বিশ্বের দীর্ঘতম বিরামহীন যাত্রীবাহী ফ্লাইট চালিয়ে ইতিহাস গড়লো কোয়ানটাস এয়ারলাইন্স

বিশ্বের দীর্ঘতম বিরামহীন যাত্রীবাহী ফ্লাইটের এক সফল পরীক্ষা চালিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কোয়ানটাস এয়ারলাইন্স। কোন বিরতি না দিয়ে প্রথমবারের মতো নিউইয়র্ক থেকে সিডনি পর্যন্ত সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী কোয়ানটাস ।

বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারে ৪৯ জন যাত্রী নিয়ে টানা ১৬ হাজার ২শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ফ্লাইটটির সময় লাগে ১৯ ঘণ্টা ১৬ মিনিট। এখন পর্যন্ত কোন বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের পক্ষে সব আসনে যাত্রী এবং মালামাল নিয়ে এত দূরের পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব হয় নি।

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স গত বছর সিঙ্গাপুর হতে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত প্রায় ১৯ ঘন্টার এক ফ্লাইট চালু করে। বিশ্বে এটাই সবচেয়ে দূরপাল্লার বাণিজ্যিক ফ্লাইট। আর কোয়ানটাস এয়ারলাইন্সও গতবছর অস্ট্রেলিয়ার পার্থ হতে লণ্ডন পর্যন্ত ১৭ ঘন্টার একটানা ফ্লাইট চালু করে। কাতার এয়ারওয়েজের সাড়ে সতেরো ঘন্টার একটি ফ্লাইট আছে অকল্যান্ড হতে দোহা পর্যন্ত।

Travelion – Mobile

দীর্ঘযাত্রার ফ্লাইট পরিচালনার এক গবেষণার অংশ হিসেবে নিউ ইয়র্ক থেকে সিডনি পর্যন্ত এই ফ্লাইটটি চালায় কোয়ানটাস এয়ারলাইন্স। আকাশপথে এমন দীর্ঘ ভ্রমণ বিমানের পাইলট, ক্রু ও যাত্রীদের ওপর কি প্রভাব ফেলে- সেটা জানতেই এই গবেষণা।

নিউইয়র্ক ও সিডনির মধ্যে প্রায় ১৫ ঘণ্টার সময়ের পার্থক্য রয়েছে। দীর্ঘযাত্রা যাত্রীদের ওপর জেটল্যাগের প্রভাব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় এই পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে। এবং তা সফল হয়েছে বলে দাবি কোয়ানটাস কর্র্তপক্ষের।

আকাশে কোয়ানটাস এয়ারলাইন্স
আকাশে কোয়ানটাস এয়ারলাইন্স

পরীক্ষামূলক বলে যাত্রীদের বেশির ভাগই ছিল এয়ারওয়েজের কর্মী। প্রায় ১৬ হাজার কিলোমিটার পথ বিরতিহীনভাবে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি ভর্তি করা ছিল ফ্লাইটটিতে। ফলে জ্বালানি নেওয়ার জন্য কোনো বিরতি দিতে হয় নি। কম ওজনের ব্যাগপত্র সঙ্গে আনার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে যাত্রীদের। তাদের ঘুমের ধরন, মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা ও খাবার গ্রহণের ধরন সম্পর্কে গবেষণার জন্য এই পরীক্ষামূলক ফ্লাইটি ছিলেন দুটি অস্ট্রেলীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিকেরাও ফ্লাইটটিতে ভ্রমণ করেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যাত্রীরা যখন ফ্লাইটে ওঠেন তখন তাদের ঘড়ি মিলিয়ে নেন সিডনির সময়ের সঙ্গে। এরপর পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় যে সময়ে সন্ধ্যা নামে, সেরকম সময় পর্যন্ত যাত্রীদের জাগিয়ে রাখা হয়, যাতে করে তাদের জেটল্যাগ কমানো যায়। ছয় ঘন্টা পর তাদের দেয়া হয়েছিল উচ্চ শর্করা যুক্ত খাবার। এরপর উড়োজাহাজের ভেতরের আলো কমিয়ে দেয়া হয় যাতে করে যাত্রীরা ঘুমাতে পারেন। ফ্লাইটের পাইলট আর অন্যান্য ক্রুদের ব্রেন ওয়েভও মনিটর করা হয়। যাত্রীদের জন্য ছিল শরীরচর্চার ব্যবস্থা। এতগুলো টাইমজোন একবারে পাড়ি দিলে শরীরের কী পরিবর্তন ঘটে, সেগুলো নিয়েও পরীক্ষা চালানো হয়।

২০২২ সালে দীর্ঘ রুটে বিরতিহীন ফ্লাইট চালুর কথা ভাবছে কোয়ানটাস। নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার ব্যাপারে এ বছরের শেষ নাগাদ একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে বলে কোয়ানটাস আশা করছে। পরীক্ষার অংশ হিসেবে সামনের মাসে লণ্ডন থেকে সিডনি পর্যন্ত একই ধরণের দূরপাল্লার একটি ফ্লাইট চালাবে কোয়ানটাস এয়ারলাইন্স।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!