ফ্লাইট টয়লেট বিতর্ক, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইল কেএলএম

ফ্লাইটে ক্রুদের জন্য সংরক্ষিত রাখা একটি টয়লেটের (ল্যাভেটরি) দরজায় সাটানো ‘সাইন নোট’ বিতর্ক নিয়ে উত্তাল ক্ষোভের মূখে কোরিয়াবাসীর প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে বিশ্বখ্যাত বিমানসংস্থা কেএলএম (এয়ার ফ্রান্স-কেএলএম)। সমালোচনা ওঠে, করোনাভাইরাসের কারণে কোরিয়ার যাত্রীদের দূরে রাখতেই টয়লেটে ‘সাইন নোট’ দেওয়া হয়েছিল, যেহেতু তা শুধু কোরিয়ান ভাষায় লেখা ছিল । অনলাইন এ নিয়ে ক্ষোভের জন্ম দেওয়ার পরে, তা প্রশমনে শুক্রবার (১৪ ফেবুয়ারি) প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে কেএলএম কর্তৃপক্ষ ।

ঘটনাটি ১০ ই ফেব্রুয়ারি, নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডাম থেকে থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলগামী কেএলএম ৮৫৫ ফ্লাইটের। মূলত, ঔ ফ্লা্টে ক্রুদের ব্যবহারের জন্য একটি টয়লেট সংরক্ষিত করা হয়। এ জন্য কেবিন ক্রুদের একজন সাদা কাগজে হাতে লিখে একটি সাইন টয়লেটের দরজায় সেটে দেন।

মাঝে মধ্যে কোন ফ্লাইটে ক্রুদের জন্য বিশেষ একটি টয়লেট সংরক্ষিত রাখা স্বাভাবিক বিষয়। শুধু সাইন দিয়ে সকল যাত্রীর নজরে আনতে হয় হয়। এ নিয়ে যাত্রীদের কোন আপত্তি থাকার কথা নয়।

Travelion – Mobile

আপত্তি আর সমালোচনা জন্ম নেওয়া কেএলএম ফ্লাইটের ইস্যুটি উদভূত হয়েছে ব্যবহৃত ভাষা থেকে। এটি কেবল কোরিয়ান ভাষায় দেওয়া হয়েছিল, ডাচ বা ইংরেজিতে নয় । ফলস্বরূপ, এটি ভাবা যেতে পারে যে সাইনটি কেবল কোরিয়ানদের দ্বারা পড়ার উদ্দেশ্য।

ফ্লাইট টয়লেট বিতর্ক, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইল কেএলএম 1
শুধু কোরিয়ান ভাষায় লেখা টয়লেট নোট, যা নিয়েই সমালোচনার ঝড়

কোরিয়া টাইমসের মতে, ফ্লাইটটির ২৭৭ জন যাত্রীর মধ্যে ১৩৫ জন বা প্রায় অর্ধেক যাত্রী ছিল কোরিয়ান। একজন কোরিয়ান যাত্রীর আপত্তিতে কেবিন ক্রু দ্রুত নোটটির একটি ইংরেজী সংস্করণ টয়লেটে দরজায় লাগিয়ে দিয়েছিলেন।

সিওলের ইনচিয়ন বিমানবন্দর পর্যন্ত ১০ ঘন্টার যাত্রা শেষে ঔ ফ্লাইটের একজন যাত্রী সোমবার অনলাইন কোরিয়ান ভাষায় হাতে লেখা “কেবলমাত্র ক্রু সদস্যদের জন্য” সাইন নোটটির ছবিটি শেয়ার করেন । ঔ যাত্রী কেএলএমকে দক্ষিণ কোরিয়ার যাত্রীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ এনেছে কারণ এই সাইনটি শুধুমাত্র কোরিয়ান ভাষায় ছিল।

যাত্রীর পােস্ট, দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হয় যার প্রেক্ষিতে অনলাইনে ফুসে ওঠে কােরিয়ানরা। সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে শত শত পোস্ট, টুইট করা হয়, যেগুলোর লাইক, কেমন্টস আর রিটুইটও হয়েছে হাজার । এছাড়া কোরিয়ান টুইটারে ট্রেন্ডিং হয়েছিল ‘বয়কট কেএলএম’ হ্যাশট্যাগ।

একজন টুইটার ব্যবহারকারী ইংরেজি এবং কোরিয়ান ভাষায় টুইট করেন, “প্রিয় কেএলএম … আজ, আপনি একেবারে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে আপনি বর্ণের সাথে বৈষম্য করছেন। অজুহাত হিসেবে করোনাভাইরাস ব্যবহার করা। আমার বন্ধু এবং কোরিয়া আপনাদের কাছে বিশাল ক্ষমা পাওনা হল।”

সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা ঝড় বিশেষ করে কোরিয়ার জনগণ ফুসে ওঠলে টনক নড়ে কেএলএম কর্তৃপক্ষের। তারা দ্রুতসংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কোরিয়াবাসীর কাছে ক্ষমা ও আত্মপক্ষ সমর্থনে উদ্যােগী হয়।

শুক্রবার, রাজধানী সিউলে ফোর সিজন হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে কেএলএমের কর্মকর্তারা মাথা নিচু করে বলেন যে, তারা বৈষম্যের অভিযোগকে “অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে” নিয়েছেন এবং আবারও এটিকে আটকাতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এয়ার ফ্রান্স-কেএলএমের আঞ্চলিক মহাব্যবস্থাপক গাইলেউম গ্লাস বলেছেন,”এটি একজন মানুষের একটি ভুল এবং আমরা এটিকে হালকাভাবে নেব না। আমরা গভীরভাবে দুঃখিত যে এটিকে বৈষম্য হিসাবে দেখা হয়েছিল, এটি ক্রুদের উদ্দেশ্য ছিল না।”

ঔ ক্রু জানান যে সাইনটিতে কেবল কোরিয়ান ব্যবহার করা কেবল একটি ভুল ছিল। যাত্রীরা অভিযোগ করার পরে একটি ইংরেজি বিজ্ঞপ্তি যুক্ত করা হয়েছে, গ্লাস জানিয়েছে।

ক্রুদের জন্য ল্যাভেটরি (টয়লেট) গুলি ক্রুদের জন্য সংরক্ষিত রাখা কেএলএম নীতি নয়, তিনি যোগ করেন।

“আমরা বিষয়টি নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত করছি এবং ভবিষ্যতে এ জাতীয় ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ছাড়াও, আমরা গতকাল বিশ্বব্যাপী কেএলএম সকল ক্রুদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছি শুধু ক্রুদের ব্যবহারের জন্য ল্যাভেটরিগুলি সংরক্ষণের অনুমতি নেই এবং আমরা সিউলে ছেড়ে যাওয়ার বা পৌঁছানোর আগে ফ্লাইটের প্রতিটি ক্রুকে ব্রিফিংয়ে এটি স্মরণ করিয়ে দেব”, সংবাদ সম্মলনে বলেন কেএলএম কর্মকর্তা গাইলেউম গ্লাস।

রয়টার্স জানায়, এর আগের দিন শুক্রবার পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ডাচ রাষ্ট্রদূত জোয়ান ডুরনেওয়ার্ড দেশের পরিবহনমন্ত্রী কিম হিউন-মিয়ের প্রতি “ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন”। তার আগে বুধবার, দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবহন মন্ত্রক কেএলএমকে তার “বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা” সম্পর্কে সতর্ক করে একটি বিবৃতি জারি করে এবং এটি পুনরায় না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য সংস্থাকে আহ্বান জানিয়েছে।

কেএলএম-পুরাে নাম কোনিন্কলিজকি লুচট্ভার্ট মাটস্চাপিজ বা রয়েল ডাচ বিমানসংস্থা নেদারল্যান্ডের পতাকাবাহী বিমানসংস্থা। ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কেএলএম বিশ্বের প্রাচীনতম বিমানসংস্থা যে এখনও এর মূল নামে চালিত হচ্ছে। আমস্টারডামের নিজস্ব হাব থেকে পরিচালিত,কেএলএম গ্রুপ ২১৪ উড়োজাহাজের বহর নিয়ে ৯২ টি ইউরোপীয় এবং ৭০টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে চলাচল করছে।

২০০৪ সালে কেএলএম একীভূত হয় ফ্রান্সের জাতীয় বিমানসংস্থা এয়ার ফ্রান্সের সঙ্গে । বর্তমানে এয়ার ফ্রান্স-কে এল এম গ্রুপ এর একটি অংশ এবং সেই সাথে সংস্থাটি স্কাই টীম এয়ারলাইন জোট এর সদস্য।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!