্ন বিমানসংস্থা আসতে উদগ্রিব। আমাদের হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করছি। চট্টগ্রাম থেকে পূর্বমুখী ফ্লাইট বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম-মদিনা-চট্টগ্রাম রুটে ফ্লাইট উদ্বোধন করেন বিমান পরিবহন ও পর্যটন
চট্টগ্রাম-মদিনা-চট্টগ্রাম রুটে ফ্লাইট উদ্বোধন করেন বিমান পরিবহন ও পর্যটন

বিশেষ অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, “চট্টগ্রাম অঞ্চলের বহুলোক মক্কা-মদিনায় বসবাস করেন। এটা অনেক দিনের দাবি ছিল। এটা শুধু চট্টগ্রামবাসীর আশা নয়, আর্থ সামাজিক বিষয়ও জড়িত।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রসঙ্গ টেনে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এই বিমানবন্দর ব্যস্ত হয়ে উঠছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কানেকটিভি ছাড়াও অনেক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল করছে এই বিমানবন্দর দিয়ে।
অর্থনৈতিক ও পর্যটনের বিষয় মাথায় রেখে বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন হচ্ছে শাহ আমানত বিমানবন্দর। সম্প্রসারণ ও রানওয়ের উন্নয়ন সহসা করা হবে। আরও দুটি বোর্ডিং ব্রিজ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘৪৬ বছর আগে যাত্রা শুরু করে বিমান বাংলাদেশ। আমাদের নিজস্ব ১০টি আধুনিক উড়োজাহাজ আছে। ডিসেম্বরে যুক্ত হচ্ছে আরও দুইটি নতুন ড্রিমলাইনার। এর বাইরে ভাড়ায় নেওয়া ৬টি উড়োজাহাজ ।’

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইট সরাসরি যাচ্ছে। ঢাকা থেকে চেন্নাই, কলম্বো, গুয়াংজু ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। তখন নতুন নতুন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করবে।

অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সরওয়ার ই জামান, বিমান বাংলাদেশের উপ মহাব্যবস্থাপক (পিআর) তাহেরা খোন্দকার এবং বিমানের চট্টগ্রাম জেলা ব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হাসান ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক আরিফুজ্জামান খান।

আগের খবর
চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট— আজ কুয়েত ও কাল মদিনা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!