শুরু হচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ
২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীের ভিত্তিপ্রস্তর
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ আগামী ২৮ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে। ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই মেগা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
প্রায় ৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় তিন তলা টার্মিনালটির কাজ । ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীর সেবা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
বৃহস্পতিবার দুপরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন ।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে ১২টি। প্রতি ৪টি ব্রিজের জন্য একটি লিফট থাকবে। কনভয় বেল্ট থাকবে ১২টি। চেকইন কাউন্টার হবে ২০টি।
প্রতিটি কাউন্টারে সিকিউরিটি স্ক্যানার থাকবে। প্রতিঘন্টায় দুই হাজার যাত্রীর লাগেজ স্ক্যান করার সক্ষমতা থাকবে প্রত্যেক কাউন্টারে। এ ছাড়া এক হাজার ২০০ গাড়ির পার্কিং সুবিধা থাকবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রতিবছর দেশে আট শতাংশ হারে আকাশপথের যাত্রী বাড়ছে। বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ পরিমাণ যাত্রী ধারণের সক্ষমতা নেই। এজন্য তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি নির্মাণ হলে যাত্রীদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালে দুবাইসহ বিশ্বের উন্নত বিমানবন্দরে যে মানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে তা ব্যবহার করা হবে। বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে পণ্য ক্রয়ের জন্য ধরনা দিয়েছেন, প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি নিজে এটি তদারকি করেছি। কিন্তু আমরা সেরাটাই দেবো।’
সভায় বেবিচকের সদস্য (প্রশাসন) মো: হাফিজুর রহমান, সদস্য (অর্থ) মো. মিজানুর রহমান, সদস্য (নিরাপত্তা) মো. শহীদুজ্জামান ফারুকী, সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর মো: খালিদ হোসেন, সদস্য (এটিএম) গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মেহবুব খান, সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন) গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. জিয়াউল কবীর, প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পরিচালক তৌহিদ-উল-আহসানসহ বেবিচকের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বেবিচক সূত্রের উধ্বৃতি দিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিঙ্গাপুরের সিপিজি করপোরেশনের স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রীসেবার অত্যাধুনিক লাউঞ্জ, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ আর্ন্তজাতিক মানের সুবিধা রাখা হবে। ২৪টি বোডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকলেও প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১২টি বোডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার থাকবে।
এছাড়া, ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট এবং ১৯টি চেক ইন অ্যারাইভেল কাউন্টার থাকবে। টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। এছাড়া, অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট স্থাপন করা হবে।
গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানে ১০৪৪টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূ-গর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ এবং উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে, যার মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের সংযোগের ব্যবস্থা থাকবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে বিমানবন্দরের ভিভিআইপি কমপ্লেক্সটি ভেঙে ফেলা হবে। তৃতীয় টার্মিনালে আলাদা কোনও ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণ না করে ভবনের ভিতরে সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ‘ভিভিআইপি স্পেস’ রাখা হবে।