১৮ বছর বিমানবন্দরে বাস করা সেই মানুষটির মৃত্যু

১৮ বছর ধরে ফ্রান্সের প্যারিসের বিমানবন্দরে বসবাস করা ইরানের সেই নাগরিক মারা গেছেন। গতকাল শনিবার চার্লস ডি গল বিমানবন্দরে মারা যান তিনি। তাঁর নাম মেহরান করিমি নাসেরি। কূটনৈতিক অস্থিরতায় আটকে থাকা অবস্থায় তিনি মারা গেলেন।

১৯৮৮ সালে প্যারিসের চার্লস ডি গল বিমানবন্দরে বসবাস শুরু করেন মেহরান নাসেরি। বিমানবন্দরের লাল সোফায় বসে লেখা তাঁর আত্মজীবনী ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’ বই হিসেবে প্রকাশিত হয়।

এভিয়েশনের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

Travelion – Mobile

বইটি থেকে ‘দ্য টার্মিনাল’ সিনেমা তৈরি করেন বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ। ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটিতে মেহরান করিমি নাসেরির চরিত্রে অভিনয় করেন টম হ্যাঙ্কস। ছিলেন অভিনেত্রী ক্যাথেরিন জেটা জোনসও। ঘটনাবহুল নাসেরির জীবনের পুরো চিত্রই উঠে এসেছে সিনেমায়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত মেহরান করিমি নাসেরি বিমানবন্দরেই ছিলেন।

চার্লস ডি গল বিমানবন্দরের টার্মিনালকেই নিজের ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেন মেহরান Photo : Greg Lindsay
চার্লস ডি গল বিমানবন্দরের টার্মিনালকেই নিজের ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেন মেহরান Photo : Greg Lindsay

১৯৮৮ সালের ২৬ অগাস্ট থেকে ২০০৬ সালের জুলাই পর্যন্ত, জীবনের সুদীর্ঘ ১৮ বসন্ত এই ভদ্রলোক পার করেছেন বিমানবন্দরের ডিপার্চার লাউঞ্জে বসে, এয়ার পোর্টের এ অংশটা কে সাধারণত নোম্যানস ল্যান্ড বলে ধরা হয়।

বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, নাসেরিকে শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কয়েক সপ্তাহ আগে বিমানবন্দরে ফিরে আসেন। সেখানেই তিনি মারা যান।

মেহরান করিমি নাসেরির জন্ম ১৯৪৫ সালে ইরানের খুজেস্তানে। মায়ের খোঁজে তিনি প্রথমে ইউরোপে যান। প্রথমে কয়েক বছর থাকেন বেলজিয়ামে। তাঁর কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় দেশ থেকে বের করে দেয় ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানি। এরপর তিনি ঠাঁই খোঁজেন ফ্রান্সে। নিজেকে রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করেন মেহরান। তার পর থেকেই প্যারিসের চার্লস ডি গল বিমানবন্দরের ২ এফ টার্মিনালকেই নিজের ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেন মেহরান।

বিমানবন্দরে  নোটবুকে লিখে, বই আর পত্রিকা পড়ে সময় কাটান তিনি।
বিমানবন্দরে নোটবুকে লিখে, বই আর পত্রিকা পড়ে সময় কাটান তিনি।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁকে সরানোর বিভিন্ন চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রতি বারই মেহরানের কাছে হার মানতে হয় তাঁদের।

তাঁর চারপাশ দিয়ে লোকজন চলাচল করে। ট্রলি ঠেলে নিয়ে যান। তাঁর মধ্যে বসে তিনি নোটবুকে লেখেন জীবনের কথা। পড়েন বই আর পত্রিকা। তাঁর এই জীবনকাহিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁকে ১৯৯৯ সালে শরণার্থী মর্যাদা দেয় ফ্রান্স। তা সত্ত্বেও ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিমানবন্দরেই কাটিয়ে দেন।

এভিয়েশনের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

বিমানবন্দরে ঢোকার ১৮ বছরের মাথায়, ২০০৬-এ প্রথম বার মেহরান বাইরে বেরোন। সে বার অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে।

‘দ্য টার্মিনাল’ ছবি থেকে যে অর্থ পেয়েছিলেন, তা খরচ করে একটি হোটেলে থাকা শুরু করেন। চার সপ্তাহ আগে তিনি আবার ফিরে যান ওই বিমানবন্দরে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। সব মিলিয়ে ১৮ বছর বিমানবন্দরে কাটান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!