দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নিহত

তিনদিন মৃত্যের সাথে লড়াই করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন কৃঞ্চাঙ্গ সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবাসী বাংলাদেশি আনোয়ার হোসেন খান (৪৫)। গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) জোহানেসবার্গের অদুরে কসমো সিটিতে এশার নামায পড়তে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসাপাতালে চিকিৎসায় থাকা অবস্থায় স্থানীয় সময় রোববার গভীর রাত ২ টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ৭ টায়) মারা যান এ্ই বাংলাদেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধা।

নিহত আনােয়ার হোসেন খান চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইস রসুলাবাদ গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলামের সেজ ছেলে। দেশে তার স্ত্রী এবং চতুর্থ ও নার্সারীতে পড়ুয়া দুই ছেলে ও এক শিশু কন্যা রয়েছে।

আনোয়ারের বোনের জামাতা সাউথ আফ্রিকা প্রবাসী মুহাম্মদ শাহাজান জানান, কসমো সিটিতে বাংলাদেশি মসজিদে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে জিকির-আজগার করা হয়। সেখানে আনোয়ার নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। ঘটনার দিন তিনি এক পাকিস্তানিকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশি আবু বকরের দোকানের যায়। আবু বকরকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি থেকে নেমে ডাকতে গেলে সেখানে ওৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাদেরকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে; আনোয়ারের গায়ে তিনটি গুলি বিদ্ধ হয়।

Travelion – Mobile

তিনি আরও জানান, অন্য বাংলাদেশিরা গুরুতর অবস্থায় আনােয়ারকে উদ্ধার করে দ্রুত স্থানীয় হেলেন জোসেফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ৩ দিনে তাকে দুইবার অস্ত্রোপাচার করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয় নি। আইসিইউ-তে চিকিৎসায় থাকা অবস্থায় রোববার মধ্যে রাতে মারা যান তিনি।

সন্তানদের সানিধ্যে আনােয়ার হোসেন খান
সন্তানদের সানিধ্যে আনােয়ার হোসেন খান

ধারণা করা হচ্ছে, সংঘবদ্ধ কৃঞ্চাঙ্গ সন্ত্রাসীরা ঐ বাংলাদেশি দোকানের সামনে ডাকাতির উদ্দেশ্যে অবস্থান করছিলো। দোকান লাগানোর সময় তারা ডাকাতির চেষ্টা করবে। এমন সময় আনোয়ার খান সেখানে গেলে সন্ত্রাসীরা মনে করে দোকানদার হয়তো তাদেরকে ডেকে এনেছে। অনেকটা ভয় থেকেই ডাকাতরা তাদের উপর গুলি ছুড়ে।

জানা যায়, ময়না তদন্ত শেষে নিহত আনোয়ার হোসেন খানের মরদেহ দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে বিমানে করে দেশে পাঠানো হবে বলে আশা করা যাচ্ছে ।

প্রতিবেশী প্রবাসীদের কাছ থেকে জানা যায়, আনোয়ার জোহানেসবার্গের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ব্যবসা করতেন। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশে গিয়ে একটানা ৯ মাস ছিলেন আনােয়ার খান। গত ২২ সেপ্টেম্বর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় কর্মস্থলে ফিরে আসেন। এক মাসের ব্যবধানে তাকে দেশে ফিরতে হচ্ছে লাশ হয়ে।

নিহত আনোয়ারের বন্ধু ওমানপ্রবাসী আব্দুল মান্নান জানান, আনোয়ার খাঁন অনেক অমায়িক একজন মানুষ ছিলন । তার কোন শত্রু থাকার কথা নয়। লোহাগাড়া জাফর আহমেদ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র আনােয়ার খান সাতকানিয়ার এক সময়ের তুখোড় ফুটবলারও ছিলেন।

তাঁর এমন নির্মম মৃত্যুতে পরিবার ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা গভীর শোকাহত। শোক জানাতে কয়েকজন প্রবাসী বলেন, ডাকাতদের নিষ্টুর গুলিতে এতিম হলো আনোয়ারের সন্তানরা। একজন নামাজি, নম্র ভদ্র হিসেবে পরিচিত আনোয়ার অবশেষে লাশ হয়ে দেশে ফিরছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!