করোনায় ৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির আশংকা বিশ্ব এভিয়েশনে

করোনাভাইরাস বা কোভিড ১৯ এর প্রভাবে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোকে ৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত লোকসানের মাসুল গুণতে হতে পারে।

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইসিএও) থেকে এমনই এক ধারণা করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, চীনা থেকে এবং চীনে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় সারা বিশ্বের এভিয়েশন খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার আশংকা তৈরি হলেও জাপান ও থাইল্যান্ডের পর্যটন বাজার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

উভয় দেশের এভিয়েশনের বাজারকে অন্তত এক বিলিয়নেরও বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে এমন দূর্যোগে তারল্য সংকট দেখা দেয়ায় নিজেদের উড়োজাহাজকে অন্যত্র কাজে লাগানোর জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে চীনা বিমানসংস্থাগুলো।

Travelion – Mobile

কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সারা বিশ্বের বিমানসংস্থাগুলোতে ফ্লাইট বাতিলের হিড়িক পড়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে। বিদেশী সংস্থাগুলোর বেশিরভাগই চীনে তাদের ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করেছে আর চাহিদার ধ্বস হওয়ায় চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সেবার পরিসর কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থা জানিয়েছে যে, ৭০ টির মত বিমানসংস্থা চীনের সাথে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সম্পূর্ণভাবে বাতিল করেছে। অন্যদিকে আরো ৫০ টি অপারেশন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

তারা জানিয়েছে, ২০২০ সালের প্রথম চার মাসে প্রত্যাশার তুলনায় ২০ মিলিয়ন যাত্রী হারাবে বিমান সংস্থাগুলো। এটি আসন বা যাত্রী সংখ্যায় প্রায় ৪০ শতাংশ পতন যা ৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসবে।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আইসিএও জানিয়েছে, “২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ এর প্রথম কোয়ার্টারে চীনগামী এবং চীন থেকে সব আন্তর্জাতিক রুটে ৯% সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে আইসিএও’র প্রাথমিক হিসেব মতে, ২০২০ এ সামগ্রিকভাবে উল্টো যাত্রী ৩৯ থেকে ৪১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে যা সংখ্যায় ১৬.৪ থেকে ১৯.৬ মিলিয়ন।

তারা্ আরো জানায়, সবমিলিয়ে অন্তত ৮০ শতাংশ বিদেশি বিমানসংস্থা তাদের ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে এনেছে এবং সেবা বাতিল করেছে। অন্যদিকে চীনা বিমানসংস্থার ক্ষেত্রে এ হিসেব ৪০ শতাংশ। তবে আইসিএও’র পরিসংখ্যানে কার্গো বিমান বা এয়ার নেভিগেশন সেবা প্রদানকারি সংস্থা বা বিমানবন্দরগুলি অন্তর্ভূক্ত নয়। করোনায় ৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির আশংকা বিশ্ব এভিয়েশনে 1
চীনা পর্যটকদের আনাগোনা বিপুলভাবে কমে যাওয়ায় জাপানের পর্যটন খাত মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আইসিএও বলছে, ২০২০ এর প্রথম চার মাসে জাপানের পর্যটন হারাতে পারে ১.২৯ বিলিয়ন ডলার। এর পরপরই ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে থাইল্যান্ডের পর্যটন। কোভিড ১৯ এর প্রভাবে তাদের পর্যটন খাত হারাতে পারে ১.১৫ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব।

আরো আশঙ্কার বিষয় হল করোভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় এর সামগ্রিত ক্ষতি এখনও পরিস্কার নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন এর ক্ষতির এখনও অনেক দেখার বাকী যেটি সার্সের দূর্যোগের আর্থিক মন্দাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আইসিএও জানায়, এইসব তথ্য কেবলমাত্র প্রাথমিক কিছু পূর্বাভাস দিবে যেহেতু এখনও করোনা ভাইরাসের পুরো প্রভাব আমাদের দেখার বাকী আছে।

সম্প্রতি এভিয়েশন খাতের একটি বিখ্যাত লিজিং প্রতিষ্ঠান এভালন ফিনান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছে, চীনা বিমানসংস্থাগুলো তাদের ব্যবসায় তারল্য সংকট কাটানোর জন্য উড়োজাহাজগুলোকে অন্যত্র লিজ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ডমনাল স্লেটারি বলেন, বিমান শিল্পে দূর্যোগ নেমে আসায় চীনা বিমানসংস্থাগুলো নগদ সংরক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ দিতে শুরু করেছে। আমরা সেটাই এখানে দেখছি ।

এদিকে সম্প্রতি এক সংবাদে জানা গেছে, ভিয়েতনাম এয়ারলাইন্স করোভাইরাস কারণে প্রতি সপ্তাহে ১০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি গুনছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা তাদের আয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে তাদের কম ব্যবহৃত কিছু উড়োজাহজকে নিলামে তোলার কথা ভাবছে।

বিশ্বের এভিয়েশন খাতে করোনা ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পেতে যদিও আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে, এটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে যে শিগগিরি এটি থেকে মুক্তি মিলছে না।

আগের খবর
করোনায় বড় ধাক্কাটা লাগবে এশিয়ার এভিয়েশনে
করোনা প্রভাবে জৌলুস হারিয়েছে সিঙ্গাপুর এয়ার শো

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!