রোববার থেকে পাঁচ ধাপে যেভাবে স্বাভাবিক হচ্ছে কুয়েত

আগামী রোববার (৩১ মে) থেকে কুয়েত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরা শুরু করবে। এক্ষেত্রে নানা স্বাস্থ্যগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক বিবেচনা করে করোভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাঁচ ধাপে এগুবে দেশটির সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ খালেদ আল-হামাদ আল-সাবাহ সংবাদমাধ্যমে এ কথা জানান।

মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক এক বৈঠকের পর তিনি বলেন, “আমাদের বিশেষজ্ঞ আর গবেষকেরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা যাচাই বাছাই করে কুয়েতকে স্বাভাবিক অবস্থায় ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনার একটি বেশ কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ”

Travelion – Mobile

তিনি আরো বলেন, “এক্ষেত্রে আমরা স্বাস্থ্যগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক বিবেচনায় নিয়েছি এবং ধীরে ধীরে স্বাস্থ্য সূচকের উপর ভিত্তি করে আমরা সবকিছু উন্মুক্ত করে দিব। স্বাস্থ্য সূচক মূলত আমাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্য বিধিমালা মেনে চলার মাত্রা তুলে ধরবে এবং বেঁচে থাকার স্বার্থে তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করবে। ”

পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার আগে শনিবার কুয়েত ১২ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে বলে জানান দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আনাস আল-সালেহ। একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “করোভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে দেশে সম্পূর্ণ কারফিউ জারি করা হয়েছিল যা এখন আমরা সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত কমিয়ে আনব।”

 করোনা প্রাদুর্ভাবে বেশি আক্রান্ত এলাকা হাওয়ালি, খৈতান এবং ফারওয়ানিয়াকে লকডাউনের আওতায় থাকবে
করোনা প্রাদুর্ভাবে বেশি আক্রান্ত এলাকা হাওয়ালি, খৈতান এবং ফারওয়ানিয়াকে লকডাউনের আওতায় থাকবে

তিনি আরো বলেন, সরকারের যেই পরিকল্পনায নিয়েছে তাতে অনেক দেশের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং মার্কিন সংক্রামক রোগ কেন্দ্রের সুপারিশকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। সে হিসেবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বেশি আক্রান্ত এলাকা হাওয়ালি, নুকড়া, ময়দান হাওয়ালি, খৈতান এবং ফারওয়ানিয়া লকডাউনের আওতায় রাখা হবে। এছাড়া মাহবৌলা ও জালিব আল-শুয়ুখে তা অব্যাহত থাকবে।

আরব টাইমস জানায়, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী শেখ ড. বাসেল আল-সাবাহ জানিয়েছেন সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারির আওতায় যেসব এলাকা পড়বে সেগুলোতে রবিবার থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু হবে।

তিনি উল্লেখ করেন যে, “করোনা মোকাবেলা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সরকার ৫টি ধাপ অনুসরণ করবে। এই ধাপগুলো সবচেয়ে কঠোর থেকে শুরু করে নমনীয়তার মধ্যে ছক কষে নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাভাবিক জীবনের দিকে ফিরতে গিয়ে যদি আমরা ৩ সপ্তাহের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ফলাফলে পৌঁছাতে না পারি, তাহলে আমরা সবচেয়ে কঠোর ধাপে ফিরে যাব।

রোববার (৩১ মে) থেকে শুরু হওয়া ৫ ধাপের বিস্তারিত তুলে ধরা হল :
প্রথম ধাপ
এ ধাপে সব এলাকায় সন্ধ্যে ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত আংশিক কারফিউ জারি থাকবে। আর পুরো কারফিউর এলাকা হল হাওয়ালি, খৈতান, ফারওয়ানিয়া মাহবৌলা ও জালিব আল-শুয়ুখ। তবে প্রয়োজন হলে নতুন এলাকায় সম্পূর্ণ কারফিউ জারি হতে পারে। বাদ পড়তে পারে অনেক এলাকাও।

কুয়েত সরকারের মুখপাত্র তারেক আল-মেজরেম জানান, সরকার যেসব এলাকায় সম্পূর্ণ লকডাউন তাদের বিস্তারিত কিছু নির্দেশনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ফারওয়ানিয়া এলাকা পুরোটা লকডাউনে থাকলেও ৬০, ১২০, ৫২০, এবং ১২৯ নম্বর সড়কের মধ্যবর্তী এলাকাগুলো আওতামুক্ত থাকবে। পুরো হাওয়ালি এলাকা, নুগড়া ও ময়দান হওয়ালি লকডাউনের আওতায়। খৈতান ব্লকের ৪,৬,৭,৮ এবং ৯ আওতাভুক্ত। মাহবৌলা ও জালিব আল-শুয়ুখেও লকডাউন অব্যাহত থাকবে।

যেসব এলাকা নতুন করে লকডাউনের আওতায় এলো সেগুলোতে খাবার ও গ্যাসের প্রয়োজনীয় যোগানের ব্যবস্থা করতে সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত।
যেসব কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হবে:
শিল্প কারখানার কার্যক্রম
স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে মসজিদে নামাজ ও পূজার স্থান বা মন্দিরে প্রার্থনা শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে শুধু আবাসিক এলাকায় ওয়াক্তী নামাজ হবে, তবে শুক্রবারের জুমার নামাজ বন্ধ থাকবে।
হোম ডেলিভারি সার্ভিস
সাধারণ পরিষেবা (রক্ষণাবেক্ষণ, মালবাহী পরিষেবা, গ্যাস, লন্ড্রি)
টেলিকম ও ইন্টারনেট প্রোভাইডার
রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফে (গাড়িতে করে গিয়ে খাওয়া নিয়ে আসা যাবে)
কোম্পানি ও করপোরেশনের দলীয় পরিবহন
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দোকান (কুপ, মুদিখানা, ক্যাটারিং)
হাসপাতাল ও ক্লিনিক
গ্যাস স্টেশন ও পরিষেবা
যানবাহন এবং সরঞ্জাম (শোরুম, গ্যারাজ, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং গাড়ী ধোয়ার দোকান)

দ্বিতীয় ধাপ
৩ সপ্তাহের পর শুরু হওয়া এ ধাপে সরকারি ও বেসরকারি খাতে কাজ পুনরায় শুরু হবে (শুধু মাত্র ৩০ শতাংশ কর্মী দিয়ে)। যারা নির্দেশনা মেনে চলবে না তাদের কঠোর সাজার আওতায় পড়তে হবে। ব্যাংক, মল, রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফেতে কোন বসার ব্যবস্থা থাকবে না কেবল ক্রেতারা এসে খাবার, পণ্য বা নিয়ে চলে যেতে হবে।

তৃতীয় ধাপ:
এই ধাপে আংশিক কারফিউ তুলে নেয়া হবে। সরকারি ও বেসরকারী খাতে কর্মীসংখ্যা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫০% পর্যন্ত করতে পারবে। হোটেল ও রিসোর্ট পুনরায় তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। ভাড়ায় চালিত কার কোম্পানীগুলো প্রতি গাড়িতে এক ড্রাইভার নির্দিষ্ট করে দিয়ে তাদের ব্যবসা চালু করতে পারবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুক্রবারের জুমার নামাজ আদায় করতে পারবেন নাগরিকরা।

চতুর্থ ধাপ:
এই ধাপে সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মী আরো বাড়ানো যাবে। রেস্টুরেন্টে সামাজিক দুরত্ব মেনে বসে খাওয়া যাবে। গণ পরিবহন পুনরায় চালু করা হবে।

পঞ্চম এবং শেষ ধাপ:
সরকারি ও বেসরকারী খাতে শতভাগ কর্মী নিয়োগ করা যাবে। পারিবারিক সমাবেশ এবং গ্র্যাজুয়েশন আয়োজন করা যাবে। ক্লাব ও জিম পুনরায় শুরু যাবে। প্রদর্শনী, ক্রীড়া কার্যক্রম, সিনেমা ও প্রেক্ষাগৃহ খোলা যাবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!