চীনের সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের ২০ সেনা নিহত

কাশ্মীরের লাদাখে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চীনের সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন কর্নেল পদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। সোমবার দিবাগত রাতে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

হতাহতের বিষয়টি ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্বীকার করে দাবি করা হয়, চীনেরও বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হয়েছে। সংবাদমাধ্যম ভারতের এনএআই সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, চীনের অন্তত ৪৩ সেনা হতাহত হয়েছে। তবে চীন এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। উত্তেজনা নিরসনে চীনের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে ভারতের এক সেনা গতকাল নিশ্চিত করেছেন।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান ভারতের প্রতি একতরফা পদক্ষেপ গ্রহণ করে পরিস্থিতিকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, গত সোমবার ভারতের সেনারা দুই দফা সীমান্ত অতিক্রম করে চীনের অংশে প্রবেশ করে। এ সময় দুই দেশের সেনারা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকায় জানানো হয়, সংঘাতের জন্য ভারতীয় সেনারা দায়ী।

Travelion – Mobile

পরমাণু শক্তিধর এ দুটি দেশের মধ্যে বেশ কয়েক দিন ধরেই লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা চলছিল। তবে গোলাগুলির কথা গত চার দশকে শোনা যায়নি। ভারতের গণমাধ্যমে সম্প্রতি বারবারই উভয় পক্ষের মধ্যে সফল আলোচনা এবং উত্তেজনা প্রশমনের কথা জোর দিয়ে বলা হচ্ছিল।

ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গলওয়ান উপত্যকায় (লাদাখের) উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা চলাকালীনই গতকাল (সোমবার) রাতে হঠাৎ সংঘর্ষ বাধে। তাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তাসহ ২০ সেনার মৃত্যু হয়েছে। দুই পক্ষের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৈঠক করছেন।’ এর আগে তারা এক বিবৃতিতে এক সেনা কর্মকর্তা ও দুই সদস্যের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল। তবে ঠিক কী কারণে রাতের অন্ধকারে দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হলো, তা নিয়ে কিছু জানায়নি ভারতের সেনা বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ঘটনার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল বিপিন রাওয়াত গতকাল দুপুরে স্থল, নৌ ও বায়ুসেনার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন।

YouTube video

ভারত বহুদিন থেকেই দাবি করে আসছে, চীন কাশ্মীরের ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে রেখেছে। এ নিয়ে ১৯৬২ সালে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধে ভারত পরাজিত হয়। এরপর এ সংকট নিরসনে বহুবার দুই পক্ষ বসেছে। তবে কোনো সমাধান আসেনি। যদিও ১৯৭৫ সালের পর থেকে এ সীমান্তে গোলাগুলির কথা আর শোনা যায়নি।

দুই পক্ষের মধ্যে সংকটের বহু কারণ রয়েছে। তবে মূল সংকটটি কৌশলগত। এবারের সংকটের সূত্রপাত হয় ভারতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সড়ক নির্মাণ শুরু করলে। এই সড়ক ভারতকে সংকটের সময় দ্রুত সেনা ও রসদ সরঞ্জাম সীমান্তে মোতায়েন করার সুযোগ করে দেবে। বিষয়টি চীনকে ক্ষুব্ধ করে। গত মে মাস থেকেই দুই পক্ষ এ সড়ক নির্মাণ নিয়ে বিতর্কের জের ধরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা মোতায়েন শুরু করে। এর মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার হাতাহাতির কথাও শোনা গেছে। তবে ১৯৭৫ সালের পর এই প্রথম সেনা নিহত হওয়ার কথা জানা গেল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!