২০১৯ : ভারতীয় এভিয়েশনের জন্য কঠিন বছর
২০১৯ সালে ভারতীয় এভিয়েশন খাতকেও কম ধাক্কা সামলাতে হয়নি। ভাল-মন্দ মিলিয়ে নানা বড় বড় ঘটনায় আলোচিত হয়েছে ভারতের এভিয়েশন খাত। দেশটির এই খাতটি যেমন বেশ গতি নিয়ে এগুচ্ছে তেমনি রয়েছে কিছু বাধা-বিপত্তিও। বছর শেষের হিসেব কষতে সে ঘটনাগুলোতে একটু দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে।
জেট এয়ারওয়েজের পতন
ভারতীয় এভিয়েশন খাতের জন্য নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় খবর ছিল গেল এপ্রিলে জেট এয়ারওয়েজের বন্ধ হয়ে যাওয়া। এটি মোটেই কোন ছোটখাট বিমানসংস্থা ছিল না। এমনকি জানুয়ারি পর্যন্ত এটিই ছিল ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানসংস্থা। শেষ ফ্লাইট পর্যন্ত এর বহর সজ্জিত ছিল মোট ১২৪ টি উড়োজাহাজে।
এই বিমানসংস্থার ধীরে ধীরে এমন পতনের পেছনের কারণটা বেশ জটিল। তবে শেষমেশ এই বিমানসংস্থাটি ব্যর্থ হয়েছিল দেউলিয়াত্ব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে না পেরে।
২৭ বছরের দীর্ঘ পথচলায় এই বিমান সংস্থাটি বেশ কয়েকবার এমন কিছু ঋণ নিয়েছে যা নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছেল। তবে শেষ পর্যায়ের ঋণ নিয়ে ঝামেলায় পড়লে অতীত ইতিহাস কাল হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও জ্বালানির চড়ামূল্য আর হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতায় এভিয়েশন খাত থেকে ছিটকে পড়ে এই বিমানসংস্থা।
জেট এয়ারওয়েজের এই পতনের সুযোগ বেশ ভাল অবস্থানে এখন প্রতিদ্বন্দী বিমানসংস্থাগুলো। বিশেষ করে স্পাইসজেট বন্ধ হয়ে যাওয়া বিমানসংস্থাটির শূন্যস্থান পূরণ করে ২০১৯ এর জুন পর্যন্ত তাদের লাভের পরিমাণ ৭৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে।
এয়ার ইন্ডিয়া বেসরকারিকরণ
আরেকটি বড় ঘটনা হল ভারতের সরকারি বিমানসংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার চলমান সংকট। এই বিমানসংস্থাটি এখন ১১ বিলিয়ন ডলারের ঋণে জর্জরিত যা ভারতীয় সরকারকে ভাবতে বাধ্য করেছে যে এই সংস্থা আদৌ রাখার মত কোন মূল্যবান সম্পদ কিনা। এমনকি গেল ১২ বছর ধরে টানা এই বিমানসংস্থাটি কোন লাভ দেখাতে না পারায় এর ক্রেতা পাওয়ার ব্যাপারটিও হয়েছে কষ্টসাধ্য।
ডিসেম্বরের ১২ তারিখ ভারত সরকার জানায়, যে তারা এই বিমানসংস্থাটি পুরোপুরি বিক্রয় করতে আগ্রহী। এই পদক্ষেপটিকে তারা বিনিয়োগের অর্থ তুলে নিতে একটি কৌশলগত ব্যাপার হিসেবে ব্যাখা করে।
ইন্ডিগোর এ ৩২০ নিও জটিলতা
ভারতের আরেকটি অন্যতম বিমানসংস্থা ইন্ডিগো তাদের আকাশযান এয়ারবাস এ ৩২০ নিও নিয়ে বেশ বড়সড় ঝামেলায় পড়েছিল ২০১৯ এ। নভেম্বরে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এই বিমানসংস্থার সবগুলো এয়ারবাস এ ৩২০ নিও’র ইঞ্জিন বদলে ফেলার নির্দেশ দেয়।
ইন্ডিগো এয়ারবাস এ ৩২০ নিওতে বেশ কয়েকবার ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটে। রহস্যজনকভাবে অন্য কোন বিমান সংস্থায় এই মডেলের বিমানগুলোতে এমন কোন সমস্যা দেখা দেয়নি।
তবে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধানের পর বেরিয়ে আসে ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা মূলত দুর্বল বিমান চালনার জন্য ঘটেছিল।
বিশেষ করে উড্ডয়নের সময় পাইলটরা খুব শক্ত করে থ্রোটলিং করায় ইঞ্জিনের উপর চাপ তৈরি হয়েছিল। যদিও ২০১৯ ভারতীয় এভিয়েশনের জন্য সর্বোত্তম ছিলনা, আশা করা যায় ২০২০ এই এগিয়ে চলা খাতটির জন্য ভাল কিছু বয়ে আনবে।