বেসরকারি হচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া, শতভাগ শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত
সব জল্পনা ছাপিয়ে বেসরকারিকরণ হচ্ছে ভারতের জাতীয় বিমানসংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া। এয়ার ইন্ডিয়ার ১০০ শতাংশ শেয়ার বেচার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার । দিনের পর দিন লোকসানের ভারে ধুঁকতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ব বিমানসংস্থাটিকে বেসরকারিকরণে পথে নেওয়া ছাড়া আরও কোন উপায় ছিল না সরকারের ।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) এই মর্মে একটি আগ্রহপত্রও প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ ওই আগ্রহপত্র জমা দেওয়ার জন্য ১৭ মার্চের বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে।
আগ্রহপত্রটি বলা হয়েছে, ‘কৌশলগত পুনঃনির্মাণ’ এর আওতায় এয়ার ইন্ডিয়া ও এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ১০০ শতাংশ এবং এয়ার ইন্ডিয়া স্যাটস-এর ৫০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করা হবে। সেক্ষেত্রে যারা এই রাষ্ট্রায়ত্ত বিমানসংস্থাটিকে কিনবে, তাদের এয়ার ইন্ডিয়ার ২৩ হাজার ২৮৩ কোটি টাকার দেনার দায়ও নিতে হবে।
Government of India (GOI) has given ‘in-principle’ approval for Strategic disinvestment of Air India (AI) by way of the transfer of management control&sale of 100% equity share capital of AI held by GOI which will include AI’s shareholding interest of 100% in AIXL &50% in AISATS. pic.twitter.com/246VZf6tVb
— ANI (@ANI) January 27, 2020
এছাড়াও, এই নিলামের পর ভারতীয় সংস্থা বা ব্যক্তির হাতেই থাকতে হবে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা। অর্থাত্ বিদেশী ক্রেতার বিশেষ কোনও সুযোগ থাকছে না বলেই ধরা যেতে পারে। মূলত এর মালিকানা দেশীয় কোনও সংস্থার হাতেই ছাড়তে চাইছে মোদি সরকার৷
দেনায় জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ার ইন্ডিয়াকে বেচার চিন্তাভাবনা নতুন নয়, অনেক দিন ধরেই চলছে। ২০১৮ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার ৭৬ শতাংশ শেয়ার বেচতে আগ্রহপত্র ছেড়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তবে আগ্রহপত্র জমা দেওয়ার সমসয়সীমা বার বার বাড়িয়েও কেনার লোক পাওয়া যায়নি।
এমন অবস্থার কারণ খুঁজতে উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই রিপোর্টে বলা হয়, সরকারের হাতে ২৪ শতাংশ মালিকানার রাখার বিষয়টি নিয়ে লগ্নিকারীদের মনে সংশয় দেখা দিচ্ছিল। শুধু তাই নয়, যে সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা নেবে তাকে এই সংস্থার দেনার দায়ও নিতে হবে বলা হয়েছিল। যা দেখে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ফলে বহু চেষ্টা সত্ত্বেও মুখ থুবড়ে পড়ে কেন্দ্রের বিলগ্নিকরণের পরিকল্পনা।
গত এক দশকেরও বেশি সময়ে এয়ার ইন্ডিয়া লাভের মুখ দেখেনি। বিশাল অঙ্কের ঋণের দায়ে ধুকছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমানসংস্থাটি । দিন দিন বেড়েই চলেছে লোকসানের পরিমাণ। ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণে ডুবে রয়েছে সংস্থাটি। কাজ চালানোও দুষ্কর হয়ে উঠেছে এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তাদের কাছে।
টাকা না মেটানোয় সরকারি বিমানসংস্থাটিকে জ্বালালি দিতে অস্বীকার করেছে তেল কোম্পানিগুলি। সময়মতো বেতন না পাওয়ায় গত বছর এ-৩২০ বিমানের ১২০ জন পাইলট কর্তৃপক্ষের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছিলেন।
ঋণের ভারে জর্জরিত এবং ধুঁকতে থাকা এই বিমান সংস্থাটিকে বাঁচাতে সরকারকে অর্থসাহায্য করতে হয়েছে। তবুও ঘুরে দাঁড় করানো যায়নি ৷ ফলে শেষমেশ সরকার এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির বেশিরভাগ শেয়ার বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ কিন্তু তাতেও ইতিবাচক সাড়া না মেলায় এবার এয়ার ইন্ডিয়ার পুরো মালিকানা বেচার সিদ্ধান্ত নিল সরকার।
সম্প্রতি, এয়ার ইন্ডিয়ার সভাপতি ও কার্যকরী পরিচালক (সিএমডি) অশ্বিনী লোহানী বলেন যে সংস্থাটি বন্ধ হওয়ার বিষয়ে যে সব গুজব ঘুরে বেড়াচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি টুইট করেন, “এয়ার ইন্ডিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া বা ওই বিমানসংস্থার সমস্ত কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া সংক্রান্ত সব খবরই গুজব এবং পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এয়ার ইন্ডিয়া নিজেদের পরিষেবা চালিয়ে যাবে । যাত্রী হোক বা কর্পোরেট বা এজেন্ট, কাউকেই এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও দরকার নেই। এয়ার ইন্ডিয়া এখনও দেশের বৃহত্তম বিমান সংস্থা”।
তার আগে, কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জানান যে এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে এই সংস্থার যা অবস্থা তাতে এর বেসরকারিকরণ ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। হরদীপ পুরী বলেন যে আয়করদাতাদের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত, এমন পরিস্থিতিতে সরকার কতক্ষণ এই সংস্থা চালিয়ে যেতে পারবে তা দেখার সময় এসেছে। কেন্দ্রীয় বিমান পরিবহণ মন্ত্রীর মতে, এয়ার ইন্ডিয়া একটি জাতীয় সম্পদ, এটি একটি বড় সংস্থা এবং এর সুরক্ষা রেকর্ডটিও খুব ভাল হয়েছে।