প্রিয়জনের সুখ স্মৃতি
বিবাহিত জীবনের এক মাস পূর্ণ হল রাজের। সিঙ্গাপুরপ্রবাসী রাজ দুই মাসের ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। ইচ্ছে ছিল এসেই বিয়ে করবেন। কিন্তু পরিবারের পছন্দসই মেয়ে খুঁজতে খুঁজতে এক মাস কেটে যায়। রাজের যে মেয়ের পছন্দ হয়, পরিবারের তা পছন্দ হয় না।
আমাদের দেশে ছেলেমেয়ে একে অপরকে পছন্দ করলেই হবে না, পরিবারেরও পছন্দ হওয়া লাগবে তা হলেই বিয়ের পরে তারা সুখী দম্পতি।
রাজ বিয়ের পর নববধূকে নিয়ে সুখেই ছিল। বিবাহ করার পর সে উপলব্ধি করে একজন পুরুষের জীবনে একজন নারী সঙ্গীর খুবই দরকার। রাজের ইচ্ছে করছে না তার ভালোবাসার বউকে একাকী রেখে আবার প্রবাসে যেতে।
রাজ প্রবাসে যাবে না। কথাটা মুহূর্তে পরিবারের অন্যদের কানে পৌঁছে যায়। এর পর যেন সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপর। পৃথিবীতে কথার মতো ভয়ানক অস্ত্র আছে বলে মনে হয় না।
কেউ কেউ বললেন, নতুন বউ ছেলেকে তাবিজ করেছে। কেউবা বললেন,ছেলে বউ-পাগলা। আরও নানা মন্তব্য তার উদ্দেশে ছুড়ে দিতে লাগলেন।
রাজের কান্নায় বুক ফেটে যায়, তাদের এ মন্তব্য শুনে। আট বছর একটানা প্রবাসে ছিল। এই আট বছরে তার সব উপার্জন পরিবারের হাতে তুলে দিয়েও কাউকে খুশি করতে পারল না।
পরিবারের সবাইকে খুশি করতেই একটানা আট বছর একাকী প্রবাস জীবন কাটিয়েছে। তারা কি করে বুঝবে পরিবার-পরিজনবিহীন একাকী থাকার কষ্ট।
অবশেষে নিজের স্ত্রীর ভালোবাসা ত্যাগ করে পরিবারের সবার সুখের জন্য আবার প্রবাসে চলে যাবে রাজ। ভোর ৫টায় তার ফ্লাইট।
নিঝুম রাত সবাই ঘুমিয়ে আছে। শুধু রাজ আর রিয়ার চোখে ঘুম নেই। আলাদা হয়ে যাওয়ার বেদনায় ছটফট করছেন তারা।
রাজের বুকের মাঝে শুয়ে আছেন নির্বাক রিয়া। অবিরাম কষ্ট। দুজনই কষ্ট লুকিয়ে নীরবে একে অন্যকে উপলব্ধি করছেন। তারা সারারাত না ঘুমিয়ে গল্প করেই কাটিয়ে দিলেন।
রাজ মৃদস্বরে রিয়াকে বলল, তুমি বিমানবন্দর এসো না। আমি এখান থেকেই বিদায় নিতে চাই তোমার কাছ থেকে। এই শান্ত সুখ স্মৃতি শুধু তুমি আর আমি। এ ছবিটিই থাকুক আমার বুকে। বিমানবন্দরে শত শত মানুষের ভিড়ে সে ছবি আমি হারাতে চাই না।
বিদায়ের মুহূর্তে রিয়াকে টেনে নিলেন বুকে। আবারও দুবছর কিংবা আরও বেশি সময়ের জন্য মা-বাবা, স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে রাজকে।
প্রিয় মানুষগুলো ছেড়ে বিদেশ থাকা কত যে যন্ত্রণাময় তা একমাত্র একজন প্রবাসীই অনুধাবন করতে পারেন। কষ্টে তাদের বুক চৌচির হয়ে যায়। তবুও হাসি মুখে থাকার অভিনয় করে যেতে হয় সবসময়।