দূর থেকে মেয়েকে নার্স মায়ের আলিঙ্গন, যে আবেগ ছুঁয়েছে হৃদয়

করোনাভাইরাস ট্র্যাজেডি

আর্তের সেবায় ব্যস্ত মা। তাই সন্তানকে ছুঁয়ে বা জড়িয়ে ধরে তার কান্না থামানোর পরিবেশ বা অবসর কোনওটাই নেই। ফলে দূর থেকে মেয়েকে আদর ছুঁড়ে দিলেন এক নার্স মা। চীনের হেনান প্রভিন্সের এই বেদনাদায়ক ঘটনাতে এখন নেটিজেনদের চোখে জল। সম্প্রতি মা ও মেয়ের দূর থেকে করা আলিঙ্গনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। চীনের জিনহুয়া নিউজের টুইট করা এ আবেগঘন এ ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে নেটিজেনদের মধ্যে। মন জয় করে নিয়েছে অনেকের। অনেকেকে আবার কাঁদাচ্ছে।

চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে রাতের ঘুম হারাম চিকিৎসক ও নার্সদের। তাঁদের অধিকাংশ সময় কাটছে হাসপাতালেই। রোগ এতটাই ছোঁয়াচে যে রোগীর সঙ্গে প্রায় এক ঘরে হয়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। পরিবার ও প্রিয়জনদের থেকে আলাদা থেকে চিকিৎসা দেওয়া এক নার্সের সঙ্গে তাঁর মেয়ের দূর থেকে আলিঙ্গনের আবেগঘন ভিডিও তাই হয়েছে ভাইরাল। নেটিজেনরা সবাই তাঁদের কুর্নিশ জানাচ্ছে।

চীনের জিনহুয়া নিউজের টুইট করা এ আবেগঘন ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, বহুদিন ধরে মাতৃসঙ্গ না পেয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছে এক শিশু । কিন্তু সন্তানকে স্পর্শ করে বা গলা জড়িয়ে সেই কান্না থামাতে অপারগ তার মা, পেশায় নার্স এক তরুণী। তাই সান্ত্বনা দিতে দূর থেকেই হাত ছড়িয়ে তাকে আদর করছেন ওই নার্স।

Travelion – Mobile

YouTube video

মা লিউ হাইয়ান করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসায় ব্যস্ত। দুজনেরই মুখ ও মাথায় রোগ প্রতিরোধকারী মাস্ক। ছোঁয়াচে রোগে মেয়ে সংক্রমিত হতে পারে, তাই মা ও মেয়ে দূর থেকে দেখা ও কথা বলেছেন। আলিঙ্গন পর্যন্ত করতে পারেননি। মা ও মেয়ে একে অপরের সঙ্গে দূর থেকেই আলিঙ্গন করেছেন। কারণ, শারীরিকভাবে তাঁরা আলিঙ্গন করতে পারবেন না। লিউ মেয়েকে আশ্বাস দেন যে করোনাভাইরাসের লড়াইয়ে জয়ী হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যাবেন।

লিউ হাইয়ান চীনের হেনান প্রদেশের ফুগউ পিপলস হাসপাতালে গত মাস থেকে করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা কাজ করছেন। নয় বছরের মেয়ের সঙ্গে দেখা নেই কয়েক দিন ধরে। ৩১ জানুয়ারি মেয়ে চেং শিওয়েনের সঙ্গে সর্বশেষ দেখে হয়েছে মা লিউয়ের। করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগ হওয়ায় কোনো সুস্থ কারও সংস্পর্শে আসা যাবে না। কিন্তু মা ও নয় বছরের শিশু মেয়ের তো দেখা হওয়া দরকার। ১০ দিন মা লিউ হাইয়ানের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে আসে চেং শিওয়েন।

ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, চেং তাঁর মা লিউয়ের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে আসে। দুজনেরই মুখ ও মাথায় মাস্ক পরা। চেং শিওয়েন কাঁদতে কাঁদতে মাকে বলে, ‘মা, তোমার কথা খুব মনে পড়ছে আমার।’ উত্তরে মা বলেন, ‘মা এখন দৈত্যের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। ভাইরাসটাকে শেষ করেই আমি জলদি বাড়ি ফিরব।’ এরপর মা-মেয়ে একে অপরের সঙ্গে দূর থেকেই আলিঙ্গন করেন। কারণ, শারীরিকভাবে তাঁরা আলিঙ্গন করতে পারবে না। এরপর নার্স তাঁর মেয়েকে ভালোভাবে থাকতে বলে তাঁর দিকে হাত নেড়ে চলে যান। লিউ হাইয়ান মেয়েকে আশ্বাস দেন যে করোনাভাইরাসের লড়াইয়ে জয়ী হয়ে তিনি বাড়ি ফিরবেন।

অনেক দিন পর মাকে দেখতে আসবে, তাই সঙ্গে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিল ওই মেয়ে চেং শিওয়েন।। যেটা মায়ের থেকে কয়েকফুট দূরে রেখেই ফিরে যেতে হয়েছে তাকে। শেষবার হাত নাড়িয়ে হাসপাতাল ছাড়ে ওই কিশোরী। লিউ হাইয়ান সেখান থেকে টিফিন বক্সটা নিয়ে যায়। যেহেতু করোনাভাইরাস নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ছড়াচ্ছে তাই কয়েকফুট দূর থেকেই মা ও মেয়ে ভাগ করে নিয়েছে তাদের বিচ্ছেদ যন্ত্রণা, ভিডিওয়ের শেষ দৃশ্যে।।

এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই এই ভিডিও সারাবিশ্বের লাখ লাখ মানুষ দেখে ফেলেছে। । বেশিরভাগই মা-মেয়ের এ ভালোবাসাকে স্যালুট জানিয়েছে। শিগগিরইদেখা হবে দুজনের, সে দোয়াও করেছেন অনেকেই। একজন বলেছেন, ‘এটা বেদনার ঘটনা। এটা মর্মস্পর্শী। আমার আশা, মা ও মেয়ে শিগগিরই আলিঙ্গন করবেন। সবাই এ রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পাবেন।’ অপর একজনের মন্তব্য, এ ভিডিও দেখার পর চোখের পানি ধরে রাখা মুশকিল। চীনের প্রতিটি পরিবার কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে এটা দীর্ঘমেয়াদি নয়, সবকিছুই দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।

১৭ বছরে আগের এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে এক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘সার্সভাইরাসের সময় ঠিক প্রায় এমনটাই আমার সঙ্গে হয়েছিল।’ অপর একজন বলেছেন, ‘আমি এদের সাহায্য করতে পারব না জানি। কিন্তু আমি তাদের জন্য কাঁদতে তো পারি। ওই নার্সের জন্য টুপিখোলা অভিনন্দন।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!