লাইসেন্স আনতে ভুলে গেছেন পাইলট, অগত্যা ফ্লাইট বাতিল!

আমরা অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যাই। আমাদের চাবি, সন্তানের জন্মদিন, কিংবা শেষ মুহূর্তের বড়দিনের কেনাকাটা। তবে এবার একজন পাইলট ভুলে গেছেন একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু, তার উড়োজাহাজ চালনার সনদ বা লাইসেন্স। এটি গাড়ির চালানোর সময় আপনার চালক সনদ ফেলে আসার মত কোন ব্যাপার নয় যে চাইলেই বাড়িতে গিয়েই আবার তা নিয়ে আসতে পারবেন।

পাইলট বাসায় লাইসেন্স ফেলে আসায় জাপানের বৃহত্তম বিমানসংস্থা অল নিপ্পন এয়ারওয়েজের (এএনএ) একটি ফ্লাইটটি বাতিল করতে হয়। এর ফলে এবারের বড়দিন উৎসব মাটি হয় ঔ ফ্লাইটের ২৬৯ যাত্রীর। এছাড়া আরও একটি কানেকটিং ফ্লাইট বাতিল ও একটি ফ্লাইটের যাত্রা বিলম্বিত হয়।

মঙ্গলবার ( ২৪ ডিসেম্বর) বিকেল তিনটায় ষাটোর্ধ সেই পাইলট, রাজধানী টোকিওর হানেডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফুকুওকা শহর রুটের নিয়মিত ফ্লাইট (এএনএ-২৫৯) করে ২১৭ জন যাত্রীকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না পাইলট বুঝতে পারল তার পকেটে বেসরকারি বিমান চলাচলের কোন সনদ নেই ।

Travelion – Mobile

বিষয়টি টের পাওয়ার পরপরই পাইলট তার উর্ধ্বতনদের ফোন করেন। তিনি তাদের ব্যাখা করেন যে, ভুলে সনদটি তার টোকিওর বাসায় ফেলে এসেছেন।

আইন অনুযায়ী পাইলটদের উড়োজাহাজ চালনার সময় তাদের লাইসেন্স বহন করতে হবে। এক্ষেত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফ্লাইট পরিচালনার আগে কো-পাইলট এবং পাইলটকে একে অপরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করতে হয়।

জাপান টাইমসের খবরে বলা হয়, সনদ না থাকায় পাইলট ফুকুওকা থেকে ওসাকা প্রদেশের ইটামি রুটে তার পরবর্তী ফ্লাইটটিও (এএনএ এর ৪২৮) পরিচালনা করতে পারেননি। তাই ফ্লাইটও বাতিল করে এর ১২৯ যাত্রীকে বিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য করেছিল কর্তৃপক্ষ।

সমস্যাটি আরো প্রকট হয় যখন, প্রয়োজনীয় সনদসহ বিকল্প পাইলট খুঁজতে গিয়ে ইটামি থেকে সেন্ডাইয় রুটের (এএনএ ফ্লাইট ৭৩৯) ফ্লাইটটিও বিলম্ব করা হয়। এটি ৯৩ জন যাত্রী ছিল।

এই এলোমেলো অবস্থা নিয়ে বিমানসংস্থাটিকে গতানুগতিক নিয়মে মিডিয়ার মুখোমুখি হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তারা কোন জবাব দেয়নি। তবে ঘটনার পরপরই এএনএ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

একদিকে এভিয়েশন বিশেষাজ্ঞরা বলছেন, এটি অনস্বীকার্য যে একজন পাইলটের প্রয়োজনীয় সনদ ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটি বেশ নির্বোধের মত কাজ। যদি এটি খুব মামুলি কিছু ভুলে যাওয়া ধরা হয় তবে প্রশ্ন আসতে পারে ২১৭ জন যাত্রী নিয়ে উড়াল দেয়ার আগে আর সব কিছু আনতে ভুলে গেলেও সনদ ভোলার ব্যাপারটি একেবারেই নির্বুদ্ধিতা।

নিয়ম অনুযায়ী ফ্লাইটের আগে কো-পাইলট এবং পাইলট একে অন্যের তদারকির কথা থাকলেও এখানে সে প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে কেন প্রশ্ন আসতেই পারে। এক্ষেত্রে এটি পরিস্কার যে এমন কোন প্রক্রিয়া তারা অনুসরণ না করে কাজ চালিয়ে নেয়ার অনুমতি পেয়েছিল।

কিন্তু এই ঘটনাটি একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দেয়। ফ্লাইট চালানোর সময় কেন কাগজপত্র-ভিত্তিক সনদ প্রয়োজন? এক্ষেত্রে কোনও অচেনা ব্যক্তি দ্বারা বিমান চালানোর ঝুঁকি এড়াতে ডিজিটাল পরিচয়পত্রের মত কিছু চালু করা যেতে পারে। তবে পাইলটের কাগজপত্র না থাকার জন্য ফ্লাইট বাতিল করার ব্যাপারটি আসলেই অগ্রহণযোগ্য।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!