আমিরাতে প্রাক-ইসলাম যুগের খ্রিস্টান মঠের সন্ধান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সিনিয়াহ দ্বীপে প্রাচীন একটি খ্রিস্টান মঠ আবিষ্কৃত হয়েছে। আমিরাতে পাওয়া দ্বিতীয় এ মঠটি প্রায় এক হাজার ৪০০ বছরের প্রচাীন এবং খুব সম্ভবত আরব দেশগুলিতে ইসলাম ধর্ম প্রসারের আগে নির্মিত হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আমিরাতের সংস্কৃতি ও যুব মন্ত্রী নওরা বিনত মোহাম্মদ আল-কাবি এবং উম্ম আল-কুওয়াইনের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান, আমিরাতের শাসকের ছেলে শেখ মজিদ বিন সৌদ আল মুল্লা মঠটি পরিদর্শন করেন।

পারস্য উপসাগরের উপকূল বরাবর দুবাই থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটারউত্তর-পূর্বে আমিরাতে সিনিয়াহ দ্বীপটি অবস্থিত। সিনিয়াহ -এর নামের অর্থ হল ‘ফ্ল্যাশিং লাইট’, সম্ভবত তপ্ত সূর্যের প্রভাবের কারণ এই নাম। বালির স্তূপের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়ে মরুভূমিতে।

Travelion – Mobile

আমিরাত প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

দ্বীপটি উম্ম আল-কুওয়াইনের খোর আল-বেইদা জলাভূমিকে রক্ষা করে। জলাভূমির প্রাথমিক জীবনের প্রমাণটি নিওলিথিক যুগের। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, অন্তত ১০ হাজার বছর ধরে এই এলাকায় মানুষের বসবাস ছিল।

সিনিয়াহ দ্বীপের উত্তর-পূর্ব দিকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মঠটি খুঁজে পেয়েছেন। ৫৩৪ এবং ৬৫৬ সালের মধ্যে মঠের ভিত্তিতারিখে নমুনার কার্বন ডেটিং করা হয়েছে।

সিনিয়াহ দ্বীপের মঠটি পারস্য উপসাগরের তীরে প্রাথমিক খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে নতুন দিশা দেখাল৷
সিনিয়াহ দ্বীপের মঠটি পারস্য উপসাগরের তীরে প্রাথমিক খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে নতুন দিশা দেখাল৷

মঠ আবিষ্কারের কাজে যুক্ত আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের সহযোগী অধ্যাপক টিমোথি পাওয়ার বলেন,’এটি সত্যিই একটি আকর্ষণীয় আবিষ্কার, কারণ এটি গুপ্ত এক ইতিহাস। এটির কথা ব্যাপক অর্থে সবাই জানেন না।’

পাওয়ারের কথায়, ‘হাজার বছর আগে এখানে অসাধারণ কিছু ঘটেছিল। সেই কথা জানা প্রয়োজন।’

উপর থেকে দেখা গেলে বোঝা যাবে, সিনিয়াহ দ্বীপে খ্রিস্টান উপাসকরা চার তলার মঠের একটি একক ঘরের গির্জার মধ্যে প্রার্থনা করতেন। ভিতরের কক্ষগুলিতে ব্যাপটিজমাল হরফ রয়েছে। রুটি বেক করার জন্য একটি চুলা বা গোষ্ঠীবদ্ধ রীতিপালনের জন্য ওয়েফার রয়েছে। একটি বেদিও ছিল সেখানে। গির্জার মূল অংশে ওয়াইনের জন্য একটি ইনস্টলেশনও ছিল।

Diamond-Cement-mobile

মঠের পাশে চারটি ঘরের দ্বিতীয় ভবন রয়েছে। সম্ভবত চারপাশে মঠের উঠান ছিল। অনুমান করা হচ্ছে, গির্জা বা মঠের প্রথম বিশপের বাড়ি ছিল এটি। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিশ্বাস করেন, গির্জা থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার (গজ) দূরে, ভবনগুলি প্রাক-ইসলামি গ্রামের অংশ ছিল।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশিরভাগ অংশ দ্রুত বিকশিত হয়েছে। তাই এই জায়গাগুলি দ্রুত আবিষ্কার করে সংরক্ষণের চেষ্টা হচ্ছে। আমিরাতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এখানে খননের কাজ এখনো চলছে।

দ্বীপের অন্য অংশে কাছাকাছি একটি গ্রামও রয়েছে, যেটিকে ব্রিটিশরা ১৮২০ সালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল। এই অঞ্চলটি ট্রুশিয়াল স্টেটস নামে পরিচিত ছিল। এটিকেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের সূচনা বলা যায়। সেই গ্রামের ধ্বংসলীলা মূল ভূখণ্ডে উম আল-কুওয়াইনের আধুনিক কাঠামো তৈরি করেছে।

অধ্যাপক পাওয়ার বলেন, উন্নয়ন প্রত্নতাত্ত্বিক কাজকে উত্সাহ দেয়ায় মঠটি আবিষ্কার করা গিয়েছে। এলাকাটিকে ঘিরে ফেলে সুরক্ষিত করা হচ্ছে।

তার কথায়, ‘অতীতের কোন রহস্যগুলি দ্বীপের বালির পাতলা স্তরের নীচে লুকিয়ে রয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়’।

আরও পড়তে পারেন :
আমিরাতে প্রথম ‘বাংলাদেশ বইমেলা’ শুরু
আমিরাতে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ৪৪ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
রেমিট্যান্সে বড় পতন আমিরাতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য
আড়াই লাখ দিরহামসহ আমিরাতগামী যাত্রী আটক

নয়ের দশকের গোড়ার দিকে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম খ্রিস্টান মঠটি স্যার বানি ইয়াস দ্বীপে আবিষ্কার করেন। এটি আজ সৌদি সীমান্তের কাছে আবুধাবির উপকূলে একটি প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং বিলাসবহুল হোটেলের জন্য বিখ্যাত। উম আল-কুওয়াইনে আবিষ্কৃত মঠের সময়কালেই সেটি তৈরি হয়েছিল বলে ধারণা।

সময়ের ইতিহাসের কাছে হারিয়ে গিয়েছে দুটি মঠ। পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন, খ্রিস্টানরা ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্ম নেন। ইসলাম পরবর্তীতে অনেক বেশি প্রচলিত হয়।
আমিরাত প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

ইতিহাসবিদরা বলেছেন, শুরুর দিকের গির্জা এবং খ্রিস্টান মঠগুলি পারস্য উপসাগর বরাবর বর্তমান ওমানের উপকূল এবং ভারত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বাহরাইন, ইরাক, ইরান, কুয়েত এবং সৌদি আরবে অনুরূপ গির্জা এবং মঠ খুঁজে পেয়েছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!