তালেবান-যুক্তরাষ্ট্র শান্তি চুক্তি সই

আফগানিস্তানে দীর্ঘ দেড় যুগের সহিংসতা বন্ধে ঐকমত্যে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান। দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে দুই পক্ষ শান্তি চুক্তি সই করেছে।

চুক্তি অনুযায়ী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে রাজি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও তালেবানের শীর্ষ নেতারা কাতারের রাজধানী দোহায় আজ শনিবার এই শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। তবে আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

Travelion – Mobile

নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আল-কায়েদা বা অন্য কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে সক্রিয় হতে দেওয়া হবে না—চুক্তিতে এ ব্যাপারেও রাজি হয়েছে তালেবান। ২০১১ সাল থেকেই শান্তি চুক্তিতে আসার ব্যাপারে দোহায় বৈঠক করে আসছেন তালেবান নেতারা। ২০১৩ সালে দোহায় তালেবানের একটি কার্যালয়ও খোলা হয়। যদিও পরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তালেবান নেতারা ঘোষণা দেন, শান্তি আনার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তাঁরা। কিন্তু শুরু থেকেই আফগান সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে অনীহা জানিয়ে আসছিলেন তাঁরা।

আফগান সরকারকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুল’ বলেও অভিহিত করেন তালেবান নেতারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে সহিংসতা বন্ধের ঘোষণা দেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতারা ২০ সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে ৫ হাজার ৪০০ সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন।

২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে আত্মঘাতী হামলার পর আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ১৯ বছর ধরে আফগানিস্তানে চলমান সহিংসতায় প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা নিহত হন। এখনো আফগানিস্তানে প্রায় ১২ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন আছে।

এদিকে বিশ্বের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের তালেবান গোষ্ঠীর মধ্যে অনুষ্ঠিত শান্তি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান। ঢাকার পাকিস্তান মিশন রোববার (১ মার্চ) এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।

বার্তায় বলা হয়, কাতারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাওয়াতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মুহাম্মদ কোরেশি মার্কিন-তালেবান চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই শান্তি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রতীকী অর্থে ও ভাবার্থে আফগানিস্তান ও এর আশপাশের অঞ্চলের জন্য এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।

শাহ মুহাম্মদ কোরেশি বলেন, এই শান্তি চুক্তিটি আফগানিস্তানে শান্তি ও পুনর্মিলন আনতে মার্কিন ও তালেবানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি এই চুক্তি বাস্তবায়নে কাতারের আমিরের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, এই আগ্রগতির পর আফগানিস্তানের নিজেদের মধ্যে আপস-আলোচনা করাটা হবে যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ। তিনি আশাবাদ জানান, আফগানিস্তান এই ঐতিহাসিক সুযোগ গ্রহণ করবে এবং আশপাশের অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই শান্তি আনতে কার্যকরভাবে রাজনৈতিকে সমঝোতায় আসবে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি দেওয়ার ওপরও জোর দিয়ে বলেন, পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন শুরু করতে আফগানিস্তানের পূর্ণ সমর্থনের প্রয়োজন হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!