ওমানে প্রবাসী কর্মীদের এনওসি প্রথা বাতিলে যেসব সুবিধা আসবে
মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবান্ধব দেশ ওমানে প্রায় ৬ বছর পর এনওসি (নো আবজেকশন সার্টিফিকেট) প্রথা বাতিলের পরিকল্পনা ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শত শত প্রবাসী কর্মীদের চাকরি পরিবর্তনের পথ সুগম করেছে।
আগামী বছরের ১ লা জানুয়ারি থেকে এনওসি বা অনাপত্তি সনদ বাতিলের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ওমান সরকার। ফলে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী কর্মীরা স্পন্সর বা আরবাবের ছাড়পত্র (এনওসি) ছাড়াই এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি বদলাতে পারবেন। বর্তমানে প্রবাসীদের চাকরি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার কাছ থেকে এনওসি নেয়াটা বাধ্যতামূলক।
গেল সপ্তাহে দেশটির পুলিশ এবং কাস্টমসের ইন্সপেক্টর জেনারেলের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলেও মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এনওসি প্রথা বাতিলের পরিকল্পনা নিশ্চিত করেছে সরকার। জানানো হয়েছে, শ্রমবাজারকে আরো প্রতিযোগিতামূলক আর কর্মক্ষম করতেই এর শর্ত সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকারী বিবৃতিতে বলা হয়, এনওসি নীতি বাতিল হলে ব্যবসা মালিক এবং শ্রমিক দুইপক্ষেরই অধিকার রক্ষা করা হবে। এক্ষেত্রে একটি শ্রম চুক্তির মাধ্যমে তাদের মধ্যে সম্পর্ক এবং বাধ্যবাধকতা নিয়ন্ত্রণ করা হবে যা ওমানে ‘গোপন বাণিজ্য’ মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে।
এ ছাড়াও ব্যবসায়ী মালিকদের জন্য অনেক সুবিধা বয়ে আনবে। যার মধ্যে রয়েছে শ্রম চুক্তির নীতিতে সম্মতি প্রকাশ করা যা নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিকদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করবে এবং দুই পক্ষের অধিকার এবং কর্তব্যের নিশ্চয়তা প্রদান করবে।
এই চুক্তি গোপনীয়তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাদের নতুন মাত্রায় সুরক্ষা প্রদান করবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সবচেয়ে বড় বিষয় হবে ওমানি শ্রমবাজারকে আরো প্রতিযোগিতামূলক করা, যা প্রবাসীদের সাথে তাদের মজুরির ব্যবধান কমিয়ে আনবে। এক্ষেত্রে একজন নিয়োগকর্তা শ্রমিকের সাথে একটি বৈধ (অপ্রকাশিত) চুক্তি করার অনুমতি পাবেন এবং যদি কোন শ্রমিক অন্যখানে চলেও যায় তাহলেও সেই চুক্তি গোপন থাকবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা কমিয়ে আনবে। বিশেষ করে যেসব নিয়োগকর্তা এখন এনওসি ইস্যু করে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই কোন শ্রমিককে কাজ থেকে বঞ্চিত করার অধিকার রাখতে পারবে না।
এটি ‘লুকানো বাণিজ্য’ মোকাবেলায় সালতানাতের প্রচেষ্টাকে যেমন সমর্থন করবে তেমনি এটি কিছু নিয়োগকর্তার নো-অবজেকশন সার্টিফিকেটের যথেচ্ছাচারী ব্যবহার কমিয়ে আনতেও ভূমিকা রাখবে।
মোটকথা এই সিদ্ধান্ত দক্ষ কর্মী সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি শ্রমিকদের অধিকার, মানবপাচার ইস্যু এবং শ্রমিকদের স্বাধীনতা নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে ওমানের অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করবে। এতদিন এনওসি নীতির প্রয়োগ থাকায় সালতানাতের ভাবমূর্তি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ব্যবসায়িক সহনশীলতা প্রতিবেদনও।
সরকারী বিবৃতিতে বলা হয়, এনওসি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, রাষ্ট্রের মৌলিক আইনে উল্লিখিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতি এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার নিয়ে ওমানের আন্তর্জাতিক চুক্তির উপর ভিত্তি করে। গেল এপ্রিলে আন্তর্জাতিক চুক্তিটি ওমান করেছে রাজকীয় ফরমান ৪৬/২০২০ এর অধীনে।
সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির ৬ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রগুলোকে কাজ করার এমন অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের স্বাধীনভাবে কাজ বেছে নেওয়া বা তা গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ পাওয়ার অধিকার এবং এই অধিকার রক্ষার জন্য যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করা।
আর্টিকেল ৭ অনুযায়ী, যে রাষ্ট্রকে স্বীকার করে নিতে হবে যে প্রত্যেকেরই কাজের ন্যায়সঙ্গত এবং সন্তোষজনক পরিবেশ পাওয়ার অধিকার আছে।