লিবিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশি মানবপাচার চক্রের ২২টি নির্যাতন ক্যাম্প

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে মানবপাচার করতে লিবিয়ায় ৪৫ জনের একটি বাংলাদেশি দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছে নোয়াখালীর কাজী ইসমাইল । এই চক্রের মালিকানায় সেখানে অন্তত ২২টি নির্যাতন ক্যাম্প রয়েছে। বেনগাজি ও জোয়ারার বিভিন্ন নির্যাতন ক্যাম্পে এখনো কয়েকশো বাংলাদেশি মানবপাচারকারীদের হাতে জিম্মি আছে।

লিবিয়ার মিসদাহ মরুভূমিতে ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হওয়া ৬ জন এমন তথ্য দিয়েছেন। তারা জানান, দেশের ভেতরে ১১টি অঞ্চলে ভাগ হয়ে দালাল চক্রটি চারটি আন্তর্জাতিক রুট ব্যবহার করে ইউরোপে মানবপাচার করে আসছে।

সম্প্রতি লিবিয়ায় মানবপাচারের শিকার ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতাররা হলেন- বাদশা মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, আকবর আলী, সুজন, নাজমুল হাসান ও লিয়াকত শেখ ওরফে লিপু। এই চক্রের অন্যদের ধরতেও তৎপরতা চলছে বলে জানিয়েছে ডিবি।

Travelion – Mobile

সোমবার (৮ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন আটক আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন ।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আরও জানান, প্রায় অর্ধশত পাচারকারী ইউরোপের ছয়টি দেশে মানবপাচার করতে ও মুক্তিপণ আদায় করতে অসংখ্য নির্যাতন ক্যাম্প পরিচালনা করছে। যার ২২টি শনাক্ত করতে পেরেছে ডিবি

ডিবি জানিয়েছে, লিবিয়ার ডিবি পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশে ৬ মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে আরো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসছে। গ্রেফতার ছয় জনের হাত ধরেই ২৮ মে লিবিয়ার মিসদাহ মরুভূমিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশি পাচার হয়েছিলেন।

 ডিএমপির ডিবির হাতে আটক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা
ডিএমপির ডিবির হাতে আটক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা

পাচারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, লিবিয়ার বিভিন্ন এস্টেটে কাজ ও লিবিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি দালালরা অন-অ্যারাইভাল ও ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে লোকজনকে লিবিয়ায় পাচার করে। পাচারের পর ভিকটিমদের লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক রেখে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করে। ভিকটিমদের কান্নাকাটি, আকুতি-মিনতি করা অডিও অথবা সরাসরি মোবাইলে কথাবর্তা বাংলাদেশে অবস্থানরত ভিকটিমদের স্বজনদের পাঠিয়ে অর্থ আদায় করে।

তিনি বলেন, লিবিয়াতে যে মিলিশিয়া গ্রুপ আছে তাদের সহযোগিতায় এ ক্যাম্পগুলো চালায় তারা। বাংলাদেশ থেকে অর্থের বিষয়ে একটা লেনদেন তৈরি করে থাকে। আমরা সেই বিষয়টি তদন্ত করবো। যারা এর সঙ্গে জড়িত, যারা ইতোমধ্যে লিবিয়াতে আছে এবং লিবিয়া থেকে যারা এই অর্থের লেনদেন করে তাদের ধরার জন্য আইনী প্রক্রিয়ায় আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

গ্রেফতারকৃতদের পল্টন ও তেজগাঁও থানায় মানবপাচার ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান আব্দুল বাতেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!