বাবা হাসপাতালে, খাবার না পেয়ে মৃত্যু প্রতিবন্ধী সন্তানের

রাজধানী উহানসহ চীনের হুবেই প্রদেশেই করোনাভাইরাসেআক্রান্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত মানুষের সংখ্যা। পুরো শহরেই যেন এখন মৃত্যুপুরী । এর মধ্যে এমন কিছু ঘটনা কাদাচ্ছে পুরো বিশ্বকে।

তেমনি একটি করুণ ঘটনা হুবেই প্রদেশের হুয়াজিহায়ে শহরের সেরিব্রাল পলসী আক্রান্ত ১৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ইয়ান চেং ও তার পরিবারের জীবনে।

বাবা ও দুই ছেলে একসঙ্গে থাকত, মা মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। বড় ছেলে ইয়ান প্রতিবন্ধী । ১১ বছরের ছোট ছেলেও প্রতিবন্ধী তবে বড় ছেলে থেকে কিছুটা সুস্থ-স্বাভাবিক। চলাফেরায় অক্ষম ইয়ান চেং’র জন্য চব্বিশ ঘন্টাই মনোযোগ প্রয়োজন। বাবা ও ছোট ভাই মিলেই দেখাশোনা করত ইয়ানের।

Travelion – Mobile

বেইজিং ইয়ুথ ডেইলির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭ জানুয়ারি চেং, তার ৪৯ বছর বয়সী বাবা এবং তার ১১ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছোট ভাই চন্দ্র নববর্ষ উদযাপন করতে উহান থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে হুয়াঙ্গ প্রদেশের হুয়াই শহরে তাদের পৈতৃক গ্রামে গিয়েছিল, যেখানে করোনভাইরাসের প্রথম ঘটনা শনাক্ত হয়েছিল ।

তিন দিন পর নিউমোনিয়া আক্রান্ত হন বাবা ইয়ান জিয়াওউইন। এ কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ২২ জানুয়ারি ছোট ছেলেসহ বাবা জিয়াওয়েনকে আইসোলেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষায় ধরা পড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত জিয়াওয়েন।

অন্যদিকে বাড়িতে একা পড়ে থাকে প্রতিবন্ধী ইয়ান চেং, নিয়মিত যত্ন, খাবার বা সঙ্গহীন অবস্থায়। হুইলচেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারত না ইয়ান চেং । হুইলচেয়ারও নিজে চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না তার। কথা বলতে পারত না, নিজে হাতে খেতে পারত না।

ইয়ানের মা মারা যাওয়ার পর থেকে তার সমস্ত দেখভাল বাবাই করতেন, সাথে ছোট ভাইও। বাবা, ভাইকে আইসোলেশনে পাঠানোর পরে তাকে দেখাশোনা করার বা খাওয়ানোর কেউ ছিল না।

ছেলে ভাবনায় অনেক চেষ্টা করেও কোনভাবে ক্যাম্প থেকে বেরোতে পারেননি বাবা ইয়ান জিয়াওউইন। তবে তিনি আইসোলেশন কেন্দ্র থেকে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘উইবু’-তে আবেদন করেছিলেন, তার প্রতিবন্ধী সন্তান খাবার-পানি ছাড়া একা পড়ে রয়েছে ঘরে। সাহায্য চেয়েছিলেন তিনি।

‘নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজন বাবার আর্তি’ শীর্ষক পোস্টে জিয়াওউইন লিখেন ,“আমার দুটি প্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছে। আমার বড় ছেলে ইয়ান চেংয়ের সেরিব্রাল প্যালসি রয়েছে। সে নিজের শরীরকে নড়াচড়া করতে পারে না, কথা বলতে পারে না বা নিজের যত্ন নিতে পারে না। সে গত ছয় দিনের জন্য ঘরে একা পড়ে আছে, তাকে স্নান করতে বা কাপড় বদলাতে এবং খাওয়া বা পান করার কেউই নেই।”

পোস্টটিতে নিজের এবং চেংয়ের বেশ কয়েকটি ছবির সাথে আইসোলেশন কেন্দ্রে করোনাভাইরাসের চিকিত্সার তথ্য এবং চীনা পরিচয়পত্র যুক্ত করেন তিনি। কিন্তু এই পোস্টে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি, কেউ এগিয়ে আসেনি।

ঠিক এক সপ্তাহ পরে, ২৯ জানুয়ারি বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় কিশোর ইয়ান চেংকে। কার্যত এক জায়গায় পড়ে থেকে, খাবার না পেয়ে, পানি না পেয়ে তিলেতিলে মারা গেছে সে।

চেংয়ের মৃত্যুর কারণ বা পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি চীনা কর্তৃপক্ষ। তবে এ ঘটনার পর দুই চীনা কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়েছে প্রশাসন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি এবং হুয়াজিহায়ে শহরের মেয়র।

সেখানকার হেলথ কমিশন জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা প্রায় আড়াই হাজার মানুষের। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!