প্রবাসে যাচ্ছেন ১ লাখের বেশি বাংলাদেশি নারী কর্মী
বাংলাদেশ থেকে ১৯৯১ সালে প্রথম নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া শুরু হয়। সেই থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৮ জন নারী কর্মী কাজ করতে বিদেশে গেছেন। এখন বছরে এক লাখের বেশি নারী কাজ করতে বিদেশে যাচ্ছেন, মূলত মধ্যপ্রাচ্যে। এর মধ্যে সৌদি আরব হচ্ছে তাঁদের প্রধান গন্তব্যস্থল এবং বেশিরভাগই গৃহকর্মী পেশায়। যদিও তাঁদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ যাচ্ছেন জর্ডানে, যাঁরা পোশাক খাতের কর্মী।
প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, প্রথম বছর অর্থাৎ ১৯৯১ সালের বিদেশে যান ২ হাজার ১৮৯ জন নারী কর্মী। এরপর প্রথম ৬ বছর সর্বনিম্ন ১ হাজার ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯০০ জন যেতে পেরেছিলেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যেতে পেরেছেন গড়ে ৬০০ জন করে। ২০০২ সাল থেকে নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া বাড়তে থাকে এবং ২০০৬ সালে ১৮ হাজার নারী কর্মী বিদেশে যান। বাড়তে বাড়তে ২০১১ সালে তা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। দুই বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালে তা বেড়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি, অর্থাৎ ৫৬ হাজার হয়।
তারও দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৫ সালে বিদেশে যান এক লাখের বেশি নারী কর্মী। ব্যতিক্রম হিসেবে কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার ধাক্কায় ২০২০ সালে তা কমে ২২ হাজারে নেমে আসে। যদিও পরের বছর ২০২১ সালেই তা বেড়ে হয় ৮০ হাজার এবং ২০২২ সালে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৫৬ জনে উন্নীত হয়।
মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ তথ্য জানাচ্ছে, ২০২৩ সালের ৬ মাসে ৪২ হাজার ২২৬ জন নারী কাজ করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। মাসিক প্রবণতা বিবেচনায় নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বছর শেষে এবারও বিদেশগামী নারী কর্মীদের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রধান গন্তব্যস্থল সৌদি আরব হলেও জর্ডান, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, লেবানন, যুক্তরাজ্য এবং মরিশাসে নারী কর্মীরা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় যাচ্ছেন। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইতালি, হংকং, সাইপ্রাস ইত্যাদি দেশেও নারীরা কাজ করতে যাচ্ছেন। দুই বছর ধরে কিছু নারী যাচ্ছেন ব্রুনেই, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, মোট নারী কর্মীর ৭০ শতাংশই যাচ্ছেন সৌদি আরবে। আর ৯ শতাংশ করে যাচ্ছেন জর্ডান ও ওমানে।
প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের একমাত্র জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল)। তাঁদের মাধ্যমে গত বছর জাপান, কোরিয়া, হংকং, কুয়েত, জর্ডান, মরিশাস, সেশেলস এবং ক্রোয়েশিয়া—এই আট দেশে গেছেন বাংলাদেশের কর্মীরা। ২০২২ সালে বোয়েসেলের মাধ্যমে ১৮ হাজার ২৫৪ জন কাজ করতে বিদেশে গেছেন, যার ৮৫ শতাংশই নারী। অর্থাৎ, ওই বছরে ১৫ হাজার ৬৪৬ জন নারী কর্মী বোয়েসেলের মাধ্যমে বিদেশে গেছেন। বোয়েসেলের মাধ্যমে যাওয়া নারীদের মধ্যে ১৩ হাজার ৭৫৭ জনের ১ টাকাও খরচ হয়নি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, দুটি বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ। একটি হচ্ছে নারীদের বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার অধিকার, আরেকটি হচ্ছে তাঁদের সুরক্ষা। অধিকার কোনোভাবেই খর্ব করা যাবে না। তবে সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে অনেক কিছু করার আছে।
তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, যে টাকা খরচ করে নারীরা বিদেশে যান, কয়েক মাসের মধ্যেই নারীরা তা রোজগার করে দেশে পাঠাতে পারেন। অথচ পুরুষ অভিবাসীদের অনেক ক্ষেত্রে এ রোজগার করতে দুই বছরও লেগে যায়। দেশের মোট প্রবাসী আয়ের অন্তত ৫ শতাংশ অভিবাসীদের সেবা দিতে বরাদ্দ রাখা চাই। এখন তা আছে দশমিক ১৪ শতাংশ।
কাজ করতে গিয়ে বিদেশে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হন নারীরা। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আর এ কারণেই আমরা চাই, যাঁরা বিদেশে যাবেন, তাঁরা যেন যত দূর সম্ভব, শিক্ষিত হয়ে যান। বিপদে পড়লে কেউ যেন অভিযোগ হলেও করতে পারেন।’
তিনি জানান, বিদেশগামী নারী কর্মীদের সুরক্ষা দিতে সরকার ইতিমধ্যে গঠন করেছে ‘নারী কর্মী সুরক্ষা সেল’। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে শ্রমকল্যাণ উইংয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে ‘সেফ হোম’। কোনো কারণে বিপদে পড়লে নারীকর্মীদের উদ্ধার করে এসব সেফ হোমে আশ্রয় দেওয়া হয়।
সুরক্ষা নিয়ে তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, বিদেশে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নারীরা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় সাক্ষাৎ করতে পারলে কিংবা সাক্ষাৎ করতে না পারলেও টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ তৈরি করতে পারলে তাঁদের সুরক্ষা অনেকটা বাড়বে। কাজটির সমন্বয়ে অবশ্য দূতাবাসকে থাকতে হবে।
তবে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত থাকা অবস্থায় একাধিক গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকার একজন উপসচিবকে যে চাকরিচ্যুত করেছে, শুধু এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন তিনি। বলেন, প্রকাশ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এ ধরনের অপরাধীদের। সূত্র : প্রথম আলো
প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ