কুয়েতে দেশে ফিরতে ক্যাম্পে থাকা সাড়ে ৪ হাজার বাংলাদেশির আকুতি

“আজ প্রথম রোজায় এক প্যাকেট চিপস আর একটি জুস দিয়ে সেহরী খেয়েছি, রোজা ভেঙ্গেছি শুধুই পানি দিয়ে”- এমন নির্মম কষ্টের কথা শোনালেন কুয়েতে সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশ ফেরার অপেক্ষায় ক্যাম্পে থাকা অভিবাসী বাংলাদেশিরা।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই কুয়েত সরকার প্রায় দুই বছর পর অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছে। ১ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ক্ষমার আওতায় অবৈধ অভিবাসীরা ছাড়পত্র ও জরিমানা ছাড়াই সে দেশ ছাড়তে পারবেন। যারা এ সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে নিজ দেশে চলে যাবেন, তাদের উড়োজাহাজের টিকিট ও যাবতীয় খরচ বহন করবে কুয়েত সরকার।

বাংলাদেশিদের সাধারণ ক্ষমার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রথমে সময় বেধে দেয়া হয়েছিল ৫ দিন, ১১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। পরে সাধারণ ক্ষমার প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য সময় বাড়ানো হয় ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এরই মধ্যে ‘সাধারণ ক্ষমা’-এর প্রক্রিয়া শেষে বর্তমানে কুয়েত সরকারের অধীনস্থ একাধিক ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশি অবস্থান করছেন।

Travelion – Mobile

বিশ্বস্ত সূত্রে শোনা গিয়েছিল, ১৪ই এপ্রিলের পরে যেকোনো দিন থেকে কুয়েত সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো শুরু করবে। কিন্তু শুক্রবার (২৪শে এপ্রিল) পর্যন্ত একাধিক ক্যাম্পে থাকা বাংলাদেশিদের কাউকেই দেশে পাঠানো হয়নি। এমনকি কবে থেকে ফ্লাইট শুরু হবে তাও ঘোষণা করা হয়নি।

জানা গেছে, কুয়েত সরকার নিজস্ব উড়োজাহাজে এসব বাংলাদেশিদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নিলেও বাংলাদেশ সরকার থেকে অনুমতি না পাওয়ায় তা বিলম্বিত হচ্ছে। করোনাভাইরাস প্রাদূর্ভাব প্রতিরোধে বাংলাদেশে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় এবং বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় নিতেই বাংলাদেশ সময় নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

YouTube video

ফলে দেশটির একাধিক ক্যাম্পে থাকা সাধারণ ক্ষমায় দেশে যেতে অপেক্ষারত বাংলাদেশিরা একপ্রকার মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। রোজা শুরু হওয়ায় তাদের দূর্ভোগ আর চরমে ওঠেছে ।

ক্যাম্পে থাকা বাংলাদেশিরা ভিডিও বার্তা অভিযােগ করেন, তারা মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। থাকার পরিবেশ মোটামুটি ভালো হলেও, খাবার ঠিকমতো পাচ্ছেন না। তাই তারা দ্রুত দেশে ফিরতে চান, আর এজন্য বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন ক্যাম্পে থাকা বাংলাদেশিরা।

করোনাভাইরাস প্রাদূর্ভাব পরিস্থিতিতে কুয়েত সরকার দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি প্রবাসীদের সুরক্ষার জন্য সম্ভাব্য সবধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও হঠাৎ উদ্ভূত এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বেগ পেতে হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় ক্যাম্পগুলোর ব্যবস্থাপনায় কিছুটা সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

সাধারণ ক্ষমায় বাংলাদেশিরাই শুধু নয় ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, মিশরীয়সহ অনেকগুলো দেশের অবৈধ অভিবাসীদের অসংখ্য ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। ভারত আগামী ৫ মে থেকে তাদের নাগরিক দেশে ফেরত পাঠানোর ফ্লাইট শুরু অনুমতি দিয়েছে কুয়েত সরকারকে।

কুয়েত দূতাবাসের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে প্রায় ২০ হাজার অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে আট হাজার বাংলাদেশি কুয়েতে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছিলেন। এবছর সাধারণ ক্ষমার সময়সীমা ও প্রক্রিয়া গত বছরের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন, বৈধ হওয়ার সুযোগ একেবারেই রাখা হয়নি।

আরব টাইমস জানিয়েছে, সংখ্যার দিক দিয়ে অবৈধ অভিবাসী এখন ১ লাখ ৬৭ হাজার হলেও চলমান করোনা সংকটে দেশটির অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে এ তালিকায় আরো আড়াই লাখ শ্রমিক যুক্ত হতে পারে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!