আবুধাবি রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বাতিল নিয়ে প্রশ্ন

ঢাকা-আবুধাবি রুটে বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করছে; চাকরি ভিসা নিয়ে বাংলাদেশি যাত্রীরাও সেই ফ্লাইটে নিশ্চিন্তে আবুধাবি পৌঁছছেন। অথচ বাংলাদেশ বিমান বলছে, চাকরি ভিসায় যাত্রীদের আবুধাবি কর্তৃপক্ষ গ্রহন করছে না; এজন্য আবুধাবি রুটে সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে ঢাকা-আবুধাবি রুটে বিমান বিমান সংস্থাগুলো চাকরি ভিসা নিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে পারলেও বাংলাদেশ বিমান কেন পারছে না?

বর্তমানে ঢাকা-আবুধাবি রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে শারজাহভিত্তিক বিমান সংস্থা এয়ার এরাবিয়া। আর ঢাকা-দুবাই রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে এমিরেটস এয়ারলাইনস ও ফ্লাই দুবাই। ওই তিনটি বিমান সংস্থা বাংলাদেশ থেকে চাকরি ভিসাসহ সব ধরনের যাত্রী পরিবহন করলেও আবুধাবি বিমানবন্দর থেকে যাত্রী ফেরত আসার কোন প্রমান মেলেনি। এই অবস্থায় আবুধাবি রুটের সব ফ্লাইট বন্ধের বাংলাদেশ বিমানের নির্দেশনা আদৌ সত্য কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ বিমানেরই এক কর্মকর্তা বলেন, আমার এক ভাইপো বিমানের টিকেট না পেয়ে এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইটে সরাসরি আবুধাবি গিয়েছেন; এখন আবুধাবিতে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি কিন্তু কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার পর আমি নিজেই বিব্রত হয়েছি।

Travelion – Mobile

তিনটি বিদেশি বিমান সংস্থার চার সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে পৃথকভাবে প্রতিনিধি কথা বলেছেন। গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে গেলে তাদের বিদেশি কেন্দ্রীয় অফিসের অনুমতি লাগবে এজন্য তারা আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি। তবে আলাপে তারা সবাই নিশ্চিত করেছেন, আরব আমিরাত সরকারের যেকোন বৈধ ভিসা থাকা, কর্মস্থলের পক্ষ থেকে গ্রীণ সিগন্যাল সনদ থাকার পর আমরা প্রত্যেক যাত্রীর বোর্ডিং পাস দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোন প্রবাসী বাংলাদেশি যাত্রী আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ কোন বিমানবন্দর থেকেই ফেরত আসেনি।

ফ্লাই দুবাই ও এয়ার এরাবিয়ার একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে আবুধাবি বিমানবন্দর থেকে যাত্রী ফেরত আসার পর আমরাও কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলাম। ফ্লাইট যাওয়ার আগে আমরা সেখানকার বিমানবন্দর এবং আমাদের বিমান সংস্থার কেন্দ্রীয় অফিসে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছিলাম। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে সংশ্লিষ্ট সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোন নির্দেশনা ছিল না। পরে যাত্রী ফেরত না আসার পর বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হলাম।

এমিরেটস এয়ারলাইনসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলছেন, আবুধাবি রুটে আমাদের সরাসরি ফ্লাইট নেই। ঢাকা- দুবাই রুটে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট চলছে এখন। আমাদের ফ্লাইটে শুধু দুবাই নয়; টিকেট সংকট থাকায় আবুধাবি, রাস আল খাইমা ও আল আইনের কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিরাও চাকরি ভিসায় ভ্রমন করেছেন। দুবাই থেকে তারা সড়কপথে কর্মস্থলে গেছেন কিন্তু তারাও তো নির্বিঘেœ পৌঁছেছেন। যাত্রী ফেরত আসার কোন তথ্য নেই-নির্দেশনাও নেই। ওটা বিমানের নিজস্ব বিষয় হতে পারে।

গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিমান প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এমপ্লয়মেন্ট বা চাকরি ভিসা ধারী সম্মানিত যাত্রীদের বর্তমানে আবুধাবি কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করছেন না বিধায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃক আপাতত এমপ্লয়মেন্ট ভিসাধারী আবুধাবিগামী সম্মানিত যাত্রীদের পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না। একই কারণে আপাতত আবুধাবি থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসতে আগ্রহী যাত্রীদের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ৩১ শে আগস্ট পর্যন্ত সপ্তাহে ছয়টির পরিবর্তে দুইটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। ভবিষ্যতে আবুধাবি কর্তৃপক্ষ এমপ্লয়মেন্ট ভিসাধারীদের গ্রহণে সম্মত হলে বিমান পুণরায় যাত্রী পরিবহন শুরু করবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিমানের উপ মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, ‘ঢাকা-আবুধাবি রুটে ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তবে তবে আবুধাবি থেকে ঢাকায় যাত্রী ফেরত আসার জন্য সপ্তাহে ৬টির পরিবর্তে দুটি ফ্লাইট পরিচালিত হবে।’

নতুন এই সিদ্ধান্তে আবুধাবি যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা বিপুল প্রবাসী বাংলাদেশি চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন; যারা গত সাড়ে চারমাস কভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশে আটকা পড়েছিলেন। প্রথমত ফিরতি টিকেট নিয়ে তাদের চরম ভোগান্তি ছিল; টিকেটের তিনগুন বাড়তি দাম নিয়েও ছিল ব্যাপক ক্ষোভ। এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফ্লাইট বাতিলের ফলে আটকে পড়া প্রবাসীরা চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।

জানতে চাইলে গালফ ট্রাভেলসের কর্ণধার শাহ আলম বলেন, ‘বিদেশি তিনটি বিমান সংস্থায় আবুধাবির যাত্রীরা চাকরি ভিসা নিয়ে আবুধাবি যেতে পারলে বাংলাদেশ বিমানের যাত্রীরা কেন আবুধাবি যেতে পারলো না বা তাদের ফেরত পাঠানো হলো তা আমার বোধগম্য নয়। এয়ার এরাবিয়া, ফ­াই দুবাই এবং এমিরেটসের ফ্লাইটে আবুধাবি যাত্রীরা চাকরি ভিসায় নির্বিঘেœ যেতে পারছেন বলে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থাগুলো আমাদের বলেছে। এখন মনে হচ্ছে সমস্যাটা বাংলাদেশ বিমানের। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বা সরকারের নয়।’

ট্রাভেল এজেন্টরা বলছেন, কভিড-১৯ মহামারির আগে ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েছেন অন্তত ৪০ হাজার প্রবাসী। নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে প্রবেশ করতে নির্ধারিত দামের চারগুন পর্যন্ত বাড়তি দাম দিয়ে টিকেট কিনেছেন প্রবাসীরা। এই কঠিন অবস্থার মধ্যেই আবুধাবি রুটে ফ্লাইট বন্ধের নির্দেশনা আসায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন প্রবাসীরা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!