প্রতিবন্ধী ছেলেকে বেঁধে স্ত্রীকে ছ্যাঁকা দেওয়া প্রবাসী গ্রেপ্তার

অবশেষে ধরা পড়ল স্ত্রী নির্যাতনকারী সৌদিপ্রবাসী মোশাররফ হোসেন উজ্জল (৩৫)। দেশ ছেড়ে পালানোর সময় ঢাকায় বিমানবন্দরে ধরা পড়েছেন যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত এই প্রবাসী।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিনামবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেপ্তার করে নোয়াখালীন বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন উজ্জলকে।

যৌতুক চেয়ে স্ত্রীর মাথার চুল কেটে দেহে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি সোমবার প্রকাশ পাওয়ার পর পুলিশ তাকে খুঁজছিল।

Travelion – Mobile

সৌদিপ্রবাসী মোশাররফ হোসেন উজ্জল বেগমগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের খানপুর গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে। স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিনের বাড়ি কবিরহাট উপজেলার বড় রামদেবপুর গ্রামে। প্রায় নয় বছর আগে তাদের হয়েছিল। আট বছর বয়সী বাক্‌প্রতিবন্ধী এক ছেলে রয়েছে তাদের।

গত ১ অক্টোবর দেশে ফেরার পর জেলা শহরের বছিরারর দোকান এলাকায় স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠেন উজ্জল। এই বাসাতেই স্বামী উজ্জলের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন নিলুফার ।

স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিনের অভিযোগ মতে, গত বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) যৌতুকের আরও টাকার দাবির জেরে তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রাত নয়টার দিকে মোশারফ বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করে ছেলেকে বেঁধে রাখেন। এর পর গরম খুন্তি দিয়ে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেন। মাথার চুলও কেটে দেন। এ সময় নিলুফা চিৎকার করলে ছেলের গলায় চুরি ধরে তাকে হত্যার হুমকি দেন উজ্জল।।

রাত ১০টার দিকে নিলুফা বাসা থেকে কৌশলে ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে কবিরহাটে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে সেখানে সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালান উজ্জল।

এক পর্যায়ে সোমবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার সময় আবারও ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ছিনিয়ে নেওয়ার চেস্টা করে উজ্জল। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নির্যাতিত নারীর বাবা ইউছুফ আলী বাদী হয়ে জামাতাকে আসামী করে মঙ্গলবার সুধারাম মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এর আগ থেকেই উজ্জলকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযানে নামে পুলিশ। তিনি যাতে দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে পাসপোর্টের ফটোকপি ও ছবি পাঠিয়ে এলার্ট জারি করা হয়।

বাক্‌প্রতিবন্ধী এক ছেলের মা ২৭ বছর বয়সী এই মা নিলুফা ইয়াসমিন এখন নির্যাতনের ক্ষতে ছটফট করছেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে। তাঁর মুখ, চোখ, হাতসহ শরীরের বেশির ভাগ অংশেই খুন্তির ছ্যাঁকা। মাথার চুল কাটা।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাসির উদ্দিন বলেন, নির্যাতনের শিকার নারীর মুখ, হাত, পাসহ পুরো শরীরে অসংখ্য ছ্যাঁকার পোড়া দাগ রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে কিছুদিন সময় লাগবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!